মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নে টেটাযুদ্ধের ঘটনায় তকবির হোসেন ও জয়নাল মন্ডল নিহত হওয়ার পরও হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীরা ধারা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। প্রকাশ্যে হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়ালেও আসামীদের না ধরার অভিযোগ করেছেন বাদী পক্ষের খোকন সরকার ও সাবেক লতব্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ মোঃ ফজলুল হক। যুগের পর যুগ ধরে হত্যাকান্ড ঘটে আসছে এই এলাকায়। ৭২ সালে গেদা মেম্বারকে ৭০ টুকরা করে হত্যা করে। নাসির মোল্লা ও তারিক মুন্সী একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রন করে অপর দিকে নুরু বাউল ও জমির মুন্সী অপর একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রন করে। বিচারহীনতার কারণে ফের সংঘর্ষ ও হত্যা সংঘঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছে। গেদা মেম্বার থেকে শুরু করে অদ্য পর্যন্ত অত্র এলাকায় যতগুলো মার্ডার হয়েছে সবগুলোই বিচারহীনতায় শেষ হয়েছে। ফলে যুগযুগ ধরে এখানে হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে বংশ পরম্পরায়।
পাকিস্তান আমল থেকে হত্যাকান্ড শুরু হয় সিরাজদখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নে। ৬৫ সালে স্বপন সরকারের দাদা আলী হোসেন সরকারের নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ড ঘটে। পরবর্তীতে ৭২ সালে গেদা মেম্বার হত্যাকান্ড। পরবর্তীতে ৭৫ সালে হত্যা হয় আইছালী হত্যা। এভাবে একটার পর একটা হত্যাকান্ড চলেই আসছে। সম্প্রতি আগবর নগর জয়নাল মন্ডল, বালুরচরের তকবির হেসেন মোল্লা দিয়ে শেষ হলেও ফের সংঘর্ষের আশংকা। মিমাংসার নামে সকল হত্যাকান্ডগুলোকেই বিগত সময় ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।
তকবির হত্যা মামলায় ৬০এজহার নামীয় আসামী দিয়ে অজ্ঞাতসহ সর্বমোট ১০০জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছিল সিরাজদিখান থানায়। বাদী পক্ষের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, হত্যাকান্ড ঘটিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা মামলার আসামীরা এখনো ঘুরে বেড়ায়। কিভাবে সম্ভব? আসামীদের কেন পুলিশ ধরছে না বুঝে আসছে না? হত্যা মামলার প্রধান আসামী নুর হোসেন বাউল, দেশী-বিদেশী অস্ত্রের যোগানদাতা আমির হোসেন কসাইসহ ৬জনকে গত ৯ আগস্ট গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। অপরদিকে মামলার অন্যতম আসামীদের মধ্যে মোল্লাকান্দি গ্রামের শহীদ বাউল, আলী আহম্মদ বাউল, জাহাঙ্গীর বাউল, সুরুজ জামান সরকার, কসাই স্বশস্ত্র ক্যাডার আলতাফ হোসেন, নতুন ভাষানচর গ্রামের রুকুল মীর, মোতাহার হোসেন, দোসরপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন মাদবর, জাহাঙ্গীর মাদবর, জমির মুন্সী, শহীদ বাউল, জাহাঙ্গীর বাউল, ইয়াবা স¤্রাট ফয়জুল্লা মুন্সীসহ একাধিক সন্ত্রাসী এখনো এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলার বাদীপক্ষকে হুমকি প্রদান করে আসছে। লেহাজ উদ্দিন বাউল পিতা মৃত মোহন বাউল এলাকায় চিহ্নিত গাজা বিক্রেতা। কয়েকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে সে।
অপরদিকে আকবর নগরের জয়নাল মন্ডল হত্যাকান্ডের পর হত্যা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী ছামেদ আলী ও তার পাঁচ ছেলেসহ অন্যান্য আসামীদের প্রকাশ্যে ঘোড়াফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। হত্যাকান্ডের আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আইন প্রসাশনের নজড়ে আসছে না!
একটি সূত্র জানায়, তকবির হত্যা মামলার আসামীরা ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলার আপোষ মিমাংসার জন্য বেশ কয়েকজন মিলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও বালুচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আবু বকর সিদ্দিকের কাছে জমা রেখেছে। কিন্তু তকবিরের পরিবারের লোকজন টাকা চায় না তারা চায় তকবির হত্যার বিচার। তকবিরের পরিবার প্রকৃত পক্ষে কি সঠিক বিচার পাবে? এটাই এখন তকবিরের পরিবারের প্রশ্ন?
সাবেক লতব্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ মোঃ ফজলুল হক জানান, পুলিশের ইন্ধনেই তকবির মোল্লা নিহত হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে পুলিশ রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করছে না। এই হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত প্রকৃত খুনি তাদেরকে আইনের আওতায় আনলেই এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী খোকন সরকার বলেন, পুলিশ সঠিক ভূমিকা পালন করলে ঐ দিন এই হত্যা সংঘঠিত হয় না। এই পুলিশ অজ্ঞাত কারণে আসামী ধরছে না। হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনলেই এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।
মোল্লাকান্দি গ্রামের ব্যবসায়ী ই¯্রাফিল বেপারী জানান, হত্যা মামলার আসামীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। পুলিশ কেন আসামীদের গ্রেফতার করছে না? বিষয়টি খুবই রহস্যজনক।
সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফরিদ উদ্দিন, বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় চেয়ারম্যানের উদ্যোগে আপশ মিমাংসার ব্যাপারে বসেছিল। কি হয়েছে জানি না। তবে হত্যা মামলা আপস মিমাংসা হয় না।
বালুচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে আপস মিমাংসায় বসেছিলেন ২৫ লাখ টাকা জমা নেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিকের জিম্মায়ই টাকাটা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। তকবিরের পরিবার হলো নিডি পরবার। মামলার চালানোর মতো সামর্থ তাদের নেই। অপরদিকে বাদী পক্ষ খুবই শক্তিশালী। তাই মামলাটির বাদী ও বিবাদীগন যদি আপস মিমাংসা করতে চায় তবে হবে অন্যথায় হবে না। আপস মিমাংসার বিষয়টি পুলিশ সুপার জানেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশ সুপার জানেন না।
তবে স্থানীয়দের ধারণা মামলা যদি পিবিআই বা র্যাবের হাতে দেয়া হতো তবে বাদী পক্ষ ন্যায় বিচার পাবে বলে অনেকেই আলোকপাত করেছেন। এলাকার সাধারণ লোকদের অভিমত হলো মামলাটি দ্রুত পিবিআই বা র্যাবের হাতে দেয়া হোক।
উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাদী বিবাদী আপস মিমাংসা করলে আমাদের কিছু করার নেই। তাদের অনুরোধেই ঢাকায় বসা হয়েছিল। ২৫লাখ টাকা বালুর চর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে জমা করা হয়েছে। আপস মিমাংসা হলে বাদী পক্ষকে টাকাটা দেয়া হবে।