ইয়ানূর
রহমান : স্কুল ছাত্রী রোদেলা খাতুন উর্মি (৮)। কখানো ঢাকায় যায়নি।
শুক্রবার সে হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হয়। শনিবার চিকিৎসার জন্য তাকে আনা হয়
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে। চিকিৎসক তাকে দেখে
পরীক্ষা নিরীক্ষার পরামর্শ দেন।
রোববার পরীক্ষা রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক নিশ্চিত হন উর্মি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত । যে কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। উর্মি যশোর শহরের বেজপাড়া গয়ারামপুর রোডের গৌতম সরকারের মেয়ে। উর্মি নিজ শহরে মশার কামড়েই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে তার পিতা। কারণ গত কয়েকমাসে উর্মি শহরের বাইরে কোথাও বেড়াতে যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ঢাকা নয় যশোরেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকায় না গিয়েও উর্মির মতো আরো ৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হলেন যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে সোহেল (২৬), কাশিমপুর ইউনিয়নের উসমানপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (৫), সদরের ফতেপুর ইউনিয়নের ভায়না গ্রামের বাসিন্দা ইমান আলী গাজী ( ৬৭)। চৌগাছা পৌর এলাকার নিরিবিলি পাড়ার আব্দুল মোতালেব হোসেনের মেয়ে মোহনা (২১) ,মণিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী আকলিমা খাতুন (৩৫)।
যশোর জেলা সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৪৪ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, রাত ৮টা পর্যন্ত তার হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২২ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এরমধ্যে রোববার ভর্তি হয়েছেন ৫জন।
ইবনেসিনা হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, মোট ৫জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোববার ভর্তি হয়েছেন দুইজন। তারা হলেন, যশোর শহরের রেলগেটের সেলিম হোসেনের ছেলে তানভির ফয়সাল (২২) ও বাঘারপাড়া পৌর এলাকার আইয়ুর হোসেনের ছেলে শিমুল হোসেন (৩৩)।
চৌগাছা পৌর এলাকার নিরিবিলি পাড়ার আব্দুল মোতালেব জানান, তার মেয়ে মোহনা (২১) যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অনার্স সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষে লেখাপড়া করেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কলেজে যাতায়াত তার। কয়েক বছরের মধ্যে মোহনা ঢাকায় যায়নি। তিন দিন আগে নিজ বাড়িতেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষায় ডেঙ্গু জ্বর নিশ্চিত হওয়ার পর রোববার মোহনাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসমানপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, তার ছেলে আব্দুল্লাহ কখনো ঢাকায় যায়নি। নিজ বাড়িতে বসবাস করেও তার ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন ইমান আলী গাজী ও আকলিমা খাতুনের স্বজনেরা।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন হারুন অর রশিদ জানান, যশোরে মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোববার সন্ধ্যায় তারা জানতে পেরেছেন। এটা অবশ্যই যশোরবাসীর জন্য একটি দুঃসংবাদ। সম্মিলিতভাবে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ঢাকার মতো যশোরেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে যেতে পারে বলে তার ধারণা।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিষয়ে তিনি জানান, যেকোন সময় ঘুমাতে গেলে মশারী ব্যবহার, ঘরের আনাচে কানাচে অন্ধাকারাচ্ছন্ন জায়গায় মশা তাড়ানোর ওষুধ বা স্প্রে ব্যবহার, মশার কামড় থেকে দুরে থাকতে দিনের যে কোনো সময় ফুলহাতা জামা ও পায়জামা অথবা প্যান্ট পরিধান ও ফুলের টবে, এসি বা ফ্রিজের নিচে বা অন্য কোনো স্থানে পানি থাকলে পরিষ্কার করতে হবে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, ডেঙ্গু প্রতিকারের উপায় হলো স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ানো, মশারীর ভেতরে বিশ্রাম, জ্বরে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল, গিটের ব্যথায় গিটের উপরে ঠান্ডা পানির শেক ও হালকা ব্যয়াম করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই এসপিরিন বা নাসিড জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবেনা। পেঁপে পাতার জুস বানিয়ে নিয়মিত খেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক কর্মকর্তা।