নাটোরের গুরুদাসপুরে কৃষিজমিতে ইটভাটা গড়ে ওঠায় কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ ও ফসলের উৎপাদন। উপজেলার ১৩টি ইটভাটাই ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭টিই পৌরসভার মধ্যে। কোনো নিয়ম না মেনে এভাবেই প্রায় দুই যুগ ধরে কৃষিজমি গ্রাস করে খাচ্ছে ইটভাটা।
পরিবেশ অধিদপ্তর আইন অনুযায়ী পৌরসভার মধ্যে কোনো ইটভাটা থাকা যাবে না। অথচ কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই শতাধিক একর জমিতে সরবে চলছে ইটভাটার কার্যক্রম। ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬টি ইটভাটা থাকলেও তা পৌরসভার আবাসিক এলাকা থেকে বেশি দূরে নয়। ইটভাটাগুলোর কারণে আশপাশের কৃষিজমিতে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। আম, লিচু, ডাবসহ সব ফলদ বৃক্ষের ফলনও কমে গেছে এর প্রভাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিটি ইটভাটা গড়ে ৩০ বিঘা করে মোট ৩ শতাধিক বিঘা কৃষিজমি দখল করেছে। এসব জমিতে রোপা, আমন, আউশ ও রবি ফসলের আবাদ হতো। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ইটভাটা স্থাপনের সময় কৃষি অধিদপ্তরের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। প্রথমদিকে স্বল্প পরিমাণ জমিতে ইটভাটা চালু করলেও পরবর্তীতে তিন-চারগুন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় কৃষিজমিতে যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন করা যেন দোষের কিছু নয় বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। অথচ ইটভাটার কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর, পাওয়ার ট্রিলারের অবাধ যাতায়াতের কারণে পাকা সড়কগুলোর অবস্থাও বেহাল। বিশেষ করে উপজেলার চাঁচকৈড় থেকে নয়াবাজার ও চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া থেকে হাজিরহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক ইটভাটার গাড়িগুলোর কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত শব্দ দূষণের আতঙ্কেও থাকেন এলাকাবাসী।
ফুলকপি চাষের গ্রাম হিসেবে খ্যাত পৌর সদরের তাড়াশিপাড়া ও উপজেলার চিতলাপাড়া গ্রামে এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আমন ধানের পাশাপাশি গ্রামের জমিগুলোতে ফুলকপি, পাতাকপি ও সরিষার আবাদ হতো বছরজুড়ে। আর এসব কৃষি জমির উর্বর মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। পৌরসভার আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমি থেকে ইটভাটা অপসারণের দাবী করেছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বলেন, ইটভাটাগুলোকে নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। নিয়ম না মানায় ইতিমধ্যে দুটি ইটভাটাকে জরিমানাও করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#