মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা: মানুষের কিছু অপরাধ এতটাই চরম পর্যায়ের যে মহান আল্লাহ সেই অপরাধীদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন। এর মধ্যে একটি অপরাধ হলো মানুষের সঙ্গে অহেতুক শত্রুতা করা। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের সঙ্গে শত্রুতা করা ও তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করা আত্মঘাতী। কারণ এ ধরনের লোকদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাদের ব্যাপারে মিথ্যা ছড়ানো আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর নামান্তর। প্রশ্ন জাগতে পারে, কারা সেই লোক, যাদের সঙ্গে শত্রুতা রাখা এতটা ভয়ংকর।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ওলিদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে, ‘(তারাই আল্লাহর ওলি) যারা ইমান আনে এবং তাকওয়া (পরহেজগারি) অবলম্বন করে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ওলি হলেন আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনরা, যাঁরা বিনয়াবনত হয়ে নামাজ আদায় করেন ও জাকাত দেন।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫৫)
ওলি কাকে বলে?
‘ওলি’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ অভিভাবক, মুরব্বি, বন্ধু। আরবি ভাষায় ‘আউলিয়া’ শব্দটি ‘ওলি’র বহুবচন। শব্দগতভাবে কখনো কখনো ওলি শব্দের অর্থ করা হয় শাসক, অভিভাবক বা কর্তা।
উপরোক্ত আয়াতে ইমানদার ও মুত্তাকিদের আল্লাহর ওলি বলা হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক হাদিসে ওলিদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। হজরত সাইদ ইবনে জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর ওলি কারা?’ মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যাদের দেখলে আল্লাহর কথা মনে হয়।’ (ইবনে মাজাহ, ইবনে কাসির)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা নবীও নয়, শহীদও নয়। কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদরা তাদের ওপর ঈর্ষা করবেন।’ মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহর জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে নেই কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক, নেই কোনো ধনসম্পদের সম্পর্ক। (কিয়ামতের দিন) তাদের চেহারা হবে নুরানি (উজ্জ্বল)। তারা নুরের মিম্বারের ওপর থাকবে। যখন মানুষ ভয় পায় তখন তারা ভয় পাবে না। যখন মানুষ দুঃখ পায় তখন তারা দুঃখ পাবে না।’ তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) ওপরে উল্লিখিত আয়াত পাঠ করেন। (আবু দাউদ ও তাফসিরে মুনির)
উল্লিখিত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ইসলামী শরিয়তের পরিপূর্ণ অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর ওলি হওয়ার সুযোগ নেই। যেসব লোক পীর, ফকিরের বেশ ধারণ করে, অথচ তারা ইসলামের বিধি-নিষেধ মেনে চলে না, তারা কিছুতেই আল্লাহর ওলি হতে পারে না। তারা ইসলামের প্রতিনিধি নয়। তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।