সুস্থ থাকার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো ইত্যাদি। কিন্তু অনেক সময় মানুষ ভুলে যায় সঠিক ও পরিমিত খাবারের বিষয়টি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড. উইলিয়াম লি জানিয়েছেন, রোগ-ব্যাধির হাত থেকে মুক্ত থাকতে সুষম খাবারই যথেষ্ট। তার মতে, প্রকৃতিতে এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো নিয়ম করে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
উইলিয়াম লি বলেন, শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি রক্তকোষের সুস্থতা নির্ভর করে সঠিক খাবারের ওপর। শরীরকে বুড়িয়ে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে নির্দিষ্ট কিছু খাবার। শুধু খাবারের তালিকা পরিবর্তনের মাধ্যমেই তিনি হাজারো মানুষকে ক্যানসার ও স্মৃতিভ্রংশ রোগ ডিমেনশিয়া থেকে রক্ষা করেছেন।
নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে অগ্ন্যাশয়ের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর সেটি সম্ভব হলেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস। সম্প্রতি জামা ইন্টারন্যাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল। উদ্ভিদভিত্তিক এই ডায়েটে থাকতে পারে ফলমূল, শাক-সবজি, গোটা শস্যদানা, মটরশুঁটি ও বাদামের মতো খাদ্য। অন্যদিকে চিনি, শ্বেতসার ও পরিশোধিত শস্য পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
একইভাবে স্মৃতিভ্রংশ রোগ ডিমেনশিয়া প্রতিরোধেও বেশি বেশি শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে ফলমূল যেমন—আঙুর, জাম, ডালিম, আমলকী, হলুদ, বাদাম ও ব্রাহ্মি শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
আঙুরে থাকা কেভারেটল নামক একটি উপাদান মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আঙুরের রস মস্তিষ্কভিত্তিক অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত জাম খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা নার্ভসেলের ক্ষত সারানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
ব্রাহ্মি শাকে থাকা নিউরোপ্রটেকটিভ এজেন্ট স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি হতাশা ও উদ্বিগ্নতা কমাতে দারুণ কাজ করে। এছাড়া বাদামে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়।
ড. উইলিয়াম লি শরীরকে রোগমুক্ত রাখার জন্য শরীরের পাঁচটি প্রতিরোধব্যবস্থাকে জোরালো করার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। এই পাঁচটি প্রতিরোধব্যবস্থা হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা, শরীরের স্টেম সেল ব্যবস্থা, আমাদের ডিএনএ ব্যবস্থা, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এবং রক্তনালির কার্যক্রম ব্যবস্থা। এই পাঁচটি জিনিস ঠিক রাখতে পারলে সুস্থ থাকা যায়। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়া, মানসিক চাপ, খারাপ খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে এই পাঁচটি ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই এই পাঁচটি ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে পারলেই রোগ-ব্যাধি থেকে শরীরকে অনেকাংশেই মুক্ত রাখা সম্ভব। তবে তার জন্য সবার আগে নজর দিতে হবে সুষম খাবারের দিকে।—ডেইলি মেইল