বিশ্বনাথে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে আপন দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের সরুয়ালা গ্রামের আব্দুল মতিন চৌধুরী ও তার ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী মকবুল হোসেন মন্তই’র মধ্যে এ বিরোধ চলে আসছে। এনিয়ে হামলার অভিযোগে প্রবাসীর বাড়ির কেয়ারটেকার ও পাহারাদারসহ ৭জনকে আসামী করে মামলা দায়ের ও প্রবাসীর বসতঘরে তালাবদ্ধ করা হয়েছে।জানা গেছে, জায়গা সম্পত্তি নিয়ে সরুয়ালা গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইর্শ্বাদ আলীর পুত্র আব্দুল মতিন চৌধুরী ও মকবুল হোসেন মন্তই’র মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি নিস্পত্তির লক্ষ্যে ওই গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ২০০৮ সালে দুই ভাইয়ের মধ্যকার বিরোধটি সাময়িকভাবে নিস্পত্তি করে দিলেও পরবর্তীতে এবিরোধ আবারও দেখা দেয়। মকবুল হোসেন মন্তই যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও তার বাড়িতে বসবাসরত কেয়ারটেকার পরিবারের সঙ্গে বর্তমানের বিরোধটি চরম আকার ধারণ করেছে।আব্দুল মতিন চৌধুরী জানান, তিনি ও তার ভাইয়ের সম্পত্তি যৌথ। তা এখনো ভাগবাটোয়ারা হয়নি। প্রবাসী ভাইয়ের বাড়ি-ঘর দেখাশুনা করার জন্য প্রায় ২৫ বছর আগে বাড়িতে তিনি নিজেই আশ্রয় দেন সুনামগঞ্জ জেলার বাসিন্দা বিধবা সুফিয়া বেগম (৪৫)’কে। তখন থেকে প্রবাসীর বাড়িতে সুফিয়া বেগম তার দুই মেয়ে খালেদা বেগম ও খাদেজা বেগমসহ স্ব-পরিবারের বসবাস করে আসছেন। সেই সুবাদে সুফিয়া বেগম বাড়ির পুকুরের মাছ, বাড়ির গাছ-গাছালি ও ফসলাদি প্রবাসীর অংশ ভোগদখল করার চেষ্টা করেন। সম্প্রতি প্রবাসীর ঘরে বহিরাগত ও এলাকার চিহিৃত অপরাধীরা আনাগোনা করতে থাকে। এতে পরিবারের সম্মানহানী হতে থাকলে বাড়িতে বহিরাতদের আনাগোনা বন্ধ করতে সুফিয়া বেগমকে বলেন আব্দুল মতিন চৌধুরীর ছেলে সামরান চৌধুরী রাজু (৩৫)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হয়ে উঠেন সুফিয়া বেগম ও বাড়িতে আসা বহিরাগতরা। এরই জের ধরে গত ২৩ অক্টোবর রাত ১০টায় উপজেলা সদর থেকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছেলেন। বাড়ির গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলে পার্শ্ববর্তি পশ্চিম শ্বাসরাম গ্রামের সাহেদ আহমদ (৩০), আব্দুল্লাহ (২৬), নুরুজ আলী (৫০) ও ধীতুপুর গ্রামের নিবারন দাশ (৩৬)সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন দুব্র্ত্তরা। এতে গুরুত্বর আহত হন রাজু। এসময় পার্শ্ববর্তি বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।এদিকে, হামলার ঘটনায় সামরাম চৌধুরী রাজু বাদী হয়ে সাহেদ আহমদ, আব্দুল্লাহ, নুরুজ আলী, নিবারন দাশ, বাড়ির কেয়ারটেকার সুফিয়া বেগম, তার মেয়ে খালেদা বেগম ও খাদেজা বেগমকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর বাড়ি তালাবদ্ধ করে স্ব-পরিবারে পালিয়ে যান সুফিয়া বেগম। এই সুযোগে প্রবাসীর বাড়ির গেইট ও বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন সামরাম চৌধুরী রাজু পক্ষ। এ মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে গত বৃহস্পতিবার কেয়ারটেকার সুফিয়া বেগম তার মেয়েদের নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে তাদেরকে বাঁধা দেন আব্দুল মতিন চৌধুরী। এরপর থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে ঝুলানো তালা খুলে দিতে বাধ্য হন আব্দুল মতিন চৌধুরী পক্ষ। ফলে বাড়িতে প্রবেশ করেন প্রবাসীর কেয়ারটেকার পরিবার।কেয়ারটেকার সুফিয়া বেগম বলেন, প্রবাসী মকবুল হোসেন মন্তইর পিতা ইর্শ্বাদ আলী বাড়িটি দেখাশুনা করতে আমাদেরকে থাকার জাগয়া দিয়েছেন। আমরা এখানে প্রায় ২৫ বছর ধরে অবস্থান করছি। এলাকার কোন লোক আমাদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করবে না, তা আমার বিশ্বাস। প্রবাসীর সঙ্গে তার ভাইয়ের বিরোধ এলাকার মুরব্বিরা নিস্পত্তি করে দেওয়ার পরও আব্দুল মতিন চৌধুরী ও তার ছেলে সামরাম চৌধুরী রাজু আমার পরিবার, বাড়ির পাহারদার সাহেদ ও কাজের লোকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আসছেন। দুব্র্ত্তদের হামলায় রাজু আহত হন। কিন্ত এ ঘটনায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাদেরকে হয়রানী করা হচ্ছে।এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক বলেন, ২০০৬ সালে মকবুল হোসেন মন্তই ও তার ভাই আব্দুল মতিন চৌধুরীর মধ্যে জায়গা সম্পদ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে পুলিশের তৎকালীণ এএসআই ও থানার ওসি’র তত্ত্বাবধানে বিশিষ্ট শালিস ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আমরা বিষয়টি নিস্পত্তি করি। কিন্ত দীর্ঘদিন পর আবারও সেই বিরোধ দুঃখজনক। প্রবাসী মকবুল হোসেন মন্তইর নিজের ক্রয়কৃত ভূমির উপর নির্মানাধীন ঘরটি দখল করতেই তার বাড়ির কেয়ারটেকার ও পাহারাদারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মূসা বলেন, দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রবাসীর ঘর তালাবদ্ধ করার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের লাগানো তালা খুলে দেয়।