বিজন বনে সখি

এনামুল হক টগর

প্রিয়তম সখি জীবনের ভালোবাসায় বিজন বনের স্মৃতি তোমার কি মনে পড়ে?
বাড়ীর আউলা থেকে বেশ কিছু দূরে সবুজ মাঠে হেঁটে যেতাম পাখির কলকাকলি সুরে।
প্রকৃতির সৌন্দর্য রূপে অরণ্যে দুইটি সরু পথ ছিল প্রেমে মাখামাখি যৌবন চঞ্চল।
বেলাভূমি বুক বেয়ে আমরা ছুটে যেতাম নির্জন সবুজের বুকে নদী ছল ছল নীল জল!
একটি পথ দিয়ে আমি হেঁটে যেতাম একান্ত আপন মনে দিওয়ানা সখির সাক্ষাতে জীবন।
আরেকটি পথ দিয়ে তুমি হেঁটে আসতে গোপনে লুকিয়ে আশেক প্রেমের পরাণ।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা দুজন এক সময় মিলিত হতাম প্রকৃতির পুষ্প বাগিচায় ব্যাকুল নয়ন।
দীর্ঘ রাস্তার সমান্তরাল ভেঙে এক সময় দুজন মুখোমুখি হতাম নতুন দিনের সূর্য উদয়।
অরণ্য কুজন প্রভাতে অসংখ্য ফুলের সুবাস পাখিদের ছোট্ট নীড় শান্ত প্রেমময়।
তোমার হাতে ছিল সৌন্দর্যের বাহারি বনফুল বিলের শাপলা কাশফুল রক্তজবা সমুদোয়।
আমার হাতে থাকতো জুঁই চামেলি বেইলী শেফালী শিউলি বাহারি চন্দ্রমল্লিকা সদয়।
মৃত্তিকার সবুজ মাঠে কৃষাণের গানে ফসলের আবাদে সুষমবন্টন উৎপাদন।
বাউল বাঁশির সুর মাঝির বৈঠায় ভাটিয়ালীর বিরহ চেতনা বনের বুকে সখির আকুল প্রাণ।
একটি চঞ্চল কিশোর একটি মিষ্টি স্নেহের কিশোরী অরণ্যে খেলা করতো প্রতিদিন!
তাঁরা সবুজ বন থেকে বৃক্ষের রকমারি ফল এনে দিতো সুস্বাদু মিষ্টি শৈশবের বন্ধন।
কতো যে আনন্দ করতাম মজার কথা বলতাম রসিক মনে রঙিন আশার স্বপ্ন বাসনা।
বৈচিত্র্যময় বনের সবুজে পাখিগুলো খেলা করতো কিচিরমিচির শব্দ বাক্য গুঞ্জন।
হঠাৎ এক বর্ষার বিকেলে নদীর ক্রন্দন তুমি ফিরে এলে না হৃদয়ে বিচ্ছেদের দহন যন্ত্রণা।
কেন যে ফিরে এলে না মনের গভীরে কি রহস্য ছিল ময়না পরাণ লোভের বাসনা মোহ?
আমি ভিষণ তৃঞ্চায় অরণ্যের বুকে একা একা ফেরার প্রতিক্ষায় অনাগত প্রেম বিদ্রোহ।
তোমাকে হারনোর ব্যথায় নিঃসঙ্গ বেলাভূমির প্রান্তরে সাম্য পথিক কবি যুদ্ধে প্রগতিশীল।
এভাবে বহুদিন বহুবছর আশায় আশায় ক্লান্ত জীবন সজাগ কর্ণ দেহ বিষে জর্জর নীল !
তবুও তুমি ফিরে এলে না কেন ফিরে এলে না একবারও দেখা করলে না মুর্শিদা নন্দন।
যুগল পদচিহ্নের আঁকা-বাঁকা সেই রাস্তাটি আজ শুধুই স্মৃতিময় হাহাকারে ভীষণ ক্রন্দন।
পুরাতন রাস্তাগুলো কঠিন বেদনায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে আগাছায় ভরে গেছে প্রেমের বিরহ দিন।
বহুদিন বহুবছর পর এক সময় ইতিহাস লেখা হবে অমর যুগল হংস ভালোবাসায় মহাকাল!
দিন ও রাত্রির পাণ্ডুলিপিগুলো প্রকাশ হবে প্রকৃতির প্রেমে রং ঢং বৈচিত্র্যে বিহ্বল!
যুগ-যুগান্তরের সহস্র বছর সহস্র শতাব্দীর প্রজ্ঞায় আমরা জেগে উঠবো পূর্ণমিলন!
আমাদের কথাগুলো সময়ের বৃত্তে গল্প কবিতা উপন্যাস রচনা হবে দীর্ঘ রাস্তায় দীপ্ত জীবন।
নিরিবিলি কথাগুলো কালের ইতিহাসে আলোকপ্রাপ্ত হবে সভ্যতার নতুন কল্যাণ।
তুমি বেঁচে থাকো সখি মাশুক প্রেমে আমিও বেঁচে আছি বেদনাবিধুর ভাঙা হৃদয়ে নয়ন!
তুমি নেই আমি নেই অরণ্যে বাহারি গাছগুলো যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত স্মৃতিগুলো বড় অসহায়।
কোথায় কোন অজানার ঠিকানায় তুমি ঘর বেঁধেছো দুঃখ নদীর বাঁকে সংসার যন্ত্রণায়।
অচেনা বেলাভূমির পথে ঘুরতে ঘুরতে একদিন বিশ্বস্ত মন পৌঁছে যাবে ভালোবাসার মোহনায়।
যেখানে কি তোমাকে খুঁজে পাবো সখি বিজন বনে কুজন সুরে অরণ্য সূর্য সকাল বেলায়।।

১৭/০১/২০২৫