মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি ঃ
দেশের নদীবিধৌত জেলাগুলো বানের জলে ভাসছে চলনবিল এলাকার দক্ষিণ অঞ্চলের জলাশয় গুলোতে পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি। ফলে পাট চাষীদের পাট জাগ দিতে কোন বেগ পেতে হচ্ছে না।
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় এবছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি হাট বাজারে পাটের বাজারও বেশ ভালো দাম। চাটমোহর পৌর সভার নতুন বাজার হাটে, রেলবাজার (অমৃত্তকুন্ড) হাটে, মির্জাপুর হাটে সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর পরিমানে পাটের আমদানি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর জেলার ৯টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাট কাঁটা জাগ দেওয়া, ধোয়া এবং শুকানোর পাশাপাশি বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে উপজেলায় পাট ধোয়া শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।
চাটমোহর উপজেলা মথুরাপুর ইউনিয়নের জবেরপুর গ্রামের পাট চাষি আব্দুল গণি বলেন, এ বছর তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। এখন বাজারে নি¤œমানের যেটা তার দাম ১৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দর, ভালো মানের ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর একটু দাম পেলে, আর একটু ভালো হতো।
উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের চড়পাড়া গ্রামের পাট চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এক একর জমিতে ৩০ থেকে ৪০ মন পাট উৎপাদন হচ্ছে। এবছর অধিকাংশ জমিতে পাটের ভাল ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২মন পাট উৎপাদক হয়। যা গত বছরের চেয়ে এবছর বেশি উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়াও পাটের বাজারও বেশ ভাল। তবে বর্তমানে উপজেলার হাট বাজারে প্রতি মন পাট বিক্রি হচ্ছে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে চাষিরা যথা সময়ে পাট ধুয়ে ঘরে তুলতে পারছে না।
একই গ্রামের সাইফুল মেম্বর বলেন, এবছর আমি ৫ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে পাট ধুয়া ব্যাহত হচ্ছে। শ্রমিককে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে পুষিয়ে যাচ্ছে পাটের দাম ভালো বলে।
ছোটগুয়াখড়া গ্রামের পাট চাষি জয়নাল হোসেন বলেন, তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। পাট কাটতে শ্রমিকরা বিঘা প্রতি দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা করে নিচ্ছে। জাগ দিতে প্রতি আঁটি দুই টাকা ও ধুতে প্রতি আঁটি তিন টাকা করে নিচ্ছেন। শুরু থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘা পাট চাষে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। পাট হয় ১০ থেকে ১২ মণ। এখন পাটের যে বাজার মূল্য আছে, তাতে কিছুটা লাভ থাকবে। বাজার পড়ে গেলে লাভ থাকবে না।
উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান রশীদ হোসাইনী বলেন, এ বছর পাটের দামও ভালো আছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন। বর্তমানে শ্রমিকরা কাজের প্রতি উদাসিনতা হয়ে পড়েছে। তারা অটোবাইক ও ভ্যান সহ বিকল্প কর্মকরে জীবিকা নির্বাহ করছে। তিনি আরো বলেন গত বছরের চেয়ে এবছর বেশি পাট আবাদ হয়েছে।