নওগাঁ প্রতিনিধি : আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নওগাঁর মহাদেবপুরে পশুর হাটে ইজারাদারদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সরকার নির্ধারিত ‘খাজনা’র (টোল) চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ কুরবানির পশু কিনতে আসা ক্রেতাদের। একই সঙ্গে হাটের পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এ ছাড়া নিয়ম থাকলেও উপজেলার কোনো পশুর হাটেই টাঙানো হয়নি সরকার নির্ধারিত টোল তালিকা। ফলে পশু কিনতে আসা ক্রেতারা অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অতিরিক্ত খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে রশিদ লেখকদের সঙ্গে প্রায়ই ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাকবিত-ার ঘটনা ঘটছে।
উপজেলা প্রশাসনের হাটবাজার শাখা সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি গরু ৪০০ টাকা ও প্রতিটি ছাগল-ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়। গবাদি পশুর ক্ষেত্রে শুধু ক্রেতা টোল দেবেন। শুধু ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও মাতাজি ও চকগৌরী হাটের ইজারাদারের লোকজন বিক্রেতাদের কাছ থেকেও গরু প্রতি ২০ টাকা আদায় করছেন।
স্থানীয়রা জানায়, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে নওগাঁয় গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট জেলার বড় বড় হাট ইজারা নিয়ে নেয়। এরপর একই কায়দায় নির্ধারিত টোলের চেয়ে সব খানেই বেশি টাকা আদায় করেন। বিশেষ করে দুই ঈদের সময় টোলের পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়িয়ে আদায় করা হয়। অতিরিক্ত হারে টোল আদায় চললেও যেন দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের রহস্যজনক নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় সচেতন মহলে। তারা এ অনিয়ম বন্ধের জন্য কতৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান কামনা করেন।
গত কাল বুধবার মাতাজি হাটে প্রতিটি গরুর জন্য ৫’শ টাকা করে টোল আদায় করা হয়েছে। যা সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে ১’শ টাকা বেশি। এছাড়া শতকরা ১০ টাকা হিসেবে প্রতিটি ছাগলের জন্য সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করতে দেখা গেছে। যত মূল্যেরই গরু হোক না কেন, প্রতিটি গরুর জন্য ৫’শ টাকা টোল নেয়া হলেও ১০ কিংবা ১২ হাজার টাকা মূল্যের ছাগলের জন্য টোল নেয়া হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা। প্রতি হাটে গরু, ছাগল ক্রয় করে খাজনা’র (টোল) টাকা দিতে গিয়ে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে।
গত রোববার চকগৌরী হাটে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি ভাবে খাজনা আদায়ে গরু ৪’শ টাকা এবং ছাগল ১’শ ৫০ টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। গরু ৪’শ ৫০ টাকা এবং ছাগলের শতকরা ১০ টাকা হারে ক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। আবার রশিদে খাজনা লেখার জায়গা থাকলেও সেখানে লেখা হচ্ছেনা। এছাড়া লেখনির জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে আরো ২০ টাকা।
গত শনিবার মহাদেবপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গরু প্রতি ৪’শ ৫০ টাকা ও ছাগল প্রতি ৩’শ টাকা খাজনা নিচ্ছে ইজারাদার। এদিকে খাজনা (টোল) আদায়ের তালিকা প্রকাশ্য স্থানে টাঙানোর নিয়ম থাকলেও মহাদেবপুর, মাতাজি ও চকগৌরী হাটে তা দেখা যায়নি।
মাতাজি হাটে ছাগল কিনতে আসা উপজেলার দাড়সা গ্রামের আল-মামুন জানান, তিনি ৮ হাজার টাকায় একটি একটি ছাগল ক্রয় করেছেন। তাকে খাজনা দিতে হয়েছে ৮’শ টাকা। মাতাজি হাটে ছাগল কিনতে আসা আরেক ক্রেতা নওগাঁ সদর উপজেলার কসবা গ্রামের আতিকুল ইসলাম জানান, ৬ হাজার টাকায় ছাগল ক্রয় করে তাকে ৬’শ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে।
চকগৌরী হাটে গরু বিক্রি করতে আসা জেলার বদলগাছী উপজেলার ভরট্ট গ্রামের আতিকুর রহমান জানান, তিনি একটি বোকনা গরু বিক্রি করেছেন। লেখনি বাবদ ২০ টাকা দিতে হয়েছে। উপজেলার পাতনা গ্রামের খাইরুল জানান, ৩২ হাজার টাকা দিয়ে একটি বোকনা গরু কিনেছেন। তার কাছ থেকে খাজনা বাবদ ৪’শ ৫০ টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু রশিদে খাজনার জায়গায় কোন টাকা লিখা হয়নি।
আব্দুর রহমান নামে এক পশু ব্যবসায়ী জানান, সরকারি যে নিয়ম আছে সে মোতাবেক কোন টাকা নেয়া হয়না। এক প্রকার জোর করেই টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। আবার রশিদের খাজনার জায়গা থাকলেও টাকার অঙ্ক লিখা হচ্ছেনা। চকগৌরী হাটের রশিদ লেখক মান্নান হোসেন জনান, সচরাচর ৪’শ টাকা নেয়া হয়। তবে ঈদের জন্য ৫০ টাকা করে বেশি নেয়া হচ্ছে। খাজনা আদায়ের জায়গায় টাকার অঙ্ক লিখা হচ্ছেনা কেন তার কোন উত্তর তিনি দেননি। চকগৌরী হাটের খাজনা আদায়ের তদারককারী মুক্তার হোসেন জানান, খরচাপাতির জন্য সরকারি টোল থেকে একটু বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে।
মাতাজি হাটের ইজারাদার মাজেদ উদ্দীনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত টোল আদায়ের কথা অস্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে তিনি সাক্ষাতে কথা বলতে চান। ফোনে সব কথা বলা ঠিক না জানিয়ে প্রতিবেদককে শনিবারে তাঁর সাথে মহাদেবপুর হাটে সাক্ষাৎ করতে বলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি হাট মালিকদের বলেছেন কোন ক্রমেই অতিরিক্ত টোল আদায় করা যাবে না। আদেও অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে কিনা দু’একদিনের মধ্যে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।