তাড়াইল উপজেলা আওয়ামীলীগ দুই শিবিরে বিভক্ত

স্বার্থ আর ক্ষমতার দ্বন্ধে তাড়াইল উপজেলা আওয়ামীলীগ পারিবারিক ও সার্বজনীন গ্রুপ নামে দুই শিবিরে বিবক্ত হয়ে পড়েছে। তৃনমূল থেকে উপজেলা নেতৃত্বের কোন্দল এখন প্রকট হয়ে উঠেছে। এই কোন্দলে ঘি ঢেলেছে বিগত উপজেলা নির্বাচন ও বর্তমান সংসদ সদস্যের দান-অনুদানের স্বার্থ। বিগত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরোধের জের ধরে দলের উপজেলা সভাপতি আজিজুল হক মোতাহার ও সাধারন সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন লাকী সমর্থকদের সংঘাতে দলীয় নেতাকর্মীদের আশ্রয়স্থল এখন পৃথক পৃথক দুই কার্যালয়ে।
দলের এই বিভাজনে চরম ক্ষুব্ধ দলটির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত তাড়াইল উপজেলা আওয়ামীলীগ। দলের তৃনমূলের নেতা-কর্মিরা মনে করে, জেলা আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নিলেই দলে কোন্দলের অবসান ঘটবে। বিশেষ করে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা আব্দুল ওয়াহাব ভূঞাঁ ও তার অনুসারীদের নিয়ে উদ্যোগ নিলেই পাল্টে যাবে তাড়াইল উপজেলা আওয়ামীলীগের চিত্র। উপজেলায় তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দক্ষ নেতা। ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই তাঁর প্রতি আস্থাশীল। কোন্দল নিরসনে তিনি কার্যকর ভ‚মিকা না নেওয়ায় তাঁর প্রতিও চরম ক্ষোভ রয়েছে তৃণম‚ল নেতাকর্মীদের।
জানতে চাইলে দলের দুঃসময়ের পরীক্ষিত দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা আব্দুল ওয়াহাব ভূঞাঁ বলেন,বিগত ২০১৪ সালে অনুষ্টিত দলীয় কাউন্সিলের পর থেকেই দলে নেতৃত্ব নিয়ে মতপার্থক্য শুরু হয়। ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটিতে আব্দুল ওয়াহাব ভূঞাঁ অনুসারী,পরিক্ষিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মিদের বাদ দিয়ে সভাপতির নিকট আত্মীয়,তোষামোদকারী মেরুদÐহীন লোকদের নিয়ে উপজেলা কমিটির নামে পারিবারিক বলয় সৃষ্টি করা হয়। কমিটিতে সভাপতির জৈষ্ট্য পুত্র আফরোজ আলম ঝিনুককে সাংগঠনিক সম্পাদক,নিজের ছোট মেয়ের জামাতা আনোয়ার হোসেন খাঁনকে দপ্তর সম্পাদক করায় দলে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরবর্তিতে বিগত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের নেতৃত্বে দ্বিধাদন্ধ প্রকট আকার ধারন করে। আর তখন থেকেই দলের উপজেলা কমিটির নেতৃত্বে দৃশ্যমান বিভক্তি ঘটে। বর্তমানে দলের সব কার্যক্রম চলছে দুই পক্ষের নেতৃত্বে। নেতৃত্বের এই বিভাজন দৃশ্যমান হয়েছে দলের সাধারন সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন লাকী গত নভেম্বর মাসে নিজস্ব পৈত্রিক একটি ভবনে পৃথকভাবে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করার পর থেকে। তৃনমূলের নেতা-কর্মিদের আভিযোগ,বর্তমানে দলের ভেতরে উপজেলার চিহ্নিত কতিপয় স্বার্থান্বেষী মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এদের কর্মকাÐ দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এক সময়ে উপজেলার প্রভাবশালী ন্যাপ নেতা ও তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নে পর পর দুইবার নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ ভূঞাঁ, জাতীয় পার্টির সাবেক উপজেলা সভাপতি আব্দুল হক চেয়ারম্যান, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক দেলুয়ার হোসেন ফুল মিয়া,জাতীয় পার্টির সাবেক আইনমন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম ভূঞাঁর এপিএস লুটন চৌধুরী,যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সভাপতি আজিজুল হক মোতাহারের ছোট ভাই মো.নজরুল ইসলামসহ অনেকেই দলে অনুপ্রবেশকারী। উপজেলা সভাপতি আজিজুল হক মোতাহার গ্রæপে অনুপ্রবেশকারী এই নেতারা দলে হাইব্রিড নেতা হিসেবে পরিচিত। ঐসব নেতা-কর্মিদের নিয়ে তাড়াইল বাজারে সদর রোডে উপজেলা সভাপতি আজিজুল হক মোতাহার গ্রæপ পৃথক দলীয় অফিস পরিচয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যে ঘরে দলীয় কার্যক্রম চালানো হয় সেই ঘরটির মালিক দিকদাইর ইউপি চেয়ারম্যান মো.গোলাপ হোসেন ভূঞাঁ। তার অভিযোগ সভাপতি আজিজুল হক মোতাহার তার ঘরটি জবরদখল করে অন্যায় ভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দলের তৃনমূলের নেতাকর্মিদের দাবি,উপজেলা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব এলে এ অবস্থার অবসান ঘটবে।