রাজশাহীর বাজারে মৌসুমের শেষের দিকে এসে রাজত্ব করছে ফজলি জাতের আম। তবে বাজারে স্বল্প পরিমাণে আছে আম্রপালি এবং ল্যাংড়া জাতের আম। ফজলির চেয়ে এর দাম অনেক বেশি। রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার,শিরোইল ঢাকা বাস স্ট্যান্ড এবং শালবাগান এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আষাঢ়ের বৃষ্টির কারণে আমের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কম। এই মূহুর্তে আমের দাম যতটা বাড়ার কথা ছিল তা বৃষ্টির জন্য বাড়েনি। মহানগরীর শিরোইল বাস স্ট্যান্ডের আম ব্যবসায়ীরা জানান,আমের রাজধানী রাজশাহীর বাগানগুলোতে এখন উন্নতজাতের আম তেমন একটা নেই। গাছে অল্প পরিমাণে আশ্বিনা জাতের আম আছে। এখন চাহিদার বেশিরভাগ আম আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। মহারাজ ফজলি ও সুরমা ফজলি জাতের আমই বেশি আছে। স্বল্প পরিমাণে আছে ল্যাংড়া এবং আম্রপালি। ল্যাংড়া এবং আম্রপালিগুলো রাজশাহীর বাগান থেকেই সংগ্রহ করা। কিন্তু ফজলি আনা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। নগরীর সাহেব বাজার এলাকার আম বিক্রেতা মনসুর আলী জানান, তিনি ফজলি জাতের আম বিক্রি করছেন এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই আমের দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম। বৃষ্টির কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় দাম কমেছে বলে জানান মনসুর আলী। শালবাগানের পাইকারী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের কাছে প্রচুর পরিমাণে ফজলি আম দেখা যায়। তিনি জানান, সুরমা ফজলি তিনি ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। আর মহারাজ ফজলি বিক্রি করছেন ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। তার আমের মান ভাল হওয়ায় দাম বেশি বলে জানান তিনি। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে আম বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ী সবুজ আলী। তার কাছে ল্যাংড়া এবং আম্রপালি আম দেখা যায়। সবুজ জানান, প্রতি মণ ল্যাংড়া আম তিনি সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। আর আম্রপালি বিক্রি করছেন ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে। এই আমেরও দাম গত সপ্তাহের তুলনায় একটু কমেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আমের মৌসুম ফুরিয়ে যাচ্ছে। বাজারে আমের পরিমাণও কমে আসছে। তাই দুই সপ্তাহ আগে থেকে আমের দাম বাড়তে শুরু করে। কিন্তু এখন বর্ষার বৃষ্টির কারণে বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। সে জন্য আমের দাম থমকে গেছে। আর বাড়ছে না। তবে এখনই বৃষ্টি থেমে গেলে দাম আবার বাড়তে শুরু করবে বলেও জানান তারা। গাছ থেকে অপরিপক্ব আম যেন চাষিরা নামিয়ে বিক্রি করতে না পারেন সে জন্য গত কয়েক বছরের মতো এবারও আম নামানোর ক্ষেত্রে তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী, সবার আগে গুটি বা আঁটি আম নামতে শুরু করে গত ১৫ মে থেকে। সেদিন থেকেই শুরু হয় আমের মৌসুম। এরপর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর ২৮ মে লক্ষ্মণভোগ ২৬ মে, এবং ল্যাংড়া ও আম্রপালি ৬ জুন থেকে নামানো শুরু হয়। এর ১০ দিন পর ১৬ জুন থেকে ফজলি জাতের আম নামাতে শুরু করেন চাষিরা। আগামী ১৭ জুলাই থেকে আশ্বিনা আম নামাতে পারবেন চাষিরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, রাজশাহীতে এ বছর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। ঝড়-ঝাপ্টা স্বত্বেও এসব বাগানে এবার আমের উৎপাদন ভাল হয়েছে। এ বছর চাষি এবং ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে লাভবান হচ্ছেন বলেই জানান তিনি।