ভাঙ্গুড়ায় তিন হাজার একর জমিতে রবিশস্য আবাদ অনিশ্চিত

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সর্বত্র বন্যার পানি নেমে গেলেও বিশাকোল গ্রাম হতে সাতবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত চার কিলোমিটার সাবমারসিবল সড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় তিন হাজার একর জমিতে বর্ষার পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চলনবিল অধ্যুষিত এসব জমিতে এবছর রবিশস্য আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে এই পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না নিলে এসব জমি এ মৌসুমে অনাবাদি থেকে যাবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বছর নির্মিত এই সড়কে প্রশস্ত ড্রেন নির্মাণ না করে অপরিকল্পিতভাবে সংকীর্ণ ইউড্রেন নির্মাণ করায় বন্যার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছেনা।

একাধিক সূত্র হতে জানা যায়, উপজেলার অষ্টমনিষা ও খানমরিচ ইউনিয়নের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করতে বিশাকোল গ্রাম হতে সাতবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত শতাধিক একর ফসলি জমির মধ্যে দিয়ে চার কিলোমিটার সাবমারসিবল সড়ক নির্মাণ করা হয়। এই সড়কের দু’পাশে হাজার হাজার একর জমিতে শীত মৌসুমে রবিশস্য ও পরে বোরো ধান আবাদ করা হয়। দেড় যুগ আগে চলনবিল অধ্যুষিত বিস্তীর্ণ এই অঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অকার্যকর হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার একর জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তাই শুষ্ক মৌসুমে এই অঞ্চলের জমিতে ফসল আবাদ করে কৃষকরা জীবিকা নির্বাহ করে। বন্যায় প্রচুর পলি পড়ায় এসব জমিতে ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়। এ অবস্থায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের বরাদ্দে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক নির্মাণ করা হয়। সড়কের দুই পাশের এসব জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের বিভিন্ন স্থানে তিন ফুট প্রশস্ত ১১ টি ইউড্রেন নির্মাণ করা হয়। এসব ইউড্রেনের মাধ্যমে সড়কের পশ্চিম পাশের জমির ওপর থাকা বন্যার পানি সড়কের পূর্ব পাশের জমির ওপর দিয়ে গুমানী নদীতে নিষ্কাশন হয়। কিন্তু ইউড্রেনগুলো সংকীর্ণ হওয়ায় পানির প্রচ- চাপ থাকা স্বত্বেও সড়কের পশ্চিম পাশের পানি অত্যন্ত ধীর গতিতে নিষ্কাশন হচ্ছে। ফলে সড়কের পশ্চিম পাশের জমিতে বিশাল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, সাবমারসিবল সড়কের প্রয়োজনীয় স্থানে প্রশস্ত ড্রেন নির্মাণ না করে যত্রতত্র সংকীর্ণ ইউড্রেন নির্মাণ করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাবমারসিবল সড়কটির পশ্চিম পাশে অষ্টমণিষা ও খানমরিচ ইউনিয়নের অন্তত পনেরটি গ্রামের প্রায় তিন হাজার একর জমির ওপর তিন ফুট উচ্চতায় পানি জমে আছে। অথচ সড়কের পূর্ব পাশের বেশিরভাগ জমির পানি নেমে গেছে। তবে কিছু নিচু জমিতে ১ ফুট উচ্চতায় এখনো পানি রয়েছে। সড়কের পূর্ব পাশে পানি কম থাকলেও সংকীর্ণ ইউড্রেন দিয়ে পর্যাপ্ত পানি বাহির না হওয়ায় সড়কের পশ্চিম পাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসময় দুটি ইউড্রেন মাটিতে ভরাট হয়ে অকার্যকর রয়েছে দেখা যায়। এ অবস্থায় সড়কের পূর্বপাশের উচু জমিগুলোতে অনেক কৃষক সরিষার বীজ বপন করেছেন। এছাড়া নিচের জমিগুলোতে দু-একদিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। তখন এসব জমিতে কৃষকরা বিনা চাষে রসুন ও সরিষার বীজ বপন করবেন। কিন্তু পশ্চিম পাশের জমিতে এবছর রবিশষ্য আবাদ হবে কিনা তা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।

বিশাকোল গ্রামের কৃষক শাজাহান আলী বলেন, আমার সাত বিঘা জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। তাই এ জমিতে ফসল আবাদ অনিশ্চিত। অথচ প্রতিবছর এই মৌসুমে এসব জমিতে রবিশস্য আবাদ করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেছি। উপজেলা প্রকৌশল অফিস অপরিকল্পিত রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কাজ করায় এমন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এবছর ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা রবিশষ্য আবাদ করতে না পারলে অনেকেই পথে বসে যাবে।

অভিযোগের বিষয়ে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সদ্য বদলি হওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী আফরোজা পারভীন বলেন, সড়ক ও ইউড্রেন পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অন্যান্য কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

অষ্টমনিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আয়নুল হক বলেন, উপজেলা প্রকৌশল অফিস সড়কে অপরিকল্পিতভাবে সংকীর্ণ ইউড্রেন নির্মাণ করার কারণে হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসকে জানানো হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে সড়ক ভেঙ্গে অথবা অন্য কোন উপায়ে পানি বের করতে না পারলে এসব জমি এবছর অনাবাদি থেকে যাবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার এনামুল হক বলেন, বন্যার পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হয়ে বিপুল পরিমাণ জমিতে রবিশস্য আবাদ সংকটের মুখে পড়ার বিষয়টি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছে। তবে বিষয়টি কৃষি অফিসের একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়। তাই উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, কৃষকদের বাঁচাতে যে কোনো ধরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আজকালের মধ্যেই কৃষি অফিসের মাধ্যমে এসব জমিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূর করার ব্যবস্থা করা হবে।