প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের মতো সাংবিধানিক পদের পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা না দিয়ে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের সঙ্গে আছেন ইসির সচিবসহ পদস্থ কর্মকর্তারা। আর এই অর্থের পরিমাণ একেবারে কম নয়, দুই কোটি টাকার বেশি।
বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এরপরে উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণ উপলক্ষে শুধু ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বক্তৃতা দিয়ে তাঁরা এই অর্থ নিয়েছেন। আর এর বাইরে ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন সচিব (বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব) একাই নিয়েছেন ৪৭ লাখ টাকা। তিনি ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবেও টাকা নিয়েছেন। তবে তা কত জানা যায়নি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন ৬১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। আর উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার নামে যাঁরা টাকা নিয়েছেন তাঁরা হলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা; চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও কবিতা খানম; সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ; অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান এবং দুই যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম ও কামরুল হাসান। উপজেলা নির্বাচনে ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেব এর সঙ্গে আরও চারজন যুগ্মসচিব যুক্ত হয়েছেন। এদিকে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে একটি প্রশিক্ষণ থেকে ‘কোর্স পরিচালক’ হিসেবে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক নিয়েছেন ১৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ ‘বিশেষ বক্তা’, ‘কোর্স উপদেষ্টা’ ও ‘কোর্স পরিচালক’ হিসেবে তাঁদের পকেটে গেছে দুই কোটি টাকার বেশি।
এভাবে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিইসি ও চার কমিশনারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি।
বিগত সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ বক্তা’র একটি প্যানেল গঠন করা হয়। এতে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের উচ্চপদস্থ ১৩ কর্মকর্তা। আর ‘কোর্স উপদেষ্টা’ নামে আরেকটি পদ সৃষ্টি করে তাতে পদায়ন করা হয় সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে।
ইসি সচিবালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় নয়জন ‘বিশেষ বক্তা’ ১৮ দিনে (৭ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮) জেলা ও উপজেলার ৫২০ জায়গায় বক্তৃতা দিয়েছেন। প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চারজন ‘বিশেষ বক্তা’র উপস্থিত থাকার কথা। ফলে সাধারণ পাটিগণিতের হিসাবে প্রত্যেক ‘বিশেষ বক্তা’কে দিনে কমপক্ষে ১৪টি স্থানে বক্তৃতা দিতে হয়েছে। বাস্তবে যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ থেকে বোঝা যায়, বক্তৃতাস্থলে উপস্থিত না থেকেই তাঁরা টাকা নিয়েছেন। এভাবে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় যাঁরা অর্থ নিয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ সম্মানী ভাতা ফেরত পাঠাতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
ইসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের এভাবে অর্থ নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসির ইতিহাসে এমন ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণ হয়নি। আমাদের সময়ে সিইসি, আমি ও অন্য কমিশনাররা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণে বক্তৃতা দিয়েছি। কিন্তু কোনো ভাতা নিইনি। এমনকি সচিবও বক্তৃতা দিয়ে ভাতা নিতেন না। সে রকম রেওয়াজও ছিল। এবার যা ঘটেছে সেটা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ছাড়া আর কিছুই নয়। এ জন্য অবশ্যই জড়িতদের দায় নিতে হবে।’
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য অতীতে ‘বিশেষ বক্তা’ বা ‘কোর্স উপদেষ্টা’ বলে কিছু ছিল না। গত নির্বাচনের সময় এসব সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল অবৈধভাবে টাকা নেওয়ার জন্য।
এ বিষয়ে জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হলে নির্বাচন কমিশন থেকে কিছু তথ্য দেওয়া হয়। তবে ‘বিশেষ বক্তা’রা কে কত টাকা নিয়েছেন তার হিসাব দেয়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা এ তথ্য জানাননি।
