যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়াবহ মিথ্যাচার করে রীতিমতো আলোচনার ঝড় তুলেছেন প্রিয়া সাহা নামের এক বাংলাদেশী নারী নেত্রী।আর এ অভিযোগের বিষয়ে ইতিমেধ্যে বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তিনি কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া সবশেষ কোন কোন দেশে এবং কী কারণে গিয়েছেন- সেসব তথ্যও যাচাই করছে পুলিশ।
দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার নেপথ্যে দেশি-বিদেশি কারও ইন্ধন আছে কি-না, সেটিও পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রিয়া সাহা কেন এমন মিথ্যা তথ্য দিলেন, সেটি গভীরভাবে অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোথায় বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তারও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। এমন মিথ্যা তথ্য দেয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র আছে। সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা কি কারণে এবং কিভাবে জড়িত তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গেল ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানে ১৬ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়াও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।
তিনি ট্রাম্পকে বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। দেশটিতে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। অনুগ্রহ করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।
প্রিয়া বলেন, এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছেন। আমরা বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছেন, ভূমি দখল করে নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।
তার এমন বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সারাদেশে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, এ ধরনের অসত্য গুঞ্জন ছড়ানোর পেছনে নিশ্চয়ই কারণ আছে। তার একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেটা কী তাই দেখার বিষয়। আমরা তাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব। নিশ্চয়ই তিনি একটা উত্তর দেবেন। তা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল ওই সূত্র জানায়, প্রিয়ার বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার আগেই বাংলাদেশ সরকারের কানে পৌঁছেছে। কূটনীতিকভাবে বিষয়টি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। বিশেষত, শুক্রবার ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তৎপর হয় সব সংস্থা।
সূত্র জানায়, প্রিয়ার অভিযোগে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এতে দেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে তার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঢাকায় থাকা অবস্থায় তিনি কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওর কল ডিটেইলড রেকর্ড (সিডিআর) সংগ্রহ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগের কয়েক দিন কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সেই তথ্য সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, সাংগঠনিকভাবে তাকে এ ধরনের কোনো কথা বলতে বলা হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, শুক্রবার প্রিয়ার স্বামী ও পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। তাদের কাছে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। ওর পরিবারের অনেকেই ওর বক্তব্য মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেসব দেখে মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের সামনে বাংলাদেশকে ‘অনিরাপদ’ রাষ্ট্র প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হতে চেয়েছেন প্রিয়া।
তবে আন্তর্জাতিক কারও ইন্ধনে তিনি এ কাজ করেছেন কি-না, সেই সূত্রও খোঁজা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগে সাহা কোন কোন দেশে, কী উদ্দেশ্যে গিয়েছেন, কার কার সঙ্গে দেখা করেছেন- সেসব বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এদিকে, প্রিয়া সাহার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশীদের মধ্যেও রীতিমতো তোলপাড় ও সমালোচনার ঝড় বইছে। সেখানকার অধিকাংশ বাংলাদেশীদের বক্তব্য, এরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ষড়যন্ত্রকারী। প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেকে প্রিয়া সাহার অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন।