মুক্তিযুদ্ধে আটঘরিয়া

আমিরুল ইসলাম রাঙা ।
পাবনা জেলার এক ক্ষুদ্র উপজেলার নাম আটঘরিয়া। ভৌগলিকভাবে এই উপজেলা বৈচিত্রময়। দৈর্ঘ্যে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার, প্রস্থে কোথাও ৩/৪ কিলোমিটার বা কাছাকাছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কিলোমিটার পাকা সড়কও ছিলো না। শহর ছিলো না, বাজার ছিলো না। ছিলো কয়েকটি হাট। যেখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসতো। এই অবহেলিত জনপদে কালের পরিক্রমায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে পাবনা সড়কের পাশে এই উপজেলার অবস্থান। উত্তর পাশে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া এবং ফরিদপুর উপজেলা। দক্ষিন পার্শ্বে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলা। পূর্ব দিকে বেষ্টন করে আছে সাঁথিয়া উপজেলা। পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা। আটঘরিয়া উপজেলার আয়তন ১৮৬.১৫ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে ৫ টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা নিয়ে উপজেলাটি গঠিত। চন্দ্রাবতী, ইছামতি, রত্নাই ও চিকনাই আটঘরিয়ার প্রধান নদী। দিঘী গজারিয়া, দিঘীর বিল, বুরামারা, সুতার বিল, চত্রা, জলকা, গুবিদ, গারুল প্রভৃতি নাম ধারন করে এ উপজেলায় রয়েছে কয়েকটি বিল বা জলাশয়। বেরুয়ান জামে মসজিদ, খানবাড়ী মসজিদ, মৃধার মসজিদ, গোড়রী মন্দির, চাঁদভা জমিদার চন্দ্রনাথ সেনের বাড়ী, দেবোত্তর জমিদার বাড়ী, খিদিরপুর রানী ভবানীর কাছারী বাড়ী, শ্রীপুর গোপাল হাজীর বাড়ী সহ নানা ঐতিহ্য আর পুরাকীর্তিতে অনন্য আজকের আটঘরিয়া। চন্দ্রা বিলের প্রাচীন বটগাছ, সড়াবাড়ীয়ার আকাশ ছোঁয়া তালগাছ – জামগাছ আটঘরিয়ার শত বছরের সোনালী দিনের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতিবাহক। যে পমবাহ বা তুলা গাছ থেকে পাবনা নামের উৎপত্তি সেই পমবাহ নামক কার্পাস তুলার প্রথম চাষ আটঘরিয়া থেকেই শুরু হয়। যা জানিয়ে দেয় হাজার বছর ধরে আটঘরিয়া পুরানো দিনের কৃষিপ্রধান জনপদ। ধান, পাট, শিম, পিঁয়াজ, রসুন ও বিচিত্র সবজি এ অঞ্চলের প্রধান ফসল। আটঘরিয়া প্রসিদ্ধ স্থানগুলি হলো – চাঁদভা, বেরুয়ান, সড়াবাড়িয়া, মিয়াপাড়া, আটঘরিয়া, দেবোত্তর, গোড়রী, উত্তরচক, মাজপাড়া, বংশীপাড়া, পারখিদিরপুর, রামেশ্বরপুর, দুর্গাপুর, রামচন্দ্রপুর, একদন্ত, লক্ষীপুর, যাত্রাপুর, ডেঙ্গারগ্রাম, জুমাইখিরি, শিবপুর, বাঐইখোলা, শ্রীপুর প্রভৃতি। আটঘরিয়াকে প্রসিদ্ধি দান করেছে এখানকার বাঁশশিল্প, লোহা শিল্প, বাঁচামারার শাড়ী, পার খিদিরপুর সমবায় মার্কেট, চাঁচকিয়ার লুঙ্গি সহ তাঁত শিল্প, তৈলশিল্প এছাড়া দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ আব্দুল জলিলের কবর, শহীদ আবুল কাশেমের কবর, শহীদ আব্দুল খালেকের কবর, বংশীপাড়া স্মৃতিসৌধ, নাটোরের রানী ভবানীর দানকৃত দেবোত্তর সম্পত্তি, দিঘাপতিয়ার জমিদারের স্মৃতি স্মারক দিঘির বিল, আদর্শগ্রাম, গ্রন্থাগার সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আটঘরিয়াকে গৌরবাম্বিত করেছে।

