বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের বড়াইগ্রামে ভূয়া এফিডেভিটের মাধ্যমে তালাক কার্যকর করার কথা বলে এক নারীর মোহরানার আড়াই লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে গ্রামের প্রধানদের বিরুদ্ধে। টাকা পরিশোধের পরও দিনের পর দিন হাজত খাটছেন স্বামী বেচারা। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল গ্রামে।
ভূক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জোনাইল গ্রামের শহীদুল ইসলামের মেয়ে হীরা খাতুনের সাথে ২০১৮ সালে একই উপজেলার বোর্ণি গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে সেলিমের বিয়ে হয়। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় শুরু থেকেই হীরা বাবা-মায়ের বাড়িতেই থাকতেন। এরই মধ্যে সেলিম দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ সময় সেলিমের বাবা স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী জোসনা বেগম, জোনাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল মামুন ও জোনাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী সুজন আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর ছেলে-বউমার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ করানোর সহযোগীতা চান। তাঁরা তাতে সাড়া দেন এবং আড়াই লাখ টাকা মোহরানা পরিশোধের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হবে বলে জানানো হয়। কথামত তাঁরা নোটারি পাবলিকের সেরেস্তার একটি এফিডেভিট সেলিমের বাবার কাছে দেন। যেখানে হীরা ও তাঁর মায়ের সাক্ষর রয়েছে। এফিডেভিটে নগদ আড়াই লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সেলিম ও হীরার বিবাহ বিচ্ছেদের কথাও উল্লেখ থাকে। সেলিম ওই এফিডেভিট ঘরে রেখে দেন যতœ করে। হঠাৎ করে সেলিম জানতে পারেন হীরা তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। গত ৪০ দিন ধরে তিনি জেলহাজতে আটক আছেন।
সেলিমের বাবা আব্দুল করিম জানান, গ্রামের প্রধানদের হাতে তিনি পুরো আড়াই লাখ টাকা দিয়েছেন তাঁর বউমার মোহরানা বাবদ। অথচ তাঁর ছেলের বউ হীরা বলছে তাঁকে কোনো টাকাই দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর ছেলের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদও হয়নি। পরে তিনি ওই প্রধানদের কাছে টাকা ফেরত চেয়েও পাননি। এ কারণে ছেলের বউ হীরা আদালতে মামলা করেছে। এখন তিনি উভয় সঙ্কটে পড়েছেন। একদিকে ছেলে হাজতে, অন্যদিকে এতগুলো টাকা লোপাট।
হীরা খাতুন জানান, তাঁর সাথে সেলিমের বৈবাহিক সম্পর্ক অক্ষুন্ন আছে। যদিও তিনি তাঁর ভরণপোষণ করেন না। তিনি মোহরানা খোরপোষ বাবদ কোনো টাকাও পাননি। যে এফিডেভিট দেখানো হচ্ছে তাতে তিনি বা তাঁর মা স্বাক্ষর করেননি। তাতে নোটারি পাবলিকের সই বা ছিলও নাই। এটা ভূয়া কাগজ।
এ ব্যাপারে জোসনা খাতুন জানান, দেনমোহরের টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি সঠিক নয়। হীরাকে সব কিছু বুঝিয়ে দেয়া পরও তিনি মামলা করেছেন। এটা তার উচিৎ হয়নি। তবে নোটারী পাবলিকের স্বাক্ষরবিহীন জাল এফিডেভিটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।