কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত ইসলামের এই স্তম্ভগুলো মহানবী (সা.) এর হাত ধরেই আমরা পেয়েছি। রাসূল (সা.) নিজে যেমন এগুলো পালন করতেন, তেমনি সবাইকে পালন করার আদেশ দিয়েছেন। এর বাইরেও মহানবী (সা.) অনেক কাজ করেছেন। তাও মান্য করা বা অনুসরণ করা মুসলিম জনগোষ্ঠীর অবশ্যই কর্তব্য।
অনেক কাজের মধ্যে মহানবী (সা.) কখনই তিনটি কাজকে পরিহার করতেন না। তাহলো কোন কাজের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়া, সবাইকে আগে সালাম দেওয়া এবং যে কোন কাজ শুরু করতেন ডান দিক ও ডান হাত দিয়ে।
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত। এ আয়াতকে কোরআনের মুকুট বলা হয়। এর অর্থ হচ্ছে- পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অতি দয়ালু ও করুণাময়। বিসমিল্লাহর ফজিলত অপরিসীম। হজরত রাসূলে কারিম (সা.) এ আয়াতকে কোরআনের শ্রেষ্ঠতম বলে উল্লেখ করেছেন।
তাই রাসূল (সা.) সব সময় বিসমিল্লাহ বলতেন এবং অন্যকে বলতে উৎসাহিতও করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, কোনো ভালো কাজের আগে বিসমিল্লাহ-তাসমিয়া পাঠ না করে নিলে কাজে রহমত-বরকত আশা করা যায় না। সুফল পাওয়া যায় না। হরহামেশা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম জিকির ও আমলে অধিক সওয়াব ছাড়াও অসংখ্য শুভ এবং সৎকাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়।
সালাম দেওয়াকে মহানবী অনেক গুরুত্ব দিতেন। কথিত আছে যে, রাসূল (সা.) এর আগে কেউ সালাম পেশ করতে পারতেন না। সবার আগে তিনিই সবাইকে সালাম দিতেন। ছোট-বড়, ধনী-গরীব, পুরুষ-মহিলা সবাইকেই আগে আগে সালাম দিতেন মহানবী (সা.)। মসজিদকে তো সালাম দিতেনই এমনকি ঘরে প্রবেশ করার আগেও সালাম দিয়ে প্রবেশ করতেন। তাতে ঘরে লোক থাকুক বা নাই থাকুক।
আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কি?’ তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।”
হযরত আব্দুল্লাহ (রাযীঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম করে সে অহংকার হতে মুক্ত। (বায়হাকী)
ইমরান ইবন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী (সা) এর কাছে এসে বলেঃ আসসালামু আলাইকুম। নবী (সা.) তার সালামের জবাব দিলে সে ব্যক্তি বসে পড়ে। তখন নবী (সা.) বললেন, সে দশটি নেকী পেয়েছে। এরপর একব্যক্তি এসে বলেঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। রাসূল (সা.) তার সালামের জবাব দিলে সে ব্যক্তি বসে পড়ে। তখন নবী (সা.) বললেন, সে বিশটি নেকী পেয়েছে। এরপর একব্যক্তি এসে বলেঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবী (সা.) তার সালামের জবাব দিলে সে বসে পড়ে। তখন রাসূল (সা.) বললেন, সে ত্রিশটি নেকী পেয়েছে। (আবু দাউদ ৫১০৫)
মহানবী (সা.) সব সময় ডান হাত-পা ও ডান দিককে গুরুত্ব দিয়েছেন। মোসাবা করার সময় ডান হাত বাড়িয়েছেন, কোন কিছু ধরতে দিয়ে ডান হাত দিয়ে আগে ধরেছেন, খেতে বসে প্লেটের ডান দিক দিয়ে শুরু করেছেন এবং পথ চলতেও ডান দিককে প্রাধান্য দিতেন। মসজিদে এবং ঘরেও প্রবেশ করতেন ডান পা আগে দিয়ে। শুধু তাই-ই নয়, ঘুমাতেনও ডান পাশে ফিরে।
তাই প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমের উচিত মহানবী (সা.)কে অনুসরণ করা। ফরজ কাজগুলো তো করবই, এর সঙ্গে সঙ্গে মহানবী (সা.) যে কাজগুলোকে যেভাবে প্রাধান্য দিতেন, আমাদেরও উচিত সেই কাজগুলো সেভাবেই প্রাধান্য দিয়ে করা।