ইসির নথিতে আছে, সিইসিসহ এই কর্মকর্তারা ১৮ দিনে ৫২০টি স্থানে বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু প্রথম আলো ছাড়াও জনকণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ ও ডেইলি স্টার ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৭ থেকে ২৪ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে সিইসি দুবার ঢাকার বাইরে যান। ১৮ ডিসেম্বর সিইসি চট্টগ্রাম-রাঙামাটিতে এবং ২২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে যান। সেখানে তিনি শীর্ষ বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। চট্টগ্রাম সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। এর বাইরে কমিশনার রফিকুল ইসলাম ১৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে এবং ২১ ডিসেম্বর রাজশাহীতে নারীদের ভোটাধিকার বিষয়ক দুটি কর্মশালায় অংশ নেন। কবিতা খানম ২২ ডিসেম্বর যশোরে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণ প্রতি তাঁদের প্রত্যেকের সম্মানী ছিল পাঁচ হাজার টাকা।
তবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মহাহিসাব নিরীক্ষক এম হাফিজ উদ্দীন খান প্রথম আলোকে বলেন, এখানে প্রশিক্ষণের নামে লুটপাট হয়েছে। ‘বিশেষ বক্তা’র নামে পুরো কমিশন ও সচিব যে টাকা নিয়েছেন তার পুরোটাই বেআইনি। কারণ, প্রশিক্ষণের অর্থ হলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে খাতায় সই করতে হবে। টাকা নেওয়ার সময়ও সই করতে হবে। তাঁরা সেটা করেছিলেন কি না, তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
ইসির হিসাব বলছে, সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে বরাদ্দ ছিল ৪৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এই অর্থ থেকে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা ভাগ করে নিয়েছেন নয় জন ‘বিশেষ বক্তা’। এই হিসাবে প্রতিজনের ভাগে পড়ে ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ৫২০টি প্রশিক্ষণের প্রতিটিতে ৪ জন করে ‘বিশেষ বক্তা’ দেখানো হয়েছে। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার ও চার কর্মকর্তা এভাবে দেশজুড়ে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ালে সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের বাকি কাজ বন্ধ রাখতে হতো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের মতো সাংবিধানিক পদের পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা না দিয়ে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের সঙ্গে আছেন ইসির সচিবসহ পদস্থ কর্মকর্তারা। আর এই অর্থের পরিমাণ একেবারে কম নয়, দুই কোটি টাকার বেশি।
বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এরপরে উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণ উপলক্ষে শুধু ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বক্তৃতা দিয়ে তাঁরা এই অর্থ নিয়েছেন। আর এর বাইরে ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন সচিব (বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব) একাই নিয়েছেন ৪৭ লাখ টাকা। তিনি ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবেও টাকা নিয়েছেন। তবে তা কত জানা যায়নি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন ৬১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। আর উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার নামে যাঁরা টাকা নিয়েছেন তাঁরা হলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা; চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও কবিতা খানম; সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ; অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান এবং দুই যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম ও কামরুল হাসান। উপজেলা নির্বাচনে ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেব এর সঙ্গে আরও চারজন যুগ্মসচিব যুক্ত হয়েছেন। এদিকে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে একটি প্রশিক্ষণ থেকে ‘কোর্স পরিচালক’ হিসেবে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক নিয়েছেন ১৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ ‘বিশেষ বক্তা’, ‘কোর্স উপদেষ্টা’ ও ‘কোর্স পরিচালক’ হিসেবে তাঁদের পকেটে গেছে দুই কোটি টাকার বেশি।
এভাবে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিইসি ও চার কমিশনারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি।
বিগত সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ বক্তা’র একটি প্যানেল গঠন করা হয়। এতে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের উচ্চপদস্থ ১৩ কর্মকর্তা। আর ‘কোর্স উপদেষ্টা’ নামে আরেকটি পদ সৃষ্টি করে তাতে পদায়ন করা হয় সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে।
ইসি সচিবালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় নয়জন ‘বিশেষ বক্তা’ ১৮ দিনে (৭ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮) জেলা ও উপজেলার ৫২০ জায়গায় বক্তৃতা দিয়েছেন। প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চারজন ‘বিশেষ বক্তা’র উপস্থিত থাকার কথা। ফলে সাধারণ পাটিগণিতের হিসাবে প্রত্যেক ‘বিশেষ বক্তা’কে দিনে কমপক্ষে ১৪টি স্থানে বক্তৃতা দিতে হয়েছে। বাস্তবে যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ থেকে বোঝা যায়, বক্তৃতাস্থলে উপস্থিত না থেকেই তাঁরা টাকা নিয়েছেন। এভাবে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় যাঁরা অর্থ নিয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ সম্মানী ভাতা ফেরত পাঠাতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
ইসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের এভাবে অর্থ নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসির ইতিহাসে এমন ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণ হয়নি। আমাদের সময়ে সিইসি, আমি ও অন্য কমিশনাররা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণে বক্তৃতা দিয়েছি। কিন্তু কোনো ভাতা নিইনি। এমনকি সচিবও বক্তৃতা দিয়ে ভাতা নিতেন না। সে রকম রেওয়াজও ছিল। এবার যা ঘটেছে সেটা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ছাড়া আর কিছুই নয়। এ জন্য অবশ্যই জড়িতদের দায় নিতে হবে।’
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য অতীতে ‘বিশেষ বক্তা’ বা ‘কোর্স উপদেষ্টা’ বলে কিছু ছিল না। গত নির্বাচনের সময় এসব সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল অবৈধভাবে টাকা নেওয়ার জন্য।
এ বিষয়ে জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হলে নির্বাচন কমিশন থেকে কিছু তথ্য দেওয়া হয়। তবে ‘বিশেষ বক্তা’রা কে কত টাকা নিয়েছেন তার হিসাব দেয়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা এ তথ্য জানাননি।
ইসির নথিতে আছে, সিইসিসহ এই কর্মকর্তারা ১৮ দিনে ৫২০টি স্থানে বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু প্রথম আলো ছাড়াও জনকণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ ও ডেইলি স্টার ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৭ থেকে ২৪ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে সিইসি দুবার ঢাকার বাইরে যান। ১৮ ডিসেম্বর সিইসি চট্টগ্রাম-রাঙামাটিতে এবং ২২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে যান। সেখানে তিনি শীর্ষ বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। চট্টগ্রাম সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। এর বাইরে কমিশনার রফিকুল ইসলাম ১৫ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে এবং ২১ ডিসেম্বর রাজশাহীতে নারীদের ভোটাধিকার বিষয়ক দুটি কর্মশালায় অংশ নেন। কবিতা খানম ২২ ডিসেম্বর যশোরে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণ প্রতি তাঁদের প্রত্যেকের সম্মানী ছিল পাঁচ হাজার টাকা।
তবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মহাহিসাব নিরীক্ষক এম হাফিজ উদ্দীন খান প্রথম আলোকে বলেন, এখানে প্রশিক্ষণের নামে লুটপাট হয়েছে। ‘বিশেষ বক্তা’র নামে পুরো কমিশন ও সচিব যে টাকা নিয়েছেন তার পুরোটাই বেআইনি। কারণ, প্রশিক্ষণের অর্থ হলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে খাতায় সই করতে হবে। টাকা নেওয়ার সময়ও সই করতে হবে। তাঁরা সেটা করেছিলেন কি না, তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
ইসির হিসাব বলছে, সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে বরাদ্দ ছিল ৪৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এই অর্থ থেকে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা ভাগ করে নিয়েছেন নয় জন ‘বিশেষ বক্তা’। এই হিসাবে প্রতিজনের ভাগে পড়ে ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ৫২০টি প্রশিক্ষণের প্রতিটিতে ৪ জন করে ‘বিশেষ বক্তা’ দেখানো হয়েছে। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার ও চার কর্মকর্তা এভাবে দেশজুড়ে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ালে সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের বাকি কাজ বন্ধ রাখতে হতো।এভাবে প্রশিক্ষণে ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে ইসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা অর্থ গ্রহণ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক আহমেদ আতাউল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রশিক্ষণে বক্তৃতার বিনিময়ে টাকা নেওয়ার কথা থাকলে অবশ্যই প্রশিক্ষণস্থলে উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা দিয়ে টাকা নিতে হবে। উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে রেজিস্ট্রারে সই করতে হবে এবং ভাতা গ্রহণের সময়ও সই করতে হবে। ‘কোর্স উপদেষ্টা’ পদ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিষয়টি যতটা না আইনি, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন নৈতিকতার। নৈতিকভাবে এ ধরনের কাজ মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।
বক্তৃতার নামে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা যেভাবে
বিশেষ বক্তাদের বক্তৃতা বাবদ অর্থ মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঢাকায় এনে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয়। এই প্রশিক্ষণের ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে দেখানো হয় হেলালুদ্দীন আহমদকে। তিনি প্রতি প্রশিক্ষণ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ৫২০টি প্রশিক্ষণ থেকে ২৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। অথচ এই প্রশিক্ষণে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের যাতায়াত ভাতা হিসেবে মাত্র ৫০০ টাকা এবং পোলিং অফিসারদের ৪০০ টাকা করে দেওয়া হয়।
২০০৭–০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ইসির সচিব হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ সব সময় থাকে। তবে সেই প্রশিক্ষণ দিতেন জেলা ও উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা। ঢাকা থেকে কমিশনার বা সচিবেরা যেতেন না। কোর্স উপদেষ্টা নামেও কোনো পদ ছিল না। অবশ্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কিছু প্রশিক্ষণ ঢাকায় হয়ে থাকে। সেগুলোতে প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁরা গেলেও সম্মানি ভাতা পেতেন।
সংসদ নির্বাচনের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয় জেলা পর্যায়ে। এ খাতে ‘বিশেষ বক্তা’রা ৬৪ জেলা থেকে ৫ হাজার টাকা করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন। এখানেও ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে হেলালুদ্দীন একাই নেন ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
উপজেলা নির্বাচনেও একই মডেল
নির্বাচন প্রশিক্ষণ–সংক্রান্ত ৪৩১টি উপজেলার হিসাবে দেখা যায়, সেখানে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারের সংখ্যা ছিল মোট ৬ লাখ ২০ হাজার ৯২৩ জন। এই প্রশিক্ষণে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ভাতা দেওয়া হয়েছে পাঁচ শ টাকা করে এবং পোলিং অফিসারদের চার শ টাকা করে। প্রশিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা করে। সারা দেশে ৪৩১টি উপজেলায় ২ দিনে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু মাঠ পর্যায়ে অনুপস্থিত থেকেও ‘বিশেষ বক্তা’রা এসব প্রশিক্ষণ থেকে উপজেলা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ৪৩ লাখ ১০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা নিয়েছেন। ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে ইসি সচিব নিয়েছেন প্রতি উপজেলা থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ২১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। আর কোর্স পরিচালক হিসেবে ইটিআইয়ের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক নিয়েছেন প্রতি উপজেলা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা করে মোট ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা।ভিএমে ভোটগ্রহণের জন্য শুরুতে নির্ধারণ করা হয় ৪৬টি উপজেলা। এসব উপজেলার প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের ইভিএম–সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে ব্যয় হয় ৭ কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এই খাতে ‘বিশেষ বক্তা’রা প্রতি উপজেলা থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট চার লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কোর্স উপদেষ্টা নেন পাঁচ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোর্স পরিচালক নেন সাড়ে চার হাজার টাকা করে ২ লাখ ৭ হাজার টাকা। তবে শেষ পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল মাত্র ১০ উপজেলায়। বাকি উপজেলাগুলোতে দেওয়া প্রশিক্ষণ কোনো কাজে আসেনি।
১০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণে ইভিএমের পরীক্ষামূলক ব্যবহার–সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে একই কায়দায় ভাতা নেন সিইসি, চার কমিশনার ও সচিব।
১০টি উপজেলার ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাঁচ দিনের এই প্রশিক্ষণে ব্যয় হয় ২ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা। এখান থেকে কোর্স উপদেষ্টা নেন উপজেলা প্রতি সাড়ে সাত হাজার টাকা করে মোট ৭৫ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে কোর্স উপদেষ্টা ছিলেন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। জানা যায়, এর কয়েকটি প্রশিক্ষণে এই কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। এর প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ইসি সচিবও সমান হারে ৭৫ হাজার টাকা নেন।
পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের জন্য মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণে ব্যয় হয় ২ কোটি ৬৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ খাতে বিশেষ বক্তারা ৬৪ জেলা থেকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভাতা নেন। কোর্স উপদেষ্টা নেন পাঁচ হাজার টাকা করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর কোর্স পরিচালক নেন ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
উপজেলা নেই, তাই ব্যাচ
সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের কিছু প্রশিক্ষণ ঢাকার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রশিক্ষণে উপজেলা প্রতি ভাতা নির্ধারণের সুযোগ না থাকায় ব্যাচ করে ভাতা ধরা হয়। সংসদ নির্বাচনে ইসি সচিবালয় ও এর মাঠ কর্মকর্তাদের ইভিএম–সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ব্যয় হয়েছে ৪৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ২৪টি ব্যাচে এই প্রশিক্ষণ হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাচে দুজন বিশেষ বক্তার ভাতা ছিল ১০ হাজার টাকা করে। এই হিসাবে ২৪টি ব্যাচ থেকে তাঁরা নিয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বক্তৃতা না দিয়েই কোর্স উপদেষ্টা প্রতি ব্যাচ থেকে তিন হাজার টাকা করে মোট ৭২ হাজার টাকা নিয়েছেন।
একই নির্বাচনে তিনটি ব্যাচে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজার ১০০ টাকা। এই খাত থেকে ৬ জন বিশেষ বক্তা প্রতি ব্যাচ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে মোট ৯০ হাজার টাকা সম্মানী নেন। কোর্স উপদেষ্টা নেন ৭ হাজার ৫০০ করে।
এর বাইরে সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ, ইলেকক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ, অনলাইনে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ও অফিস সহাকারীদের প্রশিক্ষণ এবং ইসির কর্মকর্তা প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ থেকে বিশেষ বক্তা, কোর্স উপদেষ্টা ও কোর্স পরিচালক সম্মানি ভাতা নেন। এ ক্ষেত্রে বিশেষ বক্তাদের নেওয়া মোট টাকার অঙ্ক ১০ লাখ টাকার ওপরে। কোর্স উপদেষ্টার অঙ্কও ১০ লাখ টাকার ওপরে।
কর্মকর্তারা যা বললেন, যা বলেননি
এ বিষয়ে গত ২২ জুলাই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সিইসি কে এম নূরুল হুদার কাছে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। নূরুল হুদা বর্তমানে সরকারি খরচে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে আছেন।
কমিশনার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি। যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। কবিতা খানমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
ইসির তৎকালীন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অবশ্য বলেছেন, ‘নির্বাচনে ১১ লাখের বেশি কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাজেটও বড় ছিল। সেই বাজেট কমিশন অনুমোদন করেছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে আমি মনে করি না।’
প্রশিক্ষণের নামে অর্থ গ্রহণের বিষয়ে ইটিআইয়ের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য ইটিআই খসড়া বাজেট প্রস্তাব করেছে। সেই প্রস্তাব চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য কমিশন সভায় তুলেছে ইসি সচিবালয়। কমিশন সেটা অনুমোদন করেছে।
ইসির বর্তমান সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘কাজগুলো আগের সচিবের সময়ের। তাই এসব বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, নির্বাচন করা নির্বাচনের কমিশনের কাজ। কোথাও গিয়ে বক্তৃতা দিলেও সেটা কাজের অংশ। এ থেকে ভাতা নিতে হবে কেন? পুরো ব্যাপারটাই অন্যায়, অনৈতিক।