আটঘরিয়ার কৃতি মানুষদের মধ্য আছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন থানা কমান্ডার অমিতবিক্রমী মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন রেনু, সাবেক সংসদ সদস্য পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. এম ইদ্রিস আলী, ডিজিএফআই এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ,এস,এম নজরুল ইসলাম রবি, দেশখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন ডাঃ লুৎফর রহমান, সরকারী এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যাপক এ,টি,এম ফখরুল ইসলাম সুজা, নাট্য পরিচালক ও ঔপন্যাসিক ড. জহির বিশ্বাস, এডওয়ার্ড কলেজের সাবেক ভিপি এবং বর্তমান ডিপুটি এটোর্নি জেনারেল এডঃ গোলাম মোস্তফা তারা, ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন বাদশা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিসংখ্যানবিদ জগাই মাধাই, শহীদ বুদ্ধিজীবি, লোকসঙ্গীত শিল্পী এম, এ গফুর, পুঁথিপাঠক আবু মুছা, যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্ম জেলা দায়রা জজ সেকেন্দার জুলকার নাইন, উপ সচিব আসাদুজ্জামান, পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম, বারডেম হাসপাতালের খ্যাতিমান চিকিৎসক ডাঃ খাজা নাজিমুদ্দিন, মেজর ফিরোজ, হযরত মাওলানা ইয়াকুব আলী, মাওলানা কবির উদ্দিন, জাতীয় হকি দলের সাবেক অধিনায়ক মোঃ ফারুক আহমেদ, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র ক্যাডার হামিদা খাতুন প্রমুখ। কৈবর্ত বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলনের গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের সাক্ষী আটঘরিয়া। জৈন – বৌদ্ধ – হিন্দু – বৈষ্ণব – ইসলাম – খ্রীস্ট্রান অনেক ধর্মের চিন্তাধারা এখানকার মানুষের প্রানপ্রবাহে মিশে আছে। গুপ্ত – পাল -সেন -পাঠান -মোঘল -বৃটিশ বেনিয়া আর পাকসেনাদের শাসন, শোষনের যে কত কীর্তি যে এই মাটিতে লীন হয়েছে তার সীমা – পরিসীমা নাই। ফকির লালন শাহ,র মত অগনিত সাধু – সন্ন্যাসী, বাউল – বৈরাগী, অলি – আউলিয়া, গাউস – কুতুবদের পদচিহ্ন বুকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী আটঘরিয়া। ১৭৭২ সালে বঙ্গদেশে জেলা ব্যবস্থা উদ্ভব হয়। ১৯২৮ সালের ১৬ অক্টোবর আটঘরিয়া পাবনা জেলার থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ আমলে চলনবিল অঞ্চলে অভয়ারণ্য হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং জনগনের নিরাপত্তা প্রদানের নিমিত্তে আটঘরিয়ায় একটি পুলিশ ফাড়ি নির্মান করা হয়। পরে মাতঙ্গিনী সিংহ নামক এক মহিলা থানার জন্য ১১ বিঘা জমি দান করেন। তাঁর সেই দানকৃত জমির উপর ১৯৩৪ সালে আটঘরিয়া পুলিশ স্টেশন বা থানা ভবন নির্মান করা হয়। ১৯৬২ সালে আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তরে গড়ে উঠে প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র। ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন করে আটঘরিয়া থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। একই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর আটঘরিয়া উপজেলার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং উপজেলার নির্বাহী অফিস সমুহ দেবোত্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে আটঘরিয়ায় সংঘটিত কিছু ঘটনা ইতিহাসে খোদাই করে লেখা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছোট আটঘরিয়াকে অনেক বড় বানিয়েছে। সন্মান আর গৌরব আটঘরিয়াকে ইতিহাসে স্থান করে দিয়েছে। ১৯৭১ সালে ২৮ মার্চ আটঘরিয়া – ঈশ্বরদী আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিন উদ্দিনকে পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। ২৯ মার্চ মালিগাছায় পাকসেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে জেলার প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শহীদ হন, আটঘরিয়া থানার দারোগা আব্দুল জলিল মিয়া। যার কবর দেবোত্তর বাজারে মসজিদের সাথে অবস্থিত। ২২ অক্টোবর বেরুয়ান যুদ্ধ, ৬ নভেম্বর বংশিপাড়া যুদ্ধ, ১১ ডিসেম্বর বেলদহ যুদ্ধ, ১২ ডিসেম্বর আটঘরিয়া থানা আক্রমন ১৩ ডিসেম্বর আটঘরিয়া হানাদার মুক্ত করার ঘটনাগুলি সোনালী ইতিহাস হিসেবে স্থান পেয়েছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মূলতঃ সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়। ২৭ মার্চ পাবনা শহরে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। টানা তিনদিনের যুদ্ধে পাবনায় অবস্থানরত সমস্ত পাকসেনাদের হত্যা করা হয়। সেই যুদ্ধে আটঘরিয়ার বহু তরুন যুবক সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিল। এরপর এপ্রিল মাসের ১০/১১ তারিখ পর্যন্ত্য পাবনা শত্রুমুক্ত থাকে।

এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে পাকসেনারা পাবনা শহর দখল করে ব্যাপক হত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে জুলাই – আগষ্ট মাসে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ বন্যা দেখা দেয়। বর্ষার পানি এসে চারিদিক ডুবিয়ে দিয়েছে। সেই বর্ষায় পাবনা শহরের অনেক রাস্তায় নৌকা চলেছে। একদিকে পানি অন্যদিকে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ ছিল জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। খাবার নাই – আশ্রয় নাই, সে এক বিভৎস চিত্র। এমন প্রতিকুলতায় মানুষের বাঁচার আকুতি – কত মিনতি। প্রতিদিন লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাকসেনা এবং তাদের দোসর রাজাকার – আলবদর – আলশামস বাহিনীর নির্যাতন বেড়ে গেছে। আটঘরিয়া এবং আশেপাশের বহু এলাকায় গনহত্যা, নারী নির্যাতন, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে যাচ্ছে। আটঘরিয়া, দেবোত্তর, গোড়রী, বাঁচামারা,সঞ্জয়পুর, মাজপাড়া, খিদিরপুর, সোনাকান্দর, বংশীপাড়া, লক্ষীপুর, শ্রীপুর ও কৈজুরী প্রভৃতি গ্রামে পাকদোসররা জঘন্য কর্মকান্ড চালায়।

২০ আগষ্ট ১৯৭১ শুক্রবার পবিত্র জুম্মার দিনে লক্ষীপুর, কৈজুরী ও শ্রীপুরে পাকসেনা ও তাদের দোসররা এই গ্রামগুলি ঘেরাও করে গনহত্যা, লুন্ঠন ও নারী নির্যাতন করে। এদিন তারা লক্ষীপুরে হিন্দুপাড়ায় চালায় নারকীয় গনহত্যা। এদিন পাকসেনারা ২৮ জনকে কালীবাড়ির সামনে এনে একসাথে হত্যা করে। নিহতরা হলেন – ১। অধীর চন্দ্র দাস, পিতা – মোহন দাস, ২। অখিল চন্দ্র চন্দ, পিতা – খিতিশ চন্দ্র চন্দ, ৩। অবনী চন্দ্র দাস, পিতা – তারাপদ দাস, ৪। অশ্বিনী কুমার কর, পিতা – অক্ষয় চন্দ্র কর, ৫। অণীল চন্দ্র দাস, পিতা – মেঘলাল দাস, ৬। অমল কুমার হালদার, পিতা – চৈতন্য হালদার, ৭। আশুতোষ দত্ত, পিতা – রতিলাল দত্ত, ৮। কানাই লাল দাস, পিতা – কুশল দাস, ৯। কুশল চন্দ্র পাল, পিতা – মনোহর পাল, ১০। কমল চন্দ্র পাল, পিতা – মনোহর পাল, ১১। গৌর চন্দ্র ভদ্র, পিতা – চন্দন ভদ্র, ১২। গোপাল চন্দ্র দাস, পিতা – মোহন চন্দ্র, ১৩। তারাপদ দাস, পিতা – কালী চরণ দাস, ১৪। তারাপদ হালদার, পিতা – মকুন্দ হালদার, ১৫। ধীরেন্দ্র স্বর, পিতা – রাধাকান্ত স্বর, ১৬। নিজাম উদ্দিন শেখ, পিতা – কুশাই শেখ, ১৭। নিরঞ্জন পাল, পিতা – মনোহর পাল, ১৮। নরেশ চন্দ্র দাস, পিতা – গোর চন্দ্র দাস, ১৯। ব্রজ গোপাল কর, পিতা – সদানন্দ কর, ২০। বিমল চন্দ্র দাস, পিতা – বিষু চন্দ্র দাস, ২১। ভাদু মোল্লা, পিতা – জুব্বার মোল্লা, ২২। মোহন দাস, পিতা – মিরন দাস, ২৩। সূর্য কান্ত দাস, পিতা – যুগল কান্ত দাস, ২৪। সদানন্দ কর, পিতা – রমানন্দ কর, ২৫। সনাতন দত্ত, পিতা – রসিক দত্ত, ২৬। সুরেন্দ্র নাথ দাস, পিতা – মেঘলাল দাস, ২৭। হারান হালদার, পিতা – রসিক লাল হালদার, ২৮। রতিলাল দত্ত, পিতা – গরানাথ দত্ত । এছাড়া একইদিন পাকসেনারা শ্রীপুর বাজারে লক্ষীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং দেশখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ এম, এ, গফুরকে হত্যা করে।

