লিপন সরকার চলনবিল প্রতিনিধি ঃ
সিরাজগঞ্জের চলনবিল এলাকার তাড়াশ উপজেলার হাটবাজার ইজারা থেকে এ বছর রাজস্ব এসেছে দুই কোটি টাকা দুই লাখ ৫৮ হাজার নয় শ ৮২ টাকা। প্রতি বছর রাজস্ব বৃদ্ধি পেলেও হাটবাজার গুলোতে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। হাটশেট ভেঙ্গে পরেছে, রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা, ড্রেনগুলো আবর্জনায় ভরে গেছে, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, নেই গণশৌচাগারের কোন ব্যবস্থা, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা আর অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেনা-বেচা করতে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে ইজারাদার ও জন প্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেন, তাড়াশ উপজেলা প্রশাসন তিন বছর যাবত হাটবাজার উন্নয়নের টাকা আটকে রাখায় এ অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী বার্ষিক আয়ের ১৫ শতাংশ হাটবাজার উন্নয়নের নিয়ম রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, তাড়াশ উপজেলায় আট ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে মোট ২৩টি হাট ও বাজার রয়েছে। এরমধ্যে ১৮টি ইজারা দেয়া হয়েছে। অন্য পাঁচটি খাস আদায় করা হচ্ছে।
সরকারের হাটবাজারের ইজারা পদ্ধতি,ব্যবস্থাপনা ও আয় বণ্টন বিষয়ক নীতিমালা অনুযায়ী, হাট ইজারার শতকরা ১৫ টাকা সংশ্লিষ্ট হাটের রক্ষাণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজে খরচ করতে হবে। বিক্রয় ছাউনি, গণশৌচাগার, নলকূপ ইত্যাদি উন্নয়নের কাজের জন্য ইজারার শতকরা ১০ টাকা উপজেলা উন্নয়ন তহবিলে জমা করতে হবে। এ ছাড়া হাটটি যে ইউনিয়নে অবস্থিত সে ইউনিয়ন পরিষদ কে শতকরা পাঁচ টাকা করে দেওয়ার নীতিমালা রয়েছে। এ ছাড়াও যে সকল হাটে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উন্নয়ন মূলক কাজ করছে সেসব হাটে শতকরা ১৫ টাকার পরিবর্তে প্রয়োজনে শতকরা ২৫ টাকা পর্যন্ত বরাদ্ধ দেয়া যাবে।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাড়াশ উপজেলা প্রশাসন হাট বাজার ইজারার টাকা উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যয় না করে আটকে রাখায় চরম জন দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহিষলুটি মাছের বাজার ও নওগাঁ হাটে গিয়ে দেখা যায়, অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোন উদ্যোগ নেই। ক্রেতাবিক্রেতাদেরও ভোগান্তির কোন শেষ নেই, সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি কাদায় একাকার হয়ে যায়, সুপেয় পানির জন্য নেই পর্যাপ্ত নলকুপ, বিক্রেতারা বিক্রয় ছাউনির অভাবে পলিথিন টাঙ্গিয়ে বেচাবিক্রি করছেন , ডাস্টবিন নেই, রাস্তার উপর হাট বসায় তীব্র যানজোট লেগেই থাকে, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নাজুক। ইতোপূর্বে যে সকল হাটশেড নির্মাণ করা হয়েছিল তার অধিকাংশই ফুটো হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে। দীর্ঘদিন কোন প্রকার টেন্ডার না থাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড একেবারেই থমকে গেছে।
মহিষলুটি মাছের বাজারে আড়ৎদার সমবায় সমিতির সেক্রেটারি কিসমত আলী দুলু বলেন, অবস্থা এতোই নাজুক যে বর্ণনা করে বোঝানো যাবেনা। কোন প্রকার উন্নয়নের ছোঁয়া নেই।অবর্ণনীয় কষ্টের মাঝে ক্রেতাবিক্রেতাদের কেনা-বেচা করতে হয়।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনু বলেন, উপজেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে এ প্রসঙ্গে বহুবার কথা বলেছি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন তাতে কোন সাড়া দেয়নি।যার ফলে হাটবাজারে চিত্র এমন ভয়াবহ।
তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, দীর্ঘ তিন বছর যাবত টাকা আটকে আছে।তবে আশা করছি খুব শিঘ্রই প্রকল্প আকারে উন্নয়ন করা হবে।
হাটবাজার ইজারার টাকা আটকে রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) মো: ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমি নবাগত। বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।