ক্রিকেটে, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে বড়ো একটা ব্যাপার হলো টাইমিং। টাইমিং ঠিকঠাক হলেই শট ভালো; নইলে গোলমাল। সেই গোলমালটা লেগেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে আইসিসির তদন্তের একটি ফল পৌঁছাতে শুরু করেছে দেশে।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বছর দুই আগে একটা ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। ফলে সে সূত্রে তাকে অপরাধী বলার সুযোগ নেই। কিন্তু তার বিপক্ষে অভিযোগ—তিনি সময় মতো আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট বা আকসুকে এই ঘটনা জানাননি। যার ফলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
কিন্তু সমস্যাটা হলো, মাত্র কদিন আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বিপক্ষে একটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। সেই জের কাটতে না কাটতেই সাকিবের বিপক্ষে এই অভিযোগ।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে সাকিবদের আন্দোলনের সাথে এই ফিক্সিং অভিযোগের কোনো সম্পর্ক আছে কি না?
বিসিবি অবশ্য দাবি করছে, এরকম কোনো সম্পর্ক নেই। বিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক বলেছেন, ‘আইসিসি এই ব্যাপারটা নিয়ে দুই বছর ধরে তদন্ত করছে। কিন্তু তারা বিসিবিকে আগে কিছুই জানায়নি। এই মাসেই আইসিসি সভায় গিয়ে বোর্ড সভাপতি ব্যাপারটা জানতে পেরেছেন। এরপর ক্রিকেটারদের আন্দোলনের সময় বোর্ড মিটিংয়ে তিনি আমাদের আভাস দিয়েছিলেন, এরকম কিছু একটা হতে পারে। ফলে এটার সঙ্গে বিসিবির আসলে কোনো সম্পর্ক ছিল না।’
সাকিবের সঙ্গে বোর্ডের প্রথম সমস্যাটা শুরু হয় ক্রিকেটারদের আন্দোলন থেকে। শুরুতে ১১ দফা, পরে ১৩ দফা দাবি নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের বিপক্ষে অবস্থান নেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সাকিব আল হাসান। এরপর সাকিবসহ ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিসিবি। সেই বৈঠক শেষে সাকিব ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে জানান যে, তাদের সমঝোতা হয়েছে। বিসিবি তাদের ৯টি দাবি মেনে নেয়।
এরপরও সাকিবের সঙ্গে আরেক দফা ঝামেলা হয় বিসিবির। একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এদিকে বিসিবির আইনে বলা হয়েছে, তাদের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। এই আইনের সুবাদে সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় দলের আরো দুই ক্রিকেটার দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারেননি।
বিসিবি থেকে দাবি করা হয়, সাকিবের এই চুক্তির ফলে তাদের প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান হবে। ফলে সাকিবের এই চুক্তি করে ফেলাটা ভালোভাবে নিতে পারেনি বিসিবি।
এদিকে সাকিবের সঙ্গে এই দুটি ইস্যুতে মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি সাক্ষাত্কারে বিসিবি সভাপতি দাবি করেন, বাংলাদেশের ভারত সফর বাতিল করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। তারই অংশ হিসেবে খেলোয়াড়রা আন্দোলন করেছিলেন বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, কয়েক জন খেলোয়াড় শেষ মুহূর্তে ভারত সফরের দল থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারে।
নাজমুল হাসান পাপন এমন কথা বলার পরপরই সাকিবের ফিক্সিং বিষয়ক অভিযোগ সামনে এলো। ফলে সন্দেহটা রয়েই গেল, এসবের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না।