জামায়াত কর্মীকে সরাতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলায় অভিযুক্ত আসামী ও জামায়াত কর্মীকে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমণিষা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। বুধবার দুপুরে এলাকার প্রায় শতাধিক অভিভাবক স্কুল চত্বরে গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী ও জামায়াত কর্মী মেজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ চলাকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলীর পক্ষ নিয়ে স্থানীয় যুবলীগের নেতারা এলাকাবাসীকে ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে এলাকাবাসী স্কুল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঝবঝবিয়া সড়কের ওপর মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের উপর ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষের।

জানা যায়, গত মাসে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। সেই কমিটির সভাপতি ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন। কমিটির মেয়াদ শেষে ফরহাদ হোসেনকেই পুনরায় সভাপতি করে নতুন কমিটি করার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আনসার আলী যুবলীগ নেতা ফরহাদ আলীকে ম্যানেজ করে তার (আনসার আলী) আপন মামা ও জামায়াত কর্মী মোজাম্মেল হককে সভাপতি করে অতি গোপনে চলতি মাসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। বিষয়টি পরে জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ১৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু এর পরেও ওই কমিটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় বুধবার দুপুরে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

এদিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অষ্টমনিষা গ্রামের বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শতাধিক অভিভাবক বিদ্যালয় চত্বরে জড়ো হয়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। এসময় এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। পরে প্রধান শিক্ষক ও জামায়াত কর্মীর পক্ষে অষ্টমনিষা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মজির উদ্দিন লোকজন নিয়ে এসে এলাকাবাসীর ওপর ধাওয়া করে সবাইকে বিদ্যালয় চত্বর থেকে বের করে দেয়। পরে তারা বিদ্যালয় থেকে এক কিলোমিটার দূরে ঝবঝবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত জামায়াত কর্মী মোজাম্মেল হককে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো হাত ছিলনা। বিদ্যালয়ের পূর্বের ম্যানেজিং কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমি শুধু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।’

পূর্বের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যুবলীগ নেতা ফরহাদ আলী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই মোজাম্মেল হককে সভাপতি করা হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন রয়েছে।

এলাকার অভিভাবকদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ধাওয়া করার ব্যাপারে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মজির উদ্দিন বলেন, মোজাম্মেল হক আগে জামাত করলেও এখন আর করেন না। তাই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলার ব্যাপারটা সেভাবে দেখা হচ্ছে না। এছাড়া মোজাম্মেল হক বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হওয়ায় তাকে সমর্থন দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, অষ্টমনিষা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত নিরসন করা হবে। এরইমধ্যে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।