সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সবচেয়ে খর্বকায় (খাটো) ৯ম শ্রেনী পড়–য়া শিক্ষার্থী ফাতেমা হোসেন। ১৭ বছর বয়সেও তাঁর উচ্চতা মাত্র ৩৮ইঞ্চি ও ওজন ১১কেজি ৮০০ গ্রাম। ফাতেমা উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের আলাপুর গ্রামের মৃত হোসেন আলী ও সাহেনা বেগম দম্পতির জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং স্থানীয় জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। পড়ালেখা করে ভবিষ্যতে বড় চাকুরীজিবী হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে মেধাবী ছাত্রী ফাতেমার। উপজেলার ফাতেমা হোসেনের বয়সি ৩৮ইঞ্চি উচ্চতা ও ১১ কেজি ৮০০ গ্রাম ওজনের আর কোন শিক্ষার্থী সন্ধান না পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে উপজেলায় সবচেয়ে খর্বকায় (খাটো) শিক্ষার্থীই ফাতেমা হোসেন।ফাতেমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ফাতেমা হোসেন। জন্মের পর থেকে চার বছর বয়স পর্যন্ত তার শরীরের গড়ন স্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছিল। চার বছর পর হঠাৎ করে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমতে থাকে। তখন তাকে নিয়ে সিলেট শহরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তার পরিবার। চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শের ভিত্তিতে ফাতেমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘদিন চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান ফাতেমার শরীরে বর্ন হরমোন না থাকায় তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। তাই তার ৮বছর বয়সের মধ্যে ভারত থেকে বর্ন হরমোন এনে প্রতি মাসে একবার করে টানা ৪বছর শরীরে প্রয়োগ করতে হবে। তাতে ফাতেমার শরীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বর্ন হরমোন প্রয়োগের ফলে স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান চিকিৎসক। এনিয়ে এবং চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় দ্বিধাদ্বন্ধে পড়েন পরিবারের লোকজন। তখন আর ফাতেমার শরীরে হরমোন প্রয়োগ করা হয়ে ওঠেনি তাদের। তার বেড়ে ওঠার আর কোনো আশা নেই। তবে তা নিয়ে কোনো রাগ-দুঃখ-অভিমান নেই ১৭বছর বয়সী এই তরুণীর।ফাতেমা হোসেন জানান, স্থানীয় জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে তিনি অধ্যয়নরত রয়েছেন। ২০১৭ সালে তার পিতা হোসেন আলী আরব আমিরাতে হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে মা সাহেনা বেগম, ছোট ভাই হাফেজ জাহির হোসেন (১৩) ও ছোট বোন ফাবিহা হোসেন মাইসা (২)’কে নিয়ে নিজ গ্রামেই অবস্থিত মামার বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। তাকে সকলেই আদর করেন। তিনি জীবনটাকে হাসিখুশিভাবে কাটাতেই ভালোবাসেন। সে পড়ালেখা করে ভবিষ্যতে বড় চাকুরীজিবী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।এব্যাপারে জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফখরুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা হোসেন বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী। সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক তাকে লেখা-পড়ার জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।