পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রত্যন্ত দিলপাশার ইউনিয়নের কর্মসৃজন কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৩ শে নভেম্বর কর্মসূচির কাজ শুরু হলেও আজ পর্যন্ত এই ইউনিয়নের প্রকল্প দেখভালের জন্য ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়নি। এ সুযোগে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কর্মসূচির কাজ না করেও কাগজ-কলমে নিয়মিত শ্রমিক হাজিরা দেখাচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ইউনিয়নের বিভিন্ন কাঁচা সড়কে নামমাত্র মেরামত কাজ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বাররা। ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার ঘোষ আওয়ামী লীগ ও চরমপন্থী দলের নেতা হওয়ায় ভয়ে এলাকার কেউই তার অনিয়মের প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।
জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত দিলপাশার ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম প্রতিবছরই বন্যা কবলিত হয়। এতে গ্রামগুলোর কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই এসব ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা মেরামতের জন্য এবছর কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় (প্রথম পর্যায়) এই ইউনিয়নের ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। গত ২৩শে নভেম্বর এ প্রকল্পগুলোর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে, কাজ শুরুর পর থেকে একাধিক ওয়ার্ডে মাঝেমধ্যেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে রাখছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বাররা। এছাড়া চলমান অন্য প্রকল্পেও বরাদ্দের চেয়ে কম শ্রমিক নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিলপাশার রেল স্টেশনের পশ্চিম পাড় হতে নুরুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা মেরামতের জন্য প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হলেও সেখানে কোনো শ্রমিকের দেখা মেলেনি। অথচ এই প্রকল্পটিতে ২৮ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা ছিল। তবে প্রকল্প শুরুর পরে তিন দিন রাস্তার কিছু কিছু স্থানে সামান্য পরিমাণ মাটি ফেলা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে। প্রকল্পের অর্ন্তভ‚ক্ত একজন শ্রমিক জানান, কয়েকদিন দশজন করে কাজ করার পর বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছে মেম্বার।
ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের আদাবাড়িয়া দেলবরের জমি হতে সলিম পাড়া কবরস্থান পর্যন্ত একটি রাস্তা সংস্কারের জন্য কাগজে-কলমে ২৫জন শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছে। কিন্তু এদিন এই প্রকল্পটিতে কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। তবে এখানেও প্রকল্প শুরুর দিকে রাস্তার কিছু কিছু স্থানে মাটি ফেলা হয়েছে।
আরেকটি প্রকল্পে তারাপুর আফসার আলীর বাড়ী হতে আদাবাড়িয়া রশিদের বাড়ি অভিমুখে রাস্তার মেরামত কাজ শুরু করা হয় যথাসময়ে। তবে গত কয়েক দিনে দশ-বারো জন শ্রমিক মাঝেমধ্যে রাস্তায় মাটি ফেলার কাজ করেছেন বলে জানান স্থানীয়রা। অথচ এই প্রকল্পে মেরামত কাজের জন্য প্রতিদিন ২৫ জন শ্রমিকের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। তবে এদিন এই প্রকল্পেও কোনো শ্রমিককে পাওয়া যায়নি।এদিকে সোমবার ইউনিয়নের তিনটি প্রকল্পে কোনো শ্রমিকের দেখা পাওয়া না গেলেও দিলপাশার রেলস্টেশন থেকে বেতুয়ান খেয়াঘাট রাস্তা মেরামতের জন্য ২০ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। তবে এখানে অনুমোদিত শ্রমিকের সংখ্যা ২৮ জন। শ্রমিক সরদার একান্ত কুমার জানান, শুরু থেকেই তাঁরা এই কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন।
অনিয়মের বিষয়ে দিলপাশার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার ঘোষ বলেন, বর্তমানে এই এলাকায় একজন দৈনিক শ্রমিকের দাম ৫’শ টাকা। কর্মসূচির আওতায় ১৭৫ টাকা দিনমজুরি দিয়ে উপজেলার কোথাও শ্রমিক পাওয়া যায় না। তাই বেশি টাকা ব্যয় হওয়ায় পর্যাপ্ত শ্রমিক কাজে লাগানো যায় না। এছাড়া ১৭৫ টাকা দিনে কর্মরত শ্রমিকরা ১২টা বাজার আগেই চলে যায়। তাই পরিদর্শনে এসে তাদের পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীম এহসান বলেন, শ্রমিকের দিনমজুরি বেশি হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে শ্রমিকের সংখ্যায় কিছুটা কম-বেশি থাকতে পারে। তবে বরাদ্দের অর্থ অনুযায়ী পর্যাপ্ত কাজ ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া হবে।