প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘সবার জন্য বাসস্থান’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জমি আছে, ঘর নাই’ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের কাজে নওগাঁর নিয়ামতপুরে ব্যাপক অনিয়ম অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজে নয় ছয় করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আতœসাত করার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প ব্যাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার আট টি ইউনিয়নের মধ্যে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন পরিবারের জন্য ১৪৪টি আধা পাকা ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ টাকা। তবে ঘর বরাদ্দ থেকে শুরু করে ঘর তৈরীতে চলছে নানান অনিয়ম। নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে পিলার তৈরী করা হয়েছে। এতে ঘর নির্মাণ শেষ না হতেই পিলার ভেঙে গেছে, অনেক ঘরের মেঝেতে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। দরজা, জানালার কাঠে ফাটল দেখা দিয়েছে। জানলার পাল্লা করা হয়েছে দোকানের ঝাপ প্রকৃতির । আর জানালায় যে রড দেওয়া হয়েছে তা জিআই তারের চেয়ে সমান্য পরিমান মোটা। যে কোন ছোটবাচ্চা সামান্য টান দিলেই খুলে আসবে রড। ঘরের টিনের ছাউনিতে রুয়ার যে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে একাধীক জোড়া । ঘরের মালামাল বহন খরচ , মিস্ত্রি খরচ সহ সকল খরচ বরাদ্দ হতে করা কথা থাকলেও মালামাল বহনকারী ও মিস্ত্রি সাত হতে আট শত টাকা নিয়েছেন।
এ প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হলেও পূরো কাজের খরচ ও দেখভাল করেছেন প্রকল্পের সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প ব্যাস্তবায়ন কর্মকতা তরিকুল ইসলাম। যে মানের কাজ করা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ৬৫ হতে ৭০ হাজার এর বেশী টাকা খরচ হয়নি বলে অনেকে মন্তব্য করেছে। ৭০ হাজার টাকা খরচের হিসেবে ১৪৪ টি ঘর নির্মান শেষে প্রায় ৫০ লক্ষ( অর্ধকোটি) টাকা অবশিষ্ট থাকবে। অথচ এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগাড়ে জমা না দিয়ে কাজে নয় ছয় এর মাধ্যমে আতœসাত করেছেন প্রকল্পের সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প ব্যস্তবায়ন কর্মকতা তরিকুল ইসলাম বলে অনেকে অভিযোগ করেন।
উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের ছাতড়া দক্ষীনপাড়া গ্রামের রোকেয়া বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর অর্থের অভাবে ঘর করতে পারিনি।একটি ঘরে ছেলে- মেয়ে ও আমি তিনজন মিলে থাকতাম। সরকারী ঘর পেয়ে খুবই উপকার হয়েছে। তবে যেভাবে ঘর করে দেওয়া হয়েছে তাতে বৃষ্টি হলে ঘরে পানি ঢুকছে । ঘরের মালামাল নিয়ে আসা গাড়ির ড্রাইভার ও মিস্ত্রিরা মিলে সাতশত টাকা নিয়েছে। টিনের বেড়ার নিচ দিয়ে ঢোকা পানি বন্ধ করতে দুই বস্তা সিমেন্ট কিনতে হয়েছে এবং মিস্ত্রিরা পরে এসে পায়খানা তৈরী করে দিতে চাইলেও আসেনি। আমার ছেলে দিন মজুর মানুষ নিয়ে নিজের টাকায় করে পায়খানা তৈরী করে নিয়েছে।
উপজেলার শেফালী রানী ও ওহির উদ্দিন জানান, শুনেছি ঘর করার জন্য এক লাখ করে টাকা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী অথচ যে মানের ঘর নির্মান করা হয়েছে এতে সর্বোচ্চ হলে ৬০ হতে ৭০ হাজার টাকারবেশি খরচ হবে না। বাঁকী টাকাগুলো কার পকেটে গেলো।
শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামের সোহেল রানা জানান, এই গ্রামের শাহাজাহানকে যে ঘর করে দেয়া হয়েছে তার সরঞ্জামগুলো খুবই নি¤œ মানের। জানালায় যে রড ব্যবহার করা হয়েছে গরমের সময় রাতে জানালা খোলা রাখলে বাহির থেকে চোর জানালার রড ধরে টান দিলেই খুলে আসবে। আর ঘরের ছাউনির কাঠে এক হাতের মধ্যে প্রায় দুই শতাধীক লোহা দিয়ে কয়েকটি কাঠের টুকরো জোড়া দেওয়া হয়েছে। এটা সামান্য ঝড় হলেই ভেঙ্গে গিয়ে চালের টিন উড়ে যাবে।
নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকল্প ব্যস্তবায়ন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, সরকারী নিয়ম মোতাবেক সকল বাড়ি নির্মান করা হয়েছে। নি¤œ মানের বাড়ি তৈরীর করার বিষয়টি সঠিক নয়। কোন প্রকার অর্থ আতœসাত করা হয়নি।
নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়া মারিয়া পেরোরা জানান, বিষয়টি নিয়ে খোজ-খবর নিয়েছি। পিলার ভেঙ্গে- ফেঁটে যাওয়ার বিষয়টি ব্যাবহারকারীর উপর নির্ভর করছে। আর্থিক অভিযোগটি সঠিক নয়। যে পরিমান অর্থ বরাদ্দ ছিল সে পরিমান অথর্ই ব্যায় করে কাজ করা হয়েছে। তবে সে সময় দ্বায়িত্বে আমি ছিলাম না ।