এমনি একটি সময় আনোয়ার হোসেন রেনু’র নেতৃত্বে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা আটঘরিয়ায় প্রবেশ করেন। এই দল ছিল মুক্তিযোদ্ধা দের অগ্রগামী দল। এরা ছিল পিসি ( পলিটিক্যাল কমান্ডো) বা মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত। এদের প্রাথমিক কাজ ছিলো এলাকার তরুন যুবকদের সংঘটিত করা এবং জনসাধারনকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনা। এই দলটি মাজপাড়া ও চাঁদভা ইউনিয়নে অবস্থান করে স্থানীয় তরুন যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং প্রদান, অস্ত্র সংগ্রহসহ ছোট বড় বিভিন্ন অপারেশন শুরু করে। পরে পাবনার ময়নামতি গ্রামের শাহজাহান আলী ও ঈশ্বরদীর ওয়াছেব এর নেতৃত্বে দুটি দল আটঘরিয়া এলাকায় অবস্থান গ্রহন করে বেরুয়ান ও বংশিপাড়া যুদ্ধে অংশ নেন। ২২ অক্টোবর বেরুয়ান যুদ্ধে রাজাকার কমান্ডার মমিন সহ নয়জনকে হত্যা করা হয়। উক্ত যুদ্ধে তোয়াজ উদ্দিন এবং হায়দার আলী নামে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া ৬ নভেম্বর বংশিপাড়া যুদ্ধে পাকবাহিনীর দলপতি ক্যাপ্টেন তাহের সহ ১৩ জন পাকসেনা নিহত হন। অপরদিকে ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এদিন আটঘরিয়ার মুজিব বাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন রেনু, মুলাডুলির ইউনুছ ( মুজিব বাহিনী) এবং ঈশ্বরদীর ওয়াছেব বাহিনীর ডিপুটি কমান্ডার জয়নাল আবেদীন এর নেতৃত্বে প্রায় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা বংশিপাড়ায় একত্রিত হন। তারা এই সিদ্ধান্ত নেন যে, এই অল্প সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার দল নিয়ে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধে ঠিক হবে না। তাই তারা চন্দ্রাবতী নদীর পশ্চিম কূল ধরে হেঁটে একটা নিরাপদ স্থানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। হঠাৎ তারা লক্ষ্য করেন হানাদার বাহিনী নদীর পূর্বকূল ধরে এগিয়ে আসছে। হানাদার বাহিনী ৫০-৬০ গজ দুরত্বে এসে পৌছালে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। সকাল ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত্য একটানা ২ ঘন্টা তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

