‘ডাক্তার কখন আসবেন?’ কেউ জানে না ।

আসে না ডাক্তার ফিরে যায় রোগী

ঘড়িতে বাজে বেলা ১১ টা ৩০ মিনিট । নাটোর আধুনিক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ এইচ এম আনিসুজ্জামান এবং ডাঃ রবিউল আওয়ালের চেম্বারের সামনে দীর্ঘলাইন । মেডিসিন বিভাগের সামনে শতাধিক রোগীকে বসে থাকতে দেখা যায়; কিন্তু মেডিসিনের চিকিৎসক নেই। চিকিৎসকের কক্ষের ভিতরে একজন ইন্টার্নী চিকিৎসক মুঠোফোনে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত ।। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই ডাক্তার কখন আসবেন ? নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক উনি বললেন,,,, কখন যে আসে ভাই বলতে পারিনা ? মন যখন চাই তারা দুইজন আসেন । যান ।৩০ মিনিট বা এক ঘন্টার জন্য আসেন ।তারপরে নিজেদের প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান । কেউ বলারও নেই ।।দেখারও কেউ নেই । তারা হাসপাতালের চেম্বারে বসার চেয়ে হেমাঙ্গিনী ব্রীজ সংলগ্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগণষ্টিক চেম্বারে বসে বেশি।।

বৃহস্পতিবার সকালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ এইচ এম আনিসুজ্জামান এবং ডাঃ রবিউল আওয়ালের চেম্বারের সামনে গিয়ে কথা হয় জেলার লালপুর উপজেলার গৌরিপুরের ষটোর্ধ তৈয়ব আলীর সাথে । তিনি জানান,‘রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম । ছেলেরা ভোরে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে ।এখন বাজে ১১ টা দুই মেডিসিন বিশেষজ্ঞের একজনও আসেনি ।।

এ রোগীর পাশেই চেয়ারে বসে কাতরাচ্ছেন সুফিয়া খাতুন (৪০)। তিনি অনেক কষ্টে বললেন, ‘বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল। সকাল সাড়ে ৮টায় এসে ডাক্তার দেখানোর জন্য টিকিট কেটে বসে আছি; কিন্তু ডাক্তার আসেননি।’
এখানে আরো কথা হয় বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল আলীর (৪৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টায় বুকের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। ৮টায় পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছি। ১১টা পর্যন্ত সামনে বসে আছি; কিন্তু আমার ডাক্তার আসেননি।’
সকাল ১১টার দিকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ রবিউল আওয়ালের চেম্বারের সামনে কথা হয় নাটোর এন এস কলেজের ছাত্র আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর খুব শ্বাসকষ্ট। তিনি বলেন, ‘টিকিট কেটে বসে আছি; কিন্তু ডাক্তারের দেখা পাইনি। কখন পাবেন তা কেউ বলতে পারেনা ।।
ফরিদা বেগম ক্ষোপ প্রকাশ করে বলেন, সকাল ৯ টা থেকে অপেক্ষা করতেছি এখন ১১ টা বাজে এখনো ডাক্তার আসার কোন নাম নেই।টাকার অভাবে শহরের গিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে দেখানো তো আমাদের পক্ষে সম্ভব না তাই এখানে আসি সরকারি সেবা নিতে। আর এখানে এসে চিকিৎসাসেবা পেতেও দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
জনগণ অন্যান্য সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা পেলেও সময়মত ডাক্তার না আসায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাটোরের নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষ। কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকার জন্য সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকার পরও তোয়াক্কা করছেন না এখানকার চিকিৎসকরা। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই নাটোরের মানুষদের।