মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ। উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হচ্ছিল। কিন্তু নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের গাড়ি না আসায় ফেরি ছাড়তে ৩ ঘণ্টা বিলম্ব হয়। ঘাটে ফেরি ছাড়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই প্রাণ হারান তিতাস।
বৃহস্পতিবার( ২৫ জুলাই) রাতে এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ১নং ফেরি ঘাটে।
নিহত তিতাসের স্বজনরা অভিযোগ করেন, ওই সময় আশপাশের লোকজনের অনুরোধের পরও কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া হয়নি। এমনকি প্রতিকার মেলেনি জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেও।
স্বজনেরা আরও জানান, তিতাস মারা যাওয়ায় আর ঢাকার দিকে না গিয়ে শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাড়ির দিকে অ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে দেয়। তিতাস নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্র। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় প্রথমে ভর্তি খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হচ্ছিলো। চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছাতে অর্ধ লক্ষ টাকায় ভাড়া করা হয় আইসিইউ সংযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স।
এরপর রাত ৮টার সময় ওই ফেরি ঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন কুমিল্লা নামের ফেরিটি ছাড়ার জন্য ঘাটেই ছিল। কিন্তু নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের ওই কর্মকর্তার গাড়ি না আসা পর্যন্ত ফেরি ছাড়তে রাজি হননি ঘাট কর্তৃপক্ষ। কারণ ওই কর্মকর্তার ভিআইপি গাড়ি যাবার খবর দিয়েছিলেন মাদারিপুরের জেলা প্রশাসক নিজে।
পরিস্থিতি খারাপ দেখে মুমুর্ষু তিতাসকে বাঁচাতে স্বজনরা ফোন করেন জরুরী নম্বর ৯৯৯-এ। সাহায্য চান ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরও। কিন্তু ঘাট কর্তৃপক্ষ কারোই অনুরোধই রাখেননি, অভিযোগ স্বজনদের।
প্রায় তিন ঘন্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগানো সাদা রংয়ের নোহা মাইক্রোবাসটি আসার পর ফেরি ছাড়ে। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মস্তিস্কের রক্ষরণে মাঝ নদীতে থাকা আম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় তিতাসের। অনেক চেষ্টা করেও সময়ের কাছে হেরে গেলেন এ্যাম্বুলেন্সে থাকা চিকিৎসক ও সহকারীরা।
এমন মৃত্যুর জন্য ওই সরকারি কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিসির ঘাট সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি জানান তিতাসের স্বজনরাসহ স্থানীয় জনগণ।
এ প্রসঙ্গে জানাতে চাইলে ঘাট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে যায়।