রাঙামাটিতে জুয়ার ক্লাবগুলিতে দৈনিক প্রায় অর্ধকোটি টাকা লেনদেন হয়

রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি :: রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগও জেলা পর্যায়ে ক্যাসিনো ও অবৈধ জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ফলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শহরে ফুটবল খেলার ক্লাবগুলি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, খেলাধূলায় অংশগ্রহণকারী রাঙামাটি শহরে ৩৩টি ক্লাব তাদের নিবন্ধন তালিকায় রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ক্লাবের প্রবেশ পথে বেশ বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে “ক্লাবের সদস্য ব্যতিত প্রবেশ নিষেধ” অনুরোধক্রমে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। লেখাটি পড়ে মনে হল অত্যন্ত গোপন আস্তানা। এসব গোপন আস্তানায় আসলেই কি হয় জানার কৌতুহল স্থানীয়দের। বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য ঢাকা ক্লাব, এই ক্লাবেও প্রবেশ পথে “ক্লাবের সদস্য ব্যতিত প্রবেশ নিষেধ” অনুরোধক্রমে ক্লাব কর্তৃপক্ষ এই ধরনের সাইন বোর্ড নেই।
প্রবেশের অনুমতি নিতে গিয়ে রাঙামাটি শহরে ক্লাব কর্তৃপক্ষের দেখা মেলেনি। ছদক ক্লাব, বলাকা কèাব, রাইজিং স্টার ক্লাব, শহীদ আব্দুস শুক্কুর ক্লাব, ইয়থ স্পোর্টিং ক্লাব, ফ্রেন্ডস ক্লাব, আবাহনী ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, রাঙামাটি ক্রিকেটার্স ক্লাব ও সবুজ সংঘসহ শহরের অধিকাংশ ক্লাব জনশূন্য। কিছু কিছু ক্লাব খোলা থাকলেও ক্লাব কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। রাঙামাটি শহরের ক্লাবগুলিতে খেলাধুলার আড়ালে অনেকটা ওপেন সিক্রেট জুয়া ও মাদকসহ অনৈতিক কর্মকান্ডের আসর বসানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
স্থানীয়রা জানান রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকা, আপার রাঙামাটি, পুলিশ লাইন এলাকা, রাঙামাটি খাদ্য গুদাম এলাকা, তবলছড়ি, পর্যটন এলাকা, আসামবস্তি এলাকা, ভেদভেদী এলাকা, কলেজ গেইট, রাজবাড়ী, পাবলিক হেলথ, কালিন্দিপুর, বনরুপা, কাঠালতলী, রাঙামাটি পৌরসভার গেইট সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১৫টি স্থানে জুয়ার ক্লাবগুলিতে দৈনিক প্রায় অর্ধকোটি টাকা জুয়ার বোর্ডে লেনদেন হয়। এই টাকার চাঁদার ভাগ পান কথিত সাংবাদিক, স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ- যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতারা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের ঝটিকা অভিযানের পর জুয়া খেলা কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও কিছুদিন পর পুনরায় আবার চালু হয়ে যায় এসব জুয়ার ক্লাব। স্থানীয় প্রশাসন এসব ক্লাব গুলির অনৈতিক কর্মকান্ড দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। আজ পর্যন্ত এসব জুয়ার ক্লাবের বিরুদ্ধে কঠিন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি, জুয়া আইন ১৮৬৭ এর ৪ ধারায় একশো টাকা করে মাথাপিছু জরিমানা ছাড়া জুয়াড়ীদের বিরুদ্ধে অন্য কোন দন্ড প্রয়োগ করা হয়না। এ যেন জুয়াড়ীদের বিরুদ্ধে দায় সারা অভিযান।
রাঙামাটি জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছুফি উল্লাহ (প্রশাসন ও অপরাধ) সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে রাঙামাটি শহরে একযোগে আমরা ৭টি ক্লাবে অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযান পরিচালনাকালে ক্লাবগুলিতে জুয়া খেলার আলামত জব্দ করি এবং ১২ জন জুয়াড়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে জরিমানা করেছি। এসময় অনেক জুয়াড়ী নদীতে ঝাপ দিয়ে পালিয়ে যায়। জুয়া খেলায় যেই জড়িত হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছুফি উল্লাহ আরো বলেন জুয়া সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, যে বাসা বাড়ীতে জুয়ার আসর বসবে বা জুয়া খেলার সামগ্রী পাওয়া যাবে সেই বাসা বাড়ীর মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হবে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।