যশোরের শার্শায় বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্ট নামে এক এনজিও সংস্থা গ্রাহকের ৩০ লাখ টাকা নিয়ে রাতের আঁধারে উধাও হয়ে গেছে। ফলে এর সাথে জড়িত নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের কর্মী এবং গ্রামের খেটে খাওয়া অসহায় গরীব সাধারণ মানুষেরা পড়েছে মহা বিপাকে।
অনেক কষ্টসার্ধ করে গচ্ছিত টাকা নিবন্ধনহীন এই এনজিওর ধোকায় সর্বসান্ত হয়ে পড়েছে তারা। গ্রামের মানুষ গরু, ছাগল, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সহজ কিন্তির্তে ঋণ দেওয়ার নাম করে নিয়োগ বাণিজ্য এবং গ্রামাঞ্চলে সঞ্চয় সংগ্রহ করে এই টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায় এনজিওটি।
জেসমিন, লাভলু, তরিকুল, লতিফাসহ একাধিক মাঠকর্মী এনজিওটির এমন জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা জানিয়ে বলেন, বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্ট নামের ওই এনজিও তাদের ৩৫ জনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছে।
দুই মাসের বেতন বাবদ ৪ লাখ টাকা, সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় বাবদ ৯ লাখ এবং সদস্যদের কাছ থেকে পণ্যের জন্য অগ্রিম ২ লাখ টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দোকান থেকে বাকি পণ্য ক্রয় বাবদ ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এনজিও পরিচালনাকারী সদস্যরা।
শার্শার কামারবাড়ী মোড়ে অবস্থিত এনজিওর এই শাখায় দায়িত্ব পালনকারী ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, এ্যাডমিন শামিম ও হাবিবসহ গ্রতিটি সদস্যই তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে রেখেছেন। শত চেষ্টা করেও কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায়ত্বের মধ্যে দিন যাপন করছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত তিন মাস আগে শার্শার কামারবাড়ি মোড়ে অফিস নেয় যশোরের চৌগাছা থেকে আসা আব্দুর রাজ্জাক, হাবিবসহ ৫ জনের একটি চৌকস দল। বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্ট নামে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে পরিশ্রম করে ৩৫ জন চাকুরি প্রার্থীকে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন এমাউন্টের ভিত্তিতে চাকুরি দেয় তারা। কয়েকদিন প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামঞ্চলের অসহায় গরীব পরিবার চিহ্নিত করে সহজ শর্তে ঋণ এবং পণ্য ক্রয়ে সদস্য করে তোলার দায়িত্ব দেন তারা।
সংসারে অভাব অনটন এবং দারিদ্রতা ঘোচাতে মাঠ পর্যায়ে মন প্রাণ দিয়ে দাপিয়ে বেড়ান ৩৫ জন মাঠকর্মী। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলপ্রসূ হয় দুই মাসেই। বিগত মাসের অর্ধেক পার করতে না করতেই বন্যা এনজিওর ঘরে চলে আসে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা। কয়েক দিন যেতে না যেতেই এই অফিসের ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, এ্যাডমিন শামিম, হাবিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ৩৫ জন গ্রাহকের মাসিক বেতন নিয়ে টালবাহানা এবং ঠিকঠাক যোগাযোগ না করে পিছু হাটতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে উপর মহলের কোন কর্মকর্তাই আর অফিসে না এসে তাদের ব্যবহাহৃত মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে নিরুদ্দেস হয়ে যায়।
চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে থাকেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ৩৫ জন কর্মচারীবৃন্দ। তাদের জামানত স্বরুপ টাকা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে কুড়িয়ে আনা সঞ্চয়ের টাকার শোকে চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন তারা। এক দিকে নিজেদের টাকার শোক অন্যদিকে গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা তাদের কাছ থেকে নেওয়া রক্ত মাখা টাকা ফেরত চাইছে তাদের কাছ থেকে। সব মিলিয়ে এক নিদারুন চাপা কষ্ট নিয়ে চরম হতাশায় তারা।
শার্শা শাখায় কর্মরত মোখলেছুর, লাভলু, তরিকুল এবং লতিফা খাতুন বলেন, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বন্যা আসলামী ডেভলপমেন্টের নামে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিতে চাইলে তিনি বলেন চৌগাছা থানায় অভিযোগ চলে এসেছে এখানেও আসবে ধৈর্য ধরুন আশাকরি খুব শিঘ্রয় পোতারক চক্রটি ধরা পড়বে।
উল্লেখ্য, যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, কেশবপুর, ঝাঁপা এবং শার্শায় একযোগে অফিস খোলে বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্টের একটি জালিয়াতী প্রতারক চক্র। যা গত কয়েকদিনে ফেসবুক, বিভিন্ন অনলাইন এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি উর্দ্ধেতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা। #