আবদুল জব্বার, পাবনা:
পাবনায় গণধর্ষণের শিকার ৩ সন্তানের জননীকে এক ধর্ষকের সাথে থানায় বিয়ের ঘটনায় পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার এবং এসআই একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অপরদিকে এজহার নামীয় চারজন ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রধান আসামী রাসেল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ঘটনার বিচার দাবিতে পাবনা শহরে শহরে মানববন্ধন করেছে মহিলা পরিষদ।
পাবনার সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইবনে মিজান পুলিশ সুপারের বরাত দিয়ে বলেন, গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে থানায় ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় জেলা পুলিশ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলে পুলিশ সুপার পাবনা থানার ওসি ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার এবং থানায় কাজী ডেকে আনার জন্য এসআই একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই ধর্ষণ মামলার ঘটনায় এজহারভুক্ত পাঁচ আসামীর মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন, পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামের আলী আকবরের ছেলে মামলার প্রধান আসামী রাসেল, গাঁতী ভাটপাড়া সাতমাইল গ্রামের হোসেন ড্রাইভার পিতা- অজ্ঞাত, রানীগ্রামের সিরাজ মাস্টারের ছেলে দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ঘন্টু, ফলিয়া গ্রামের কালাম হোসেনের ছেলে মোঃ সাজু হোসেন। অপর এক আসামী ওসমানকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান চলছে। প্রধান আসামী রাসেল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইবনে মিজান আরো বলেন, ৩ সন্তানের জননী গণধর্ষণের শিকার গৃহবধুর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। ধর্ষীতা গৃহবধুকে তার প্রথম স্বামী ও পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দায়িত্ব অবহেলা ও ধর্ষণ মামলা না নেয়ার কারণে ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে, পাবনার গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ সহ সারাদেশে ধর্ষণ, হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জেলা শাখা পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মানবববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি পূরবী মৈত্র, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার জলি, অর্থ-সম্পাদক রেহানা করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন নাহার জোসনা, লিগ্যাল এইড সম্পাদক, শরিফা খাতুন সুখী, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রোজিনা আকতার ও প্রকল্প সমন্বয়কারী এ এম এস কিবরিয়া প্রমুখ। বক্তারা অবিলম্বে ধর্ষণের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার এবং একই সাথে দায়িত্বে অবহেলা ও অইন বহির্ভূত কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামের এক নারীকে ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদসহ চার সহযোগী অপহরণ করে টানা চারদিন ধরে গণধর্ষণ করে। নির্যাতিতা গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তারা ৫ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগীকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে পাবনা থানায় লিখিত এজাহার দিলে পাবনা থানার এসআই একরামুল হক অভিযুক্ত ধর্ষক রাসেলকে আটক করে। পুলিশ রাসেলকে আটক করলেও মামলা নথিভুক্ত না করে থানা চত্বরে একটি চক্রের মধ্যস্থতায় কাজী ডেকে এনে পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়ে তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত রাসেলের সঙ্গে ধর্ষিতাকে বিয়ে দিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করেন থানার ওসি ওবায়দুল হক। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়।