নওগাঁর তিন উপজেলায় সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগ সুস্থ্য জীবনধারায় ফিরে আনা সম্ভব হয়েছে

নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র অধ্যুষিত তিন উপজেলায় সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ প্রকল্প সে এলাকার পানি সংকট নিরসন করে তাদের সুস্থ্য জীবনধারায ফিরে আনা সম্বভ হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী এবং সেই এলাকার সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

নওগাঁ জেলার পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলা ঠা ঠা বরেন্দ্র অধ্যুষিত এলাকা। এই বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির অভ্যন্তরীন স্তর এতটাই নিচু যে এসব এলাকায় যুগ যুগ ধরে কোন নলকুপ স্থাপন সম্ভব হয় নি। কাজেই এসব এলাকার মানুষ মাটি কুয়া এবং পুকুরের পানি পান করা, গোসল করা, থালা বাসন মাজা, রান্না করাসহ সংসরের সব কাজ সম্পাদন করে থাকতেন। মাটি কুয়ার পানি এবং পুকুরের পানি সব সময় অপরিস্কার এবং নোংরা থাকতো। কাজেই বাধ্য হয়ে গভীর কুয়া থেকে পানি উত্তোলন এবং দুর থেকে পুকুরের পানি এনে সংসারের যাবতীয় কাজ করতে তাদের খুবই কষ্ট হতো। তাই প্রথম পর্যায়ে তিন উপজেলায় ৩শটি পাম্প বসানো হয়েছে। এসব পাম্প থেকে ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের মধ্যে সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।

এই কার্যক্রমে একটি পাড়ায় একটি সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে উঁচুতে একটি পিলারের উপর ৩০০০ লিটারের ট্যাংকি স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুতের সাহায্যে সাবমারসিবল চালিয়ে ট্যাংকিতে একটি পাইপের দ্বারা পানি উত্তোলন করা হয়। অন্য পাইপের সাথে সংযোগ করে পাড়ায় পাড়ায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়েছে। একটি ট্যাংকি থেকে সংশ্লিষ্ট পাড়ায় পৃথক ৮টি প্লাটফরম তৈরী করা হয়েছে। এসব প্লাটফরমে ট্যাপ সংযোগ করে পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই প্লাটফরমে এলাকাবাসী যার যার প্রয়োজন মত পানি সংগ্রহ করতে পারেন।

রাজশাহ-নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাধীন নি¤œ পানির স্তর অধ্যুষিত এলাকায় কমিউনিটি ভিত্তিক পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এই তিনশ পাম্প স্থাপন করতে মোট খরচ হয়েছে ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই তিন উপজেলা ছাড়াও পতœীতলা ও ধামইরহাট উপজেলায় একই ধরনের পাম্প স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর নওগাঁ’র নির্বাহী প্রকৌশলী।

সাপাহার উপজেলার ওড়নপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক, আব্দুর রশিদ, এন্তাজুর রহমান, শিউলি বেগম এবং মর্জিনা খাতুন জানিয়েছেন তাঁরা বংশ পরম্পরায় এসব মাটি কুয়া এবং পুকুরের পানি পানসহ রান্নার কাজে ব্যবহার করে আসছেন। অনেক গভীর কুপ থেকে পানি উত্তোলন এবং অনেক দুর থেকে পুকুরের পানি বয়ে অঅনতে যেমন কষ্ট হয় অন্যাদিকে এসব নোংরা পানি পান করার ফলে সাধারন মানুষের বিশেষ করে শিশুদের নানারকম রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হতো। বর্তমানে সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায় পানি সরবরাহের ফলে একদিকে যেমন পানির সংকট নিরসন হয়েছে অন্যদিকে তাঁরা অসুখ বিসুখের হাত থেকে নিস্কৃতি পেয়েছেন। এর ফলে বরেন্দ্র অধ্যুষিত এলাকার মানুষের জীবনে সুস্থ্য ধারা ফিরে এসেছে।

এই পানি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য জনপ্রতি মাত্র ১০ টাকা করে মাসিক বিল নেয়া হয়ে থাকে। আদায়কৃত অর্থ থেকে সংশ্লিষ্ট মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে রক্ষানাবেক্ষন করা হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

রাজশাহী-নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাধীন নি¤œ পানির স্তর অধ্যুষিত এলাকায় কমিউনিটি ভিত্তিক পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এই তিনশ পাম্প স্থাপন করতে মোট খরচ হয়েছে ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই তিন উপজেলা ছাড়াও পতœীতলা ও ধামইরহাট উপজেলায় একই ধরনের পাম্প স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর নওগাঁ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল কালাম আজাদ।