সমাজে দেরিতে বিয়েশাদী করার একটা প্রচলন গড়ে উঠছে। কারণ হিসেবে আজকালকার ছেলে-মেয়েরা ক্যারিয়ারের কথা বলেন। ক্যারিয়ার গুছিয়ে তবেই বিয়ের কথা ভাবেন। আবার গর্ভসঞ্চারের চিন্তাভাবনা করেন আরও দেরিতে৷ এই দেরির ফলে কিছু জটিলতা অনেকের ক্ষেত্রেই আসে। তাই হবু সন্তানের সুস্থতার কথা মাথায় রেখে প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে।
‘প্রি ম্যারেজ কাউন্সেলিং’-এর জনপ্রিয়তা বিদেশের মতো এ দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে। সুস্থ থাকার জন্য বিয়ের আগে কিছু বিষয়ে জোর দিতে হয়। আর এর জন্যই বিয়ের আগে অনেকেই রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করান, আবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিয়েশাদীর দিকে পাঁ বাড়ান।
অনেক সময় হবু স্বামী-স্ত্রীরা থ্যালাসিমিয়ার স্ক্রিনিং টেস্টও করান৷ কারণ একজনের মধ্যে এই রোগ থাকলে সমস্যা নেই৷ কিন্তু দু’জনের হলেই সন্তানেরও এই রোগ হতে পারে৷ এসব ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং করে তবেই বিয়ে করা উচিত৷
এ ছাড়া মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত পিরিয়ডের সঙ্গে মেদবাহুল্য ও ব্রণের সমস্যা থাকলে অর্থাৎ বেশি মাত্রার পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ থাকলে এবং ঘন ঘন প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে চিকিৎসা নিয়ে এসব রোগ সারিয়ে ফেলুন৷ না হলে গর্ভসঞ্চারে অসুবিধা হতে পারে৷
হবু স্বামীর কোন সমস্যা থাকলে চিকিৎসা করান৷ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শুক্রাণুর গুণমান যাচাই করে নিতে পারেন৷ জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর ক্ষতি হতে পারে৷ কাজেই বন্ধ করুন সে সব৷ ওজন খুব বেশি হলে ক্ষতি হতে পারে শুক্রাণুরও৷ কাজেই কম ক্যালোরির সুষম খাবার খেয়ে, ব্যায়াম করে ওজন কমান৷ সুস্থ শরীরে বিএমআই যেন ৩০-এর নীচে থাকে৷
অতিরিক্ত মদ, সিগারেট এবং টেনশন থেকেও ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি৷ কাজেই এখন থেকেই নেশা ছাড়ার চেষ্টা করুন আর টেনশনকে দূরে রাখুন। আর কোন ওষুধ নিয়মিত খেলে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন তাতে ডিম্বাণু বা শুক্রাণুর ক্ষতি হতে পারে কি না, যদি হয় তাহলে কী করণীয় তাও জেনে নিন৷
এছাড়া গর্ভসঞ্চারের আগে কী কী সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত সে সম্পর্কে গাইনী বিশেষজ্ঞরা যা বলেন-
- স্বামী–স্ত্রী ওজন কম রাখার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে স্ত্রী৷ শরীরচর্চা করুন৷ মন শান্ত রাখুন৷
- ঘরে বানানো কম ক্যালোরির সুষম খাবার খান৷
- মদ্যপান ও ধূমপান করবেন না৷ সন্তান ধারণের সময়ে এই দুটিই বেশি ক্ষতিকর, বিশেষ করে জটিলতা থাকলে তো এসব আরও সমস্যা তৈরি করে।
- উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণে এনে গর্ভসঞ্চারের কথা ভাবুন৷ ডায়াবেটিস বা হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে চিকিৎসা নিন৷
- যৌন রোগের আশঙ্কা থাকলে রক্ত পরীক্ষা করে ভাল চিকিৎসা নিন৷ কিছু যৌন রোগ ক্রনিক হয়ে গেলে বন্ধ্যাত্বও হতে পারে৷ কাজেই সাবধান৷
- এইচআইভি টেস্ট করান৷ রিপোর্ট পজিটিভ এলে কী ভাবে কী করতে হবে তা বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে তারপরই এগোন।
- মহিলাদের রুবেলার প্রতিষেধক নেওয়া জরুরি, স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়ে প্রয়োজন হলে এমএমআর টিকা দিয়ে ৩ মাস অপেক্ষা করার পর গর্ভসঞ্চারের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
- মেয়েরা ৪০০ মাইক্রোগ্রাম করে ফলিক অ্যাসিড খান৷ মাল্টিভিটামিনও খেতে পারেন৷ তবে অ্যানিমিয়া না থাকলে আয়রন সাপ্লিমেনন্টের দরকার নেই৷
- চিকেন পক্সের টেস্ট করান৷ রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে প্রতিষেধক দেওয়ার পর তবেই গর্ভধারণের চিন্তা করুন৷ না হলে গর্ভপাত, সময়ের আগে প্রসব ও সন্তানের জন্মগত ত্রুটি থাকার আশঙ্কা থাকে৷
- পরিবারে কোন জেনেটিক অসুখ থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চলুন৷ প্রয়োজনে ক্রোমোজোমাল স্টাডি করে তবেই এগোন৷