জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানামুখী সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। ৩ লক্ষাধিক মানুষের জন্য সরকারী একমাত্