থানায় ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে; ওসি প্রত্যাহার, এসআই বরখাস্ত

পাবনায় তিন সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং এরপর থানায় নিয়ে ধর্ষকদের একজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার ও এসআই একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।

পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ওসি ওবায়দুল হককে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর অভিযুক্ত ধর্ষকের সঙ্গে থানায় গৃহবধূর বিয়ে দেয়ায় প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী এসআই এনামুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় হাইকোর্ট নজর রাখছেন বলে জানানোর একদিন পরই এই ব্যবস্থা নেয়া হলো।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চে এ ঘটনার প্রকাশিত খবর তুলে ধরে সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে স্বপ্রণোদিত আদেশ চান সুপ্রিমকোর্টের তিন আইনজীবী। তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে আমরাও বিষয়টা নজরে রাখছি।’

মামলার এজাহার ও নির্যাতিতর স্বজন সূত্রে জানা যায়, পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামের এক নারী স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।

গত ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ চার সহযোগীকে নিয়ে তাকে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। টানা ৪ দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে পালাক্রমে ওই নারীকে ধর্ষণ করে তারা।

নির্যাতিত গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তারা গত ৫ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামতও মেলে।

পরে গৃহবধূ নিজেই বাদি হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ রাসেলকে আটক করে। মামলা নথিভুক্ত না করে স্থানীয় একটি চক্রের মধ্যস্থতায় পূর্বের স্বামীকে তালাক ও অভিযুক্ত রাসেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে পুলিশ ঘটনা মীমাংসা করে দেয় বলে অভিযোগ স্বজনদের।

অভিযোগকারী ওই নারী বলছেন, শুক্রবার রাতে পাবনা সদর থানায় জোর করে তার বিয়ে দেয়া হয়।

তবে পাবনা সদর থানার ওসি ওবায়দুল হক বলেন, তারা নিজেরা নিজেরাই মীমাংসা করে বিয়ে করেছেন।

আর যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, ‘রিমান্ডের ভয়’ দেখিয়ে পুলিশ তাদের বিয়ে দিয়েছে।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) ফিরোজ আহমেদকে প্রধান ও ডিআই-১ এবং সদর কোর্ট ইন্সপেক্টরকে সদস্য করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।