হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় আস্থা বাড়ছে রোগীদের


মো. মনিরুজ্জামান ফারুক : অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি দিন দিন আস্থা বাড়ছে রোগীদের। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা ব্যয় কম হওয়া এবং ওষুধের কোন পার্শ¦প্রতিক্রিয়া না থাকায় পুরাতন, জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময়ে রীতিমতো মানুষ এখন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের শরনাপন্ন হচ্ছেন।

বিশেষ করে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা হোমিও চিকিৎসার প্রতি ঝুঁকছেন বেশি। টিউমার, বাতব্যাথা, জন্ডিস, চর্মরোগ, হার্নিয়া, শ্বাসকষ্ট, মেয়েদের মাসিক সমস্যা ও যৌন সমস্যায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ভাল উপকার পাওয়া যায়। তাই হোমিও চিকিৎসকের নিকট এসব রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বেশ লক্ষ্য করা যায়।


জানা গেছে, এক সময় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিকে আজগুবি আর হাতুরে চিকিৎসা হিসেবে গণ্য করা হতো। পরবর্তীতে কঠোর বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে যে, এই কতিপয় ফলাফলের পিছনে ছিল ক্রটিপূর্ণ গবেষণা পদ্ধতি ও কিছু গবেষকের পক্ষপাতদুষ্ট ফলাফল উপস্থাপন।

একটি বেসরকারী গবেষনার তথ্য মতে, দেশের প্রায় ২৮ ভাগ মানুষ এখন হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ।

সরকার হোমিও চিকিৎসা সেবা বিকাশের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ৯০ জন হোমিও চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে ওষুধ।


পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় , হোমিও চিকিৎসা নিতে দীর্ঘ লাইন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোগীরা । জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন তারা। রোগীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিতে আসা পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার বাড়ইকোলা গ্রামের মৃত ইমান আলীর পুত্র বাবলু (৩২) জানান, “দীর্ঘ দিন আমি পুরাতন আমাশয় ভুগছি। গত দেড় মাস ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে হোওিপ্যাথি চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ।”

জেলার চাটমোহর উপজেলার পাচুরিয়া গ্রামের ছানোয়ার হোসেন জানান, “তার জমজ দুই সন্তান মুজাহিদ ও মোস্তাক । বয়স সাড়ে তিন বছর । দু’জনই হার্নিয়ায় আক্রান্ত। ২ মাস হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে মুজাহিদ আরোগ্য লাভ করেছে। ”এখন তিনি মোস্তাকের চিকিৎসা করাতে এসেছেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাকারিয়া খান মানিক বলেন, “হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কোন পার্শ¦ প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। চিকিৎসা ব্যয়ও খুব কম। স্বল্প আয়ের মানুষেরা সহজেই এ চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন।”

তিনি আরও বলেন, “এ চিকিৎসা পদ্ধতির সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে অনন্ত প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে একজন করে হোমিও্যাাথিক মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।”

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ কুমার দে বলেন, “ এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০/৬০ জন রোগী হয়। একজন চিকিৎসক আর একজন সহকারি মিলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পরে। তাই একজন চিকিৎসকের সাথে দুই জন করে সহকারি প্রয়োজন।”

নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাবেরা সুলতানা পপি বলেন, “ দিন দিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে চললেও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকায় রোগীর চাহিদা মতো ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না।” তিনি সরকারি হাসপাতালগুলোতে হোমিও ওষুধের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।


অভিজ্ঞ মহল মনে করেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের যথাযথ মূল্যায়ন করলে দেশের স্বাস্থ্য সেবায় নতুন দিগন্তের সুচনা হতে পারে।