বংশিপাড়া যুদ্ধে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন তাহেরসহ ১৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। অন্যদিকে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। একটানা ২ ঘন্টা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিযোদ্ধারা ধীরে ধীরে নিরাপদ স্থানে সরে পড়লে পাকবাহিনী বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এ সময় তারা বহু বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয়। তাদের দলের অনেক সদস্য হতাহতের কারনে তারাও দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। সেদিন বংশিপাড়া যুদ্ধে যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন : ১। শহীদ আবুল কাশেম, পিতা – সাহের প্রাং, গ্রাম – বেরুয়ান, আটঘরিয়া, ২। শহীদ আব্দুল খালেক, পিতা – শেখ আব্দুল হক, গ্রাম – মাজপাড়া, আটঘরিয়া, ৩। শহীদ ইউনুছ আলী, পিতা – আফিল উদ্দিন প্রাং, গ্রাম – মুলাডুলি, ঈশ্বরদী, ৪। শহীদ মোঃ শহিদুল ইসলাম, পিতা – তৈয়ব আলী মন্ডল, গ্রাম – দাদাপুর, ঈশ্বরদী, ৫। শহীদ মুনসুর আলী পিতা – ইসহাক আলী, গ্রাম – তিলকপুর, ঈশ্বরদী, ৬। শহীদ আব্দুল মালেক, পিতা – মফিজ উদ্দিন খাঁ, গ্রাম – রুপপুর, ঈশ্বরদী ৭। শহীদ আব্দুস সাত্তার, পিতা – আব্দুর রহমান বিশ্বাস, গ্রাম – নুতন রুপপুর, ঈশ্বরদী ৮। শহীদ আব্দুর রশীদ, পিতা – রহমত আলী প্রাং, গ্রাম – বিলকাদার, ঈশ্বরদী ৯। শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, পিতা – আমিন উদ্দিন প্রাং, গ্রাম – বিলকাদার ১০। শহীদ নায়েব আলী, পিতা – জাফর উদ্দিন প্রাং, গ্রাম – লক্ষীকুন্ডা, ঈশ্বরদী। এছাড়া যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধা হলেন, জয়নাল আবেদীন এবং মোজাহার আলী। তারা ঈশ্বরদীর বিলকাদার গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া সেদিন পাকসেনা ৭ জন নীরিহ গ্রামবাসীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। নিরীহ গ্রামবাসীদের মধ্যে ছিল, ইসাহাক আলী মোল্লা, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল মান্নান, হাচেন আলী, আফজাল আলী, আব্দুল বারী এবং নুর আলী। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আটঘরিয়ার বাঁচামারা গ্রামের মোঃ মোন্তাজ আলীর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা চাঁপাই নবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ করে আটঘরিয়ায় আসেন। ঐ দলের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা তোতা মিয়া চাঁপাই নবাবগঞ্জের রোহনপুর মহদীপুর যুদ্ধে শহীদ হন। নভেম্বরের প্রথম দিকে চাটমোহরের এম আই চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল আটঘরিয়ায় আসে। যারা ১২ ডিসেম্বর আটঘরিয়া থানা আক্রমণ করেন। এছাড়া নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার আব্দুল মান্নান গোরার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা আটঘরিয়ার সড়াবাড়িয়া ও মিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে অপারেশনে অংশ নেন। আটঘরিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বংশীপাড়া এবং বেরুয়ানের যুদ্ধ সহ উপরে উল্লেখিত ঘটনাগুলি বিশেষভাবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উপরিল্লেখিত ঘটনাটুকু হলো গৌরবময়।

পরিতাপের বিষয় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এ ইতিহাস সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। গত ৪৭ বছরে এই গৌরবময় ইতিহাসকে নানাভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছে। বংশিপাড়া যুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থলকে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিকে গনকবর উল্লেখ করা হয়েছে। ১০ জন শহীদের পরিবর্তে ১৩ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা করে স্মৃতিসৌধ তার নামে নামকরন করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে গত কয়েক বছর যাবত জাতীয় দিবস ( স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস) দায়সারা করে পালন করা হলেও ৬ নভেম্বর ” বংশিপাড়া যুদ্ধদিবস ” পালন করা হতোনা। গত ২ বছর দুইটি সংগঠন আলাদা ভাবে পালনের উদ্যোগ নিলেও সরকারী ভাবে পালন করা উচিত। আটঘরিয়ায় ভারতীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪৭ জন। এছাড়া উপজেলার অভিরামপুর গ্রামের আজিজুর রহমান ফনি এবং রতিপুর গ্রামের আবুল হোসেন প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারী হিসেবে তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১৫৬ জন। অপ্রিয় সত্য হলো এই তালিকায় অনেকেই আছেন যাদের মুক্তিযুদ্ধে সংশ্রব ছিলোনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গেলে অনেক কিছু অসম্পুর্ন থেকে যায়। অনেক মিথ্যা এতদিনে স্থায়ীত্ব পেয়েছে। আবার অনেক সত্য প্রকাশ করা কঠিন।

আটঘরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকবাহিনীর দোসর ছিল তাদের অনেকের নাম লেখা বা বলা খুবই কঠিন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আটঘরিয়ায় স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। শান্তিবাহিনী, রাজাকার, আলবদরদের কোন তালিকা আজও প্রকাশিত হয়নি। আটঘরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের যেমন আলোকময় ইতিহাস আছে তেমন অন্ধকার কালো ইতিহাসও আছে। যেগুলো বর্তমান প্রজন্মের জানা দরকার। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পাশ্ববর্তী সাঁথিয়া উপজেলায় জন্ম নিলেও তাঁর কিশোর, তরুন ও যুবককালে একটা সময় এই আটঘরিয়াতে কাটিয়েছেন। সে আটঘরিয়ার শিবপুরে অবস্থিত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। পাবনা আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইসাহাক ১৯৭১ সালে মালেক মন্ত্রীসভার শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। যিনি আটঘরিয়ার সড়াবাড়ীয়া ঈদগাহ মাঠে বহু বছর যাবত নিয়মিত ঈদের নামাজ পড়াতেন। মন্ত্রী হওয়ার কয়েক দিন আগেও ঈদের নামাজ পড়িয়েছেন। দেবোত্তর ইউনিয়নের ধলেশ্বর গ্রামের মাওলানা বেলাল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হয়েছিলেন। ডিসেম্বর মাসে বিজয় অর্জনের পূর্বে বুদ্ধিজীবি নিধনের অন্যতম ঘাতক ছিলেন। কথিত অভিযোগে প্রকাশ তার বিভাগের শিক্ষককে বাড়ী থেকে ধরে এনে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে। মাওলানা বেলাল বুদ্ধিজীবি হত্যা মামলায় ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত্য পাবনা জেলখানায় বন্দী ছিল। দেবোত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মোল্লা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলো। তার বিরুদ্ধেও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে গুরুত্বর অভিযোগ ছিল। সে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাবনায় মুসলিমলীগ প্রধান ক্যাপ্টেন জায়েদীর অন্যতম সহযোগী ছিল। সে স্বাধীনতার পর পালিয়ে যায় এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর এলাকায় আসেন। মুক্তিযুদ্ধে আটঘরিয়ায় শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন, দেবোত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ খান। সেক্রেটারি ছিলেন একই ইউনিয়নের উত্তরচক গ্রামের আবু বক্কার ওরফে বাক্কু কেরানী। সদস্য ছিলেন, চাঁদভা ইউনিয়নের রস্তমপুর গ্রামের মৌলনা আব্দুল লতিফ, কুষ্টিয়াপাড়ার সদর উদ্দিন, বাঁচামারা গ্রামের সাহাজ উদ্দিন মোল্লা, ধলেশ্বর গ্রামের আমির উদ্দিন, বিশ্রামপুর গ্রামের মৌলনা তোরাব আলী, শিবপুর গ্রামের জহির উদ্দিন, লক্ষীপুর গ্রামের ডাঃ সিরাজুল ইসলাম, রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার, বেলদহ গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন। এদের মধ্য যুদ্ধ চলাকালীন রুস্তমপুর গ্রামের মৌলনা আব্দুল লতিফকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা শান্তি কমিটির সেক্রেটারী আবু বক্কর ওরফে বাক্কু কেরানীকে হত্যা করে। বাকী বেশীরভাগ সদস্যকে দালাল আইনে আটক করে জেলে রাখা হয়েছিল।

একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মের জানা দরকার আটঘরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। যথাযথ সন্মান জানানো দরকার সেই যুদ্ধে অংশ নেওয়া সকল বীরযোদ্ধাকে। স্বাধীনতা অর্জনের এতদিন পরও কিছু কিছু কারনে অভিমান, কিছু হতাশা মনের কোনে উঁকি দেয়। প্রতিবছর সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা এবং বিজয় দিবস পালন করা হয়। জাতীয় দিবসগুলি পালনে সময়সূচী অসম। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভোরে পুষ্পস্তবক দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হলেও মফস্বল শহরগুলিতে রাত ১২-০১ মিনিটে করা হয়। অথচ দিবসগুলির সূচনা একই সময় হওয়া দরকার। দিবসগুলির কর্মসূচীতেও পরিবর্তন প্রয়োজন। পাকিস্তান আমলে যেভাবে জাতীয় দিবস উদযাপন করা হতো সেই একই ছকবাঁধা নিয়ম। ৩১ বার তোপধ্বনি, জেলা – উপজেলা মাঠে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের মার্চপাস্ট ও কুচকাওয়াজ প্রদর্শন, ডিসি- এসপি, ইউএনও – ওসিদের সালাম প্রদান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, জেলখানা – এতিমখানায় বিশেষ খাবার প্রদান ইত্যাদি। এছাড়া সংবর্ধনার নামে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে একটি করে রজনীগন্ধা স্টিক বা নামমাত্র একটি উপহারের প্যাকেট দেওয়া হয়। এ সব বিষয়গুলি নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার। দিবসগুলির সাথে সংগতি রেখে কর্মসূচী প্রণয়ন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ, দেশাত্মবোধক গানের আয়োজন করা প্রয়োজন।

অনতিবিলম্বে দেশের সকল জেলা, উপজেলা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরকারী উদ্যোগে ” স্মৃতি কমপ্লেক্স ” স্থাপন করা দরকার। অভিন্ন নক্সায় যেখানে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার এবং জাতির জনকের প্রতিকৃতি। যেখানে জাতীয় দিবসগুলিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আটঘরিয়ায় কাপড় দিয়ে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ বানিয়ে সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। যা পরিবর্তন হওয়া অতি জরুরী। আটঘরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল এবং বধ্যভূমিগুলি চিহিৃতকরন, ফলক উন্মোচন ও সংরক্ষন করা দরকার। আটঘরিয়ায় শহীদ আব্দুল খালেক এবং শহীদ তোয়াজ উদ্দিনের নামে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামকরণ করা হলেও বাঁকী চারজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে কোন প্রতিষ্ঠান নামকরণ এর উদ্যোগ নাই। অবিলম্বে বাঁকী চারজন শহীদ মুক্তিযােদ্ধার মধ্য শহীদ আবুল কাশেম এর নামে সড়াবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ হায়দার আলীর নামে কয়ড়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ তোতা মিয়ার নামে বিএলকে উচ্চ বিদ্যালয় এবং শহীদ আব্দুল জলিল এর নামে দেবোত্তর বালিকা বা মতিঝিল উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করে আটঘরিয়ার মাটিতে এই বীরদের নাম অক্ষয় করে রাখা যেতে পারে। যা শুধু শুভচিন্তা বা আন্তরিক উদ্যোগ নিলেই সম্ভব। আশাকরি রাষ্ট্র, সরকার, সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী সকলে বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন। মুক্তিযুদ্ধ হোক আমাদের জাতীয় চেতনার মূল উৎস। শহীদ স্মৃতি অমর হোক – মেহনতি জনতার জয় হোক। জয় বাংলা।
। সমাপ্ত ।

লেখক পরিচিতি – আমিরুল ইসলাম রাঙা, প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য, আটঘরিয়া প্রেসক্লাব এবং প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।

তথ্যপ্রাপ্তি ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার –

১। তথ্য বাতায়ন, জেলা প্রশাসন, পাবনা।
২। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, লক্ষনপুর, আটঘরিয়া, পাবনা।
৩। আটঘরিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটি কর্তৃক প্রকাশিত ” চন্দ্রাবতী ” স্মরণিকা।
৪। মোঃ শফিউল্লাহ, সভাপতি, প্রজন্ম ‘৭১, আটঘরিয়া,পাবনা।
৫। মোঃ জাহিদুল ইসলাম ( যাহিদ সুবহান) সংস্কৃতি কর্মী, কার্যকরী সদস্য, পল্লী পাঠাগার, মিয়াপাড়া, আটঘরিয়া, পাবনা।