বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজ পাতার ফাঁকে ধানের শিষের ছড়াছড়ি। কোথাও কোথাও আগাম জাতের ধান পেকে সোনালী রঙও ধারণ করেছে। ধানের ফলন দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। তারা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে শেষ পর্যন্ত ধানে গোলা ভরে উঠবে বলে আশা করছেন তারা।
কৃষি বিভাগ বলছে, সিলেট জেলায় এই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ১১০০ হেক্টর বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসায় ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। ধান কৃষকের গোলায় না ওঠা পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কর্মীরা মাঠে থেকে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার কৃষক ছয়ফুল মিয়া বললেন, এই মৌসুমে তিনি ৬ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। ধানে শীষ পরিপক্ক হয়ে এসেছে। রোগ-বালাইও নেই। ছয়-সাত দিনের মধ্যে তার জমির ধান পেকে যাবে। এ বছর ভালো ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করেন তিনি।
কৃষক আলী আহমদ জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি এই বছর জমিতে উন্নত জাতের ব্রি-৫১ ও ৫২ ধান রোপণ করেছিলেন। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। তিনি বললেন, বীজতলা থেকে এ পর্যন্ত তিনি কৃষি বিভাগের কথামতো জমিতে সুষম সারের ব্যবহার করেছেন। এ কারণে তার জমির ধান বেশ ভালো হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদে পরিবর্তন আসছে। উদ্ভাবন হচ্ছে নতুন নতুন ধানের জাতও। এ বছর চাষিদের ব্রি-৫১, ব্রি-৫২, ব্রি-৪৯, ব্রি-৭২, ব্রি-৪৬, ব্রি-৩২ জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেয়া হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে।
তিনি জানান, কৃষকরা এখন বেশ সচেতন। তারা জমিতে রোগবালাই কিংবা সমস্যার দেখা পেলেই কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে। মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসের ব্যবহারও শিখে ফেলেছেন গ্রামের কৃষকরা। তারা সেখান থেকেও তথ্য নিয়ে থাকেন। সব মিলিয়ে এ বছর আমনের বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ এই কর্মকর্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের তথ্য অনুসারে, সিলেট জেলায় এই মৌসুমে ১ লাখ ৪০ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল। এরমধ্যে ৯২ হাজার ৪৪১ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ৪৭ হাজার ৭৪৪ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান রোপণের জন্য নির্ধারণ করা হয়। তবে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও ১ হাজার ১৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক মজুমদার মো. ইলিয়াস বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে রোপা আমনের আবাদ বেশি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান ক্ষেতের অবস্থা খুবই ভালো। কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত ধানের পরিচর্যা করতে কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। কিছু কিছু এলাকায় আগাম জাতের ধান কর্তন শুরু হয়ে গেছে। তবে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে।