শিশু জন্মের পূর্বকালীন যে ক্লাস হয় আমি সেখানে যেতাম। আমি সাথে করে আমার শিশু জন্মের পর দুধ খাওয়ানোর সুবিধার জন্য যেসব বক্ষবন্ধনী পাওয়া যায় সেসব নিয়ে যেতাম।
আমি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য একদম তৈরি ছিলাম। কিন্তু আমার বাচ্চা জন্মানোর দুইদিন পরেও আমার বুকে দুধ আসতো খুব কম।
আমি ম্যাসাজ করা, চর্বিযুক্ত খাবার, অনেক করে গুরুর দুধ খেতে থাকলাম। কিন্তু তিন দিনের মাথায় আমার মিডওয়াইফ আমাকে হাসপাতালে যেতে বললো কারণ আমার বাচ্চাটাকে একেবারে খাওয়া পাচ্ছিল না।
যখন তারা একটা যন্ত্র দিয়ে দুধ বের করার চেষ্টা করলো তখন দুধের পরিবর্তে রক্ত বের হয়ে আসলো। সমস্যা কী? আমার শরীর কি মাতৃত্বের সাধারণ প্রক্রিয়াকে নিতে পারছে না?আমি মনে মনে চিন্তা করতে থাকলাম।
আমার লিকলিকে বাচ্চাটা ক্ষুধায় এত জোড়ে দুধ খাওয়ার চেষ্টা করছিল যে জায়গাটা ফেটে গেলে।আমি যদি আগে জানতাম যে বুকের দুধ খাওয়ানো স্বাভাবিক ভাবে নাও হতে পারে। এটা একটা প্রক্রিয়া যেটা চেষ্টা এবং ভুল হতে পারে।
আপনি ভালো করতে পারেন চর্চার মাধ্যমে। এবং সেজন্য নানা রকম কৌশল রয়েছে। কিন্তু এটা সবসময় যে সহজ হবে তেমন না। বরং কোন কোন সময় খুব কষ্টদায়ক হতে পারে।
একবার যখন আমার শরীর এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেল আমার বাচ্চা বুকের দুধ পাওয়া শুরু করলো। আমি নিজেকের আবিষ্কার করলাম শারীরিক তরল পদার্থে। আমার ঘুমানোর জন্য খুব কম সময় থাকতো। গোসল করা বা আয়নার দিকে তাকানোর সময় হত না।
বাইরে বের হতে ইচ্ছা করতো না। আমার প্রতিবেশীরা কি মনে করবে, আমার বন্ধুরা কি মনে করবে এসব কিছু ভাবতাম। আমার পছন্দের জায়গা হয়ে গেল যেখানে কেউ যায় না। কারণ আমি মানুষের সামনে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে অস্বস্তি হত। আমি রাত জেগে থাকতাম একদম একা।
মনে হত পৃথিবীর সবার চেয়ে আমি একা ,আলাদা। আমি শিশু জন্মের পর যে বিষণ্ণতায় ধরে সেটা আমাকে ধরে ফেলার উপক্রম হল এবং সেখানে সাহায্য করার কেউ ছিল না।
আমি যদি আগে জানতাম যে নিজের যত্ন নেয়া কতটা জরুরী। একজন স্বাস্থ্যবান, বিশ্রাম নেয়া মা একজন উদ্বিগ্ন এবং বিষণ্ণতায় ভর করা মায়ের চেয়ে অনেক উত্তম।
যখন আমার বাচ্চাকে প্রথম ফরমুলা খাবার দেয়া হল হাসপাতাল থেকে, তখন আমার বাচ্চা কয়েক ঘণ্টা ঘুমালো। তখন আমি মনে মনে বললাম যদি আমার কখনো বিশ্রাম নেয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে আমি তাকে ফরমুলা খাবার দেব।
কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি আমার মনে হল আমি ভুল করছি। ফরমুলা খাবার পর আমার বাচ্চা জিহ্বায় সাদা আস্তরণ পরতো এবং অদ্ভুত একটা গন্ধ হত।
আমার মনে হল আমি আমার বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর খাবার না দিয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার দিচ্ছি।
প্রতিবার আমার মনে হত আমি ভালোমত চেষ্টা করিনি। আমার আসলে বেশি ঘুমের দরকার নেই। আমি যদি জানতাম এই দোষী ভাবাটা যাবে না কখনো। কিন্তু এটাও অন্যায়।
প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব রুটিন তৈরি করে নেয় যে কোনটা তাদের জন্য ভালো হবে। মায়ের বুকের দুধ না কি অন্য কোন খাবার। আমি আমার স্থানীয় সুপারমার্কেটে এই সংক্রান্ত যাবতীয় সব জিনিস দেখতে পেলাম।
কিন্তু আমার জন্য সবচেয়ে কাজে দিল ব্রেস্টফিডিং ওয়ার্কশপে যাওয়া এবং যারা অভিজ্ঞ তাদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়া। ব্রেস্টফিডিং একটা চয়েস। আমি মনে করি এটাই একমাত্র পদ্ধতি হওয়া উচিত। কিন্তু যদি আপনি ব্যর্থ হন বা না চান , তার মানে এই না যে আপনি একজন খারাপ মা। সূত্র : বিবিসি বাংলা