সিলেটের বিশ্বনাথে ১৮ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ১০দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই তরুণীকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় মাতব্বররা অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান টিটু (২৫)’কে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন এবং তরুণীর উজ্জ্বতে মূল্য হিসেবে মাত্র ১লাখ টাকার মাধ্যমে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ভিকটিমের হত-দরিদ্র পরিবার। হাবিবুর রহমান টিটু উপজেলা লামাকাজী ইউনিয়নের কোনাউড়া নোয়াগাঁও গ্রামের মনোহর আলীর ছেলে।জানা গেছে, উপজেলার কোনাউড়া নোয়াগাঁও গ্রামে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান টিটু পার্শ্ববতি একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন ধর্ষিতা ওই তরুণী। সে উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের নওধার বৈরাগীরগাঁও গ্রামের একটি হত-দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। সে গৃহকর্মীর কাজ করাকালীণ অবস্থায় প্রায় ৬মাস পূর্বে তার সঙ্গে পরিচয় হয় হাবিবুর রহমান টিটু। একপর্যায়ে তাদের দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। গত ১১ অক্টোবর দুপুরে প্রেমিক টিটুর সঙ্গে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় প্রেমিকা তরুণী। ওই দিন দুপুরে তরুণীর বাবাকে ফোন করে টিটু তার পরিচয় দিয়ে বলে ‘আপনার মেয়ে আমার কাছে আছে’। একথা বলার পর তার ফোন বন্ধ করে রাখে। এরপর টিটু তার বাড়ির পার্শ্ববর্তি একটি নির্জন ঘরে তরুণীকে আটকে রেখে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। নিখোঁজের ঘটনায় তরুণীর পিতা গত ১৮ অক্টোবর বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন (ডায়েরী নং- ১০০০)। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দিন বিকেলে হাবিবুর রহমান টিটুর বাড়িতে যান বিশ্বনাথ থানার এসআই নবী হোসেন। তখন তিনি ভিকটিম তরুণী ও অভিযুক্ত টিটুকে থানায় নিয়ে আসার জন্য পরিবারকে বলেন। এরপর ওই দিন বিকেলে পরিবারের সদস্যরা ভিকটিম তরুণী ও অভিযুক্ত টিটুকে থানায় নিয়ে আসেন। তখন তরুণীকে বিয়ে করতে রাজি হওয়ায় বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় মাতব্বররা থানা পুলিশের কাছ থেকে তাদেরকে তরুণীর বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্ত বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় নওধার পূর্বপাড়া গ্রামের মুরব্বি সোনা মিয়া, আহমদ আলী, আলী হোসেন, আবদুল গফুর সহ মাতব্বরা ধর্ষক টিটুকে তার স্বজনের কাছে হস্তান্তর করেন এবং তরুণীর ইজ্জতে মূল্য হিসেবে তার অসহায় পরিবারকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদানের প্রস্তাব দেন। এতে তরুণীর পরিবার অসম্মতি জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টিটুর পরিবারের পক্ষ থেকে তরুণীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকায় পরিবারের পক্ষে ভিকটিম মেয়েটিকে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালে নিয়ে যেতেও তাদের কাছে গাড়ি ভাড়ার টাকাও নেই। এমতাবস্থায় পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তরুণীর পিতা। তবে তিনি মুরব্বিদের আশ্বাসের দিকে চেয়ে আছেন।এদিকে, ধর্ষিতার পরিবারকে বিষয়টি নিস্পত্তির আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপন করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার পায়তারা করা হচ্ছে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।এব্যাপারে তরুণী বলেন, ‘আমি টাকা পয়সা চাই না, স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চাই’।এদিকে, অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান টিটু ও তার পিতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে টিটুর বড় ভাই শানুর আলী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি মুরব্বিদের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়েছে। কিভাবে নিস্পত্তি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা আমার জানা নেই।বিষয়টি নিম্পত্তি করতে মধ্যস্থতাকারী নওধার পূর্বপাড়া গ্রামের মুরব্বি সোনা মিয়া ও আলী হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার জন্য থানা থেকে তারেকে (ভিকটিম ও টিটু) বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্ত তখন টিটুর ভোটার আইডি ও জন্মনিবন্ধন কার্ড না পাওয়ায় বিয়ে পড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে টিটুকে তার স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিম্পত্তির জন্য আগামী বুধবার (৩০ অক্টোবর) বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে তারা জানান।বিশ্বনাথ থানার এসআই নবী হোসেন বলেন, ভিকটিমের পিতা থানায় সাধারণ ডায়েরী করলে অভিযুক্ত টিটুর বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে থানায় নিয়ে আসতে বলি। এরপর তারা থানায় আসে এবং তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়নি উল্লেখ করে তার পিতা লিখিত অঙ্গিকারনামা দিয়ে ভিকটিম ও অভিযুক্ত যুবককে থানা থেকে নিয়ে যান।