হিন্দু ব্যবসায়ীকে প্রাণনাশের হুমকি যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেনের হুমকিতে প্রাণের ভয়ে গত চারদিন ধরে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী হচ্ছে অষ্টমনিষা গ্রামের মন্টু সূত্রধরের ছেলে ধনুঞ্জয় সূত্রধর। এর আগে গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে সাইদুল ও ফরহাদ ধনুঞ্জয়কে অষ্টমনিষা বাজারে একটি ক্লাব ঘরে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। অভিযুক্ত সাইদুল ও ফরহাদ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ওই ব্যবসায়ী পাবনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।

একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের জানুয়ারি মাসে যুবলীগ নেতা সাইদুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাদের স্ত্রীকে তিন হাজার টাকা মাসিক বেতনে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। সে সময় ফরহাদ হোসেন ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে গত ছয় মাস আগে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে সাইদুল ইসলাম অভিভাবক সদস্য ও ফরহাদ আলি কো-অপ্ট সদস্য নির্বাচিত হয়। একই কমিটিতে ধনঞ্জয় সূত্রধরও অভিভাবক সদস্য হন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় এবং আর্থিক সংকটের কারণে ম্যানেজিং কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর সভা ডেকে রেজুলেশন করে খন্ডকালীন ওই দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়। এতে স্ত্রীদের অব্যাহতি দেওয়ায় সাইদুল ইসলাম ও ফরহাদ হোসেন কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক ও প্রধান শিক্ষক আনসার আলীর উপর ক্ষিপ্ত হন।

এরপর সাইদুল ও ফরহাদ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অপসারণের জন্য একটি অভিযোগপত্র তৈরি করে কমিটির অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার উদ্যোগ নেন। একপর্যায়ে তারা গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে ধনুঞ্জয়কে অষ্টমনিষা বাজারে কল্লোল সংঘের ক্লাব ঘরে ডেকে নিয়ে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তুু ধনুঞ্জয় ওই অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। তখন সাইদুল ও ফরহাদ সহ পাঁচ-ছয়জন যুবক ধনুঞ্জয়কে মারধর করতে শুরু করেন। এসময় ধনুঞ্জয় কোনরকমে দৌড়ে পালিয়ে বেঁচে যান। এরপর থেকে ফরহাদ ও সাইদুল ধনুঞ্জয়ের পরিবারকে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ দিয়ে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করতে বলছেন। এদিকে স্বাক্ষর না দেয়ায় ধনুঞ্জয়কে ওই দুই নেতা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন ধনুঞ্জয়। পরে নিরুপায় হয়ে গত সোমবার ধনুঞ্জয় পাবনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর ডাকযোগে অভিযোগপত্র প্রেরণ করেন।

অভিযোগকারী ধনুঞ্জয় সুত্রধর বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা দুইটি পক্ষ হয়েছে। এতে সাইদুল ও ফরহাদ আমাকে তাদের পক্ষে টানছে। কিন্তু আমি অত্যন্ত সাদামাটা একজন মানুষ। তাই সাইদুল ও ফরহাদ আমাকে নিজেদের পক্ষে টানতে না পেরে মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আমি এখন তাদের ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছিনা।’

এদিকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছামত জামাতপন্থী নিজের মামাকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করেন। তাই ওই সভাপতিকে অপসারণ করতে ধনুঞ্জয়কে ডেকে নিয়ে এসে স্বাক্ষর চাওয়া হয়। কিন্তু সে স্বাক্ষর না দেওয়ায় তার সাথে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। পরে সে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে। এ ঘটনায় অপর অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেনও একই কথা বলেন।

এ বিষয়ে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী বলেন, এক বছর আগে সাইদুল ইসলাম ও ফরহাদ হোসেনের স্ত্রীকে বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন চাকরি দেয়া হয়। প্রতিমাসে তাদেরকে তিন হাজার টাকা করে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং আর্থিক সংকটের কারণে ওই দুই নেতার স্ত্রীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুই নেতা কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। এরই প্রেক্ষাপটে তারা ধনুঞ্জয় নামে একজন অভিভাবক সদস্যকে মারপিট করে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি। পেলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।