বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদাসিনতায় সিলেটের
প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে
শুকিয়ে ও মাটিতে পঁচে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকা মূল্যের গাছগুলো। আর বন বিভাগের
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওই দায়িত্বহীনতার কারণে কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় করা
থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার। এমনকি সঠিক মূল নির্ধারণের অভাবে গাছ কর্তন করে
জায়গা খালি করে না দিতে পারায় আটকে আছে সরকারের অনেক উন্নয়নমূলক
কর্মকান্ডও। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পার্শ্বে থাকা
দীর্ঘদিনের পুরনো গাছ ঝড়ে কিংবা গুড়ির মাটি সরে যাওয়ার ফলে উপড়ে আছে। কোন
কোন গাছ আবার অতিরিক্ত ডালপালার ভারে হেলে বা উপড়ে পড়ছে। উপড়ে পড়া গাছগুলো
সঠিক সময়ে বিধি মোতাবেক নিলাম করা হলে সরকারের রাজস্ব আদায় হতো ব্যাপকহারে।
কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরম অবহেলায় না সম্ভব হচ্ছে না।সড়কের
পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে থাকা গাছগুলো উপড়ে পড়ছে। আর
উপড়ে পড়ার পর সেই গাছগুলোর অর্ধেক মাটিতে আর অর্ধেক নদীর পানিতে থাকার ফলে
বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে মানুষের ও নৌ চলা চল। তথাপিও গ্রহন করা হচ্ছেনা
কার্যক্রর কোন প্রদক্ষেপ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে উপড়ে পড়া গাছগুলোর
ডালপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী শুধুমাত্র বন বিভাগের
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অযত্ন আর অবহেলার কারণেই।
অনেক
স্থানে আবার সড়কের পার্শ্বে থাকা গাছ কৃষি জমিতে উপড়ে পড়ার কারণে সেই জমির
মালিক (কৃষক) বা বর্গাচাষী ওই কৃষি জমির বিরাট অংশে চাষাবাদ করতে পারছেন
না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তাদেরকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে ফসল উৎপাদন থেকে। কোথাও
কোথাও আবার সড়কের পার্শ্বে থাকা পুরাণো গাছের ডাল হঠাৎ করেই ভেঙ্গে পড়ছে
নিচে। এতে যেকোন সময় ঘটনা পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। আবার কোন কোন সড়কে গাছ
উপড়ে পড়ার কারণে সৃষ্টি হওয়া গর্তগুলো দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না হওয়াতে
চলাচলে মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ।
সরেজমিনে
উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, পরিষদের কয়েকটি স্থানে দীর্ঘদিন
ধরে উপড়ে পড়া গাছগুলো পড়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে শুকিয়ে গাছগুলো নষ্ট
হলেও সেগুলো নিলাম হচ্ছে না শুধু মাত্র বন বিভাগ কর্তৃক সঠিক মূল্য
নিধারণের কারণে। তাছাড়া পরিষদের বাম দিকে থাকা গাছ কর্তন করে সেস্থানে
প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রহন করা উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের সঙ্গে মিলনায়তন
নির্মিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না শুধু মাত্র বন বিভাগ কর্তৃক সঠিক
মূল্য নিধারণের কারণে।
অন্যদিকে, উপজেলা
আইন-শৃংখলা কিংবা সম্বন্বয় সভায় একাধিকবার উপড়ে পড়া গাছগুলো বিধি মোতাবেক
নিলাম করার দাবী ও সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলেও শুধুমাত্র বন বিভাগের
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদাসিনতার কারণে তা কার্যক্রর হচ্ছে না।
এদিকে সড়কগুলোর পার্শ্বে হেলা পড়া অনেক গাছের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দূর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে উপজেলাবাসীকে।
উপজেলা
পরিবহন শ্রমিক ঐক্য জোটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, উপজেলা
সদরের টিএনটি রোডসহ বিশ্বনাথের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গাছ উপড়ে পড়ে
নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে যান চলাচল। সাথে সাথে প্রদক্ষেপ
গ্রহন করা হলে গাছগুলো থেকে সরকার যেমন রাজস্ব পেতেন, তেমনি উপড়ে পড়া গাছের
কারণে সড়কেও কোন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হতো না।
ব্যবসায়ী
মঈন উদ্দিন বলেন, বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে মাঝে
মধ্যেই হঠাৎ পুরাণো গাছের ডাল ভেঙ্গে সড়কে পড়ে। এতে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর
সড়কের পার্শ্বে থাকা পুরাণো গাছগুলোর ডালপালা কর্তন করা হলে কিংবা করেই
পুরাণো গাছগুলো কর্তন করে নতুন করে গাছ রোপন করা হলে মানুষের ক্ষতির
সম্ভাবনা কমে যেতো।উপজেলার জয়নগর সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি
মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বিদ্যালয়ের মধ্যখানে থাকা প্রায় শত বছরের পুরনো
গাছটি বিধি মোতাবেক কর্তন করার অনুমতির জন্য প্রায় দেড়/দুই বছর পূর্বে
আবেদন করে ছিলাম। কিন্তু আজও অনুমতি পাইনি। গাছটি বিদ্যালয়ের মধ্যখানে
থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলাও করতে পারেনা। তাছাড়া হঠাৎ করেই গাছের ডালপালা
ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে। সেজন্য সর্বদা আমাদেরকে একটি অজানা আতংকের মধ্যে থাকতে
হয়।