নওগাঁর আত্রাইয়ে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী বাঁকিওলমা গ্রামের ময়েন উদ্দিন

রওশন আরা শিলা,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ-নওগাঁর আত্রাইয়ে বিলের খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন করে এলাকার সকলের দৃষ্টি কেড়ে এখন স্বাবলম্বী ময়েন উদ্দিন । অভাবের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। তার এ কঠিন পরিশ্রমের সফলতা দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা বর্তমানে সোনার হরিণ সরকারী চাকুরীর আশা ছেড়ে হাঁস পালন করতে শুরু করেছেন।
উপজেলা থেকে ০৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে একটু পূর্ব দিকে তাকালেই দেখা যাবে বিলে ঘেরা ও অভয় আশ্রমের পাশের্^র গ্রামটি বাঁকিওলমা । আর এ বিলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাঁকিওলমা গ্রাম এখন হাঁসের খামারে পরিনত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক বেকার শিক্ষিত যুবক- –যুবতীরা বিলের বাধেঁ ও রাস্তার পাশের্^ গড়ে তুলেছে হাঁসের খামার। এদের মধ্যে ময়েনউদ্দি নিজের বাড়িতেই হাঁসের খামার তৈরি করে সকলের দৃষ্টি কেঁড়েছে। বর্তমানে তার খামারে হাঁসের সংখ্যা ৮/৯শত। সরেজমিনে খামার পরিদর্শন শেষে ময়েন উদ্দিনের সাথে কথা বললে, তিনি জানান, অভাবের সংসারে আমি লেখা-পড়া করতে পারিনি, তবে আমার ছেলেকে শিক্ষিত করে বিদেশে পাঠাইয়াছি ও মেয়েকে বি এ পাশ করে বিয়ে দিয়েছি। অভাবের তারনাই নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু করার।
কিন্তু অর্থের অভাবে আমার স্বপ্নটা পূরন করতে পারি নাই। শেষে অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেন দরিদ্র ময়েন উদ্দিন হাঁসের খামার গড়ে তুলবেন। কিন্তু হাঁস পালন সম্পর্কে কোন ধারনা ছিল না তার। উপজেলার বাঁকিওলমা এলাকায় খোলা জলাশয়ে বিলের মাঝে হাঁস পালন করা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আহসানগঞ্জ হাট থেকে ৭৫টি হাঁস কিনে শুরু করেন হাঁস পালন। কঠোর পরিশ্রম করে তিন বছরের মধ্যে হাঁস পালন করে ব্যাপক লাভবান হন।
এর পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এতে থেমে থাকেনি ময়েন উদ্দিন। নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছে হাঁসের হ্যাচারী। নিজেই হ্যাঁচারীতে এখন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করছে। ময়েন উদ্দিন আরও জানান বিলের বাঁধে হাঁসের খামার গড়ে তুলতে তেমন একটা খরচের প্রয়োজন হয় নাই প্রাথমিক ভাবে । অল্প খরচে লাভও হয়েছে দ্বিগুর । এখন প্রায় ৮/৯ শত টি হাঁস আছে আমার খামারে। তাই এখন নিজের বাড়িতেই হাঁসের খামার তৈরি করেছি। খামারে একটি হাঁসের জন্য যে পরিমান খরচ হয়, খোলা বিলে সে খরচ অর্ধেকেরও কম। কারন বিলে হাঁস শামূখ সহ বিভিন্ন খাবার সহজেই পায়।ফরে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। বিলের খোলা জায়গায় খাবার খাওয়ার জন্য হাঁস ডিম দেয় অনেক বেশি। এ ছাড়া হাঁস রাখার জন্য কোন ঘর বানাতে হয় না। বাঁধের উপর পরিথিন দিয়ে সামান্য খরচে হাঁস রাখার জায়গা বানানো যায়। খোলা বিলে একটি হাঁসের জন্য খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস পর হাঁস ডিম দিতে শুরু করে।ক্যাম্বেল জাতের প্রতিটি হাঁস ২৫০ থেকে ২৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়।
নিজের হ্যাচারীতে বাচ্চা উৎপাদনের কারণে ময়েন উদ্দিনের হাঁস পালনের খরচ অন্যদের তুলনায় অনেক কম। বর্ষা মৌসুমে তার ৬মাস কাটে বিলের বাঁধে। বাঁকি সময় থাকে সে হ্যাচারী নিয়ে।হাঁসের ডিম যখন আকারে ছোট হয়ে আসে বা ডিম দেয়া একেবারে কমে গেলে সেই হাঁস বিক্রয় করে দেয়া হয়। তা থেকে লাভ হয় ৪ থেকে৬ লাখ টাকা।
ময়েন উদ্দিনের হাঁস পারনের সাফলতা দেখে এলাকায় অনেকেই গড়ে তুলেছেন বিরের বাঁধে হাঁসের খামার।সবাই কম-বেশি লাভবান হচ্ছেন সেই সাথে দূর হচ্ছে এলাকার বেকারত্ব।ময়েনের পাশা-পাশি অন্যদের খামারে হাঁসের পরিমান ৪ থেকে ৫ শত। অপর একজন হাঁস পালনকারী সাহেবগঞ্জ গ্রামের তোহা জানান,লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে অল্প খরচে হাঁসের খামার গড়ে তুলে সহজেই স্বণির্ভর হওয়া যায়। তার মতে লেখাপড়ার পাশা-পাশি হাঁস পালন করাটা কোন কষ্টের নয়। তাই এখন তাদের সবার মুখে মুখে একটা-ই শ্লোগান, করবো মোড়া হাঁসের চাষ,থাকবো সুখে বার মাস।