ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি ‘পূর্বপশ্চিম’ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
দু’মাস আগে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সাক্ষাৎকারে প্রাথমিকভাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নাম ছিল না। মুজিব-কন্যার আগ্রহে কিছুক্ষণ পরে সেখানে পৌঁছান ইন্দিরার নাতনি। তাদের আলিঙ্গনাবদ্ধ ছবিটি প্রিয়াঙ্কার টুইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে।
কূটনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অধুনা শৈত্যের যে বাতাবরণ দেখা যাচ্ছে তার শুরু হয়েছিল সে দিনই। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা নেওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের প্রতি নৈকট্য সে দিন গোপন করেননি হাসিনা। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মোদি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখেও নেহরু-গান্ধী পরিবারের প্রতি প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখতে চান তিনি। সূত্রের মতে, বিষয়টিতে কিছুটা আড়ষ্টতা তৈরি হয় সাউথ ব্লকে। এরপরে যখন ক্রিকেট খেলা দেখতে কলকাতা পৌঁছান হাসিনা, বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে দিল্লি থেকে কোনও মন্ত্রী বা শীর্ষ কূটনীতিককে পাঠায়নি মোদি সরকার। এই বিষয়টি যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ করেছে ঢাকাকে।
বাংলাদেশের এক কূটনৈতিক কর্তার কথায়, “বাংলাদেশ সব ব্যাপারে পাশে থাকবে বলে ধরেই নিয়েছে নয়াদিল্লি। তাই কিছু ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। শুধুমাত্র কলকাতা সফর তো নয়, অক্টোবরে নয়াদিল্লি সফরেও প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল প্রথমবারের সাংসদ এক নতুন মন্ত্রীকে। নরেন্দ্র মোদী নিজে না পারেন, কোনও সিনিয়র মন্ত্রীকে কি পাঠানো সম্ভব ছিল না?”
এই মন কষাকষির মধ্যেই চলে আসে আসামে এনআরসি নিয়ে অশান্তি এবং এবং তারপর নাগরিকত্ব আইন পাশ করানোর প্রক্রিয়া। এর মধ্যে একবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের পার্শ্ববৈঠকে, অন্যবার অক্টোবরের নয়াদিল্লি সফরে এনআরসি নিয়ে মোদির কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন হাসিনা। কিন্তু এই বিল পাশ করানোর সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদের দুই কক্ষে বার বার পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে একই বন্ধনিতে রাখায় ঘৃতাহুতি হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে।
আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি কট্টর ইসলামি অংশ রয়েছে, যাদের মতামতকে গ্রাহ্য করে চলতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে সাড়া না-পাওয়া সত্ত্বেও, হাসিনা কেন উদার ভারতনীতি নিয়ে চলছেন, এই প্রশ্ন তুলেছে সেই কট্টর অংশ। নাগরিকত্ব আইনে বিষযটি আরও জটিল হয়েছে।
ঢাকা সূত্রের বক্তব্য, পর পর দুই মন্ত্রী ও প্রতিনিধি দলের ভারত সফর বাতিল করে সেই অভ্যন্তরীণ রোষকে ধামাচাপা দিতে পেরেছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল হওয়ার পর চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি ঢাকার পক্ষ থেকে বাতিল করে দেওয়া হয় দু’দেশের যৌথ নদী কমিটির বৈঠকও।
কিন্তু ঢাকা সূত্রের খবর, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেন, তাড়াহুড়ো করে নয়াদিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বলে দেওয়া হোক সংশ্লিষ্ট নদী সংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণ করা হয়নি। এর পিছনে যে নির্দিষ্ট কূটনৈতিক বার্তা দেওয়ার ছিল, দিল্লিকে তা পৌঁছে দেওয়া গেছে বলেই মনে করছে ঢাকা। সূত্র: আনন্দবাজার