নাটোর প্রতিনিধি
ডেঙ্গু নিয়ে যখন, সারা দেশে তোলপাড় তখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে নাটোর স্বাস্থ্য বিভাগ। নাটোর সদর হাসপাতাল সহ জেলার আরো ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই ডেঙ্গু রোগ সনাক্ত করার পরীক্ষা-নিরিক্ষার কোন ব্যবস্থা। ফলে কাজে আসছে না সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীর সেল। জেলা সিভিল সার্জন এতদিন নাকে তেল ঘুমিয়ে থাকলেও সাংবাদিকদের তৎপরতার কারণে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার উপাদন আনতে ঢাকায় পাঠাছেন এক প্রতিনিধিকে।
এদিকে, সরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকলেও শহরের শুধুমাত্র একটি ক্লিনিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে এ রোগের। আর ওই ক্লিনিকে চলতি মাসে ১৫ জনকে পরীক্ষা করে ৭জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করেছে বেসরকারী ওই ক্লিনিকটি। যার মধ্যে রবিবার পাওয়া গেছে দুজন রোগীকে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেক্সগু রোগীর সংখ্যা। রবিবার নাটোরের এক গণমাধ্যম কর্মী তার ছেলেকে ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে যায় নাটোর সদর হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই গণমাধ্যম কর্মীকে জানান, জেলার সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। এরপর ওই গণমাধ্যম কর্মীরা পাশাপাশি অন্য গণমাধ্যম কর্মীরাও খোঁজ নিতে থাকে।এক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটোর সদর হাসপাতাল সহ জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর, লালপুর, বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া এসব সরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু সেল গঠন করা হলেও পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় কাজে আসছে না। পাশাপাশি নাটোরের ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান নেই স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।
নাটোর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মলয় কুমার সরকার, সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা যাদের সন্দেহ করছি, বাহিরে ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত কোন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়নি। দুএকজন সিজিনাল জ্বর নিয়ে আসছে।
নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাহাবুবুর রহমান, আমরা ডেঙ্গুপ্রতিরোধে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি সেল গঠন করেছি। আমরা চিকিৎসার পাশাপাশি পরামর্শ প্রদান করছি। তবে ডেক্সগু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য কিছু উপাদান লাগে, যেগুলো আমাদের কাছে নেই।
এদিকে, নাটোর সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য সেল করা হলেও নেই ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা। শুধুমাত্র সদর হাসপাতাল না জেলার সরকারী আরো ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। ডেক্সগু রোগীর পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় কাজে আসছে না সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীর সেল।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর এখন সনাক্ত হয়নি। তবে আমরা যেটা জানতে পেরেছি একটি বেসরকারী ক্লিনিকে দুুজন সনাক্ত হয়েছে।
আমরা আজকেই একজনকে ঢাকা পাঠিয়ে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য যে উপাদনগুলো প্রয়োজন সেগুলো নিয়ে আসবো। দু’একদিনের মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারবে রোগীরা।এদিকে, সরকারী হাসপাতালে ডেক্সগু পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় নাটোর শহরের সততা ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে রোগী পাঠাচ্ছে চিকিৎসকরা। চলতি মাসে ওই ক্লিনিকে ১৫ জনকে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এরমধ্যে ৭ জন ডেক্সগু রোগী সনাক্ত হয়েছে। যাদের বেশির ভাগ রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের বেশির ভাগ রাজধানী থেকে আসা।
সততা ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টারের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আওয়াল রাজা বলেন, চলতি মাসে আমরা ১৫জনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছি। এখন পর্যন্ত ৭জনের শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগ সনাক্তের জন্য এনএস ওয়ান, আইজিজি এবং আইজিএম এই তিন পদ্ধতিতে সনাক্ত করা হচ্ছে। যার খরচ পড়ছে সবোর্চ্চ দুই হাজার থেকে ২হাজার ৪শ টাকা।
অপরদিকে, ডেঙ্গু সপ্তাহ উপলক্ষে ডেক্সগু প্রতিরোধে জনসাধারনের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা তৈরীর কাজ চলছে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে। প্রতিদিনই মশক নিধন অভিযান এবং সচেতনতা মুলক সভা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শাহরিয়াজ জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যাতে সরকারী হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকে, সেজন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হবে। পাশাপাশি সচেতন বাড়াতে হবে।