প্রান্ত সাহা বিভাস.কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্থ পল্লী সড়ক পুর্নবাসন প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনার কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কের সংস্কারকাজ বন্ধ থাকায় পথচারী ও চানবাহন চালকদের চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির সংস্কারকাজ প্রায় বছর খানেক আগে শুরু হলেও এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদকাল চলে গেছে মাস দুইয়েক আগে। এনিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।
স্থানীয়রদের দাবি-ঠিকাদারের চরম গাফিলতি এবং সড়ক সংস্কারকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই সড়কে জনদুর্ভোগ।
এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনার কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কটি গত বছরের মে মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। আর সড়কটির দৈঘ্য ২৪.৬৮ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮ ফুট। প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। পরে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে চলতি বছরের ৬ মে তা শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু টিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা করেনি। ওই সংস্কার কাজে দুইটি প্যাকেজের মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার অংশে নাজিরপুর পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার এবং নাজিরপুরের পর থেকে দুর্গাপুর উপজেলার অংশে ১০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। কলমাকান্দা অংশে উপজেলা পরিষদের মোড় থেকে বরদল বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটারের কিছু বেশি সংস্কার করে বাকি কাজ অন্তত দেড় মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক ছয় ইঞ্চি মেকাডাম করে ফেলে রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি এভাবে পড়ে থাকায় সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ওই সড়কটিতে বৃষ্টির পানি জমে ছোটবড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুই উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটিতে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন নিয়ে চলাচলকারী চালক ও পথচারীরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ব্যস্ত ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষ চলাচল করে। এ ছাড়া স্কুল কলেজে যাওয়া-আসা করে সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী।
শুক্রবার সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উপজেলার বরদল এলাকার পর থেকে ভোগান্তির শুরু। ভাঙা সড়কের কারণে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তে জমাবদ্ধ পানিতে আটকা পড়ে রয়েছে বিভিন্ন যানবাহন। চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ- সড়কটি সংস্কারের নামে আরো দুর্ভোগ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারকাজ ফেলে রাখায় সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলার নলছাপ্রা গ্রামের সিএনজি চালক মো. রাসেল বলেন, সিএনজিতে করে আগে দুর্গাপুর থেকে কলমাকান্দায় সর্বোচ্চ আধাঘণ্টায় পৌঁছা যেতো। কিন্তু এখন দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।
চান্দুয়াইল গ্রামের বাসিন্দা মো. রজব আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কের সংস্কারকাজ এভাবে ফেলে রাখায় আমাদেরকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
কলমাকান্দার বাজারের ব্যবসায়ী সুজন সাজা বলেন, এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণেই এমনটি হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলে এমনটি হতো না।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কটি দ্রুত সংস্কার করতে সংশিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. জামালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এলজিইডির কলমাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে এ পর্যন্ত ছয়বার নোটিশ দিয়েছি। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন সাড়া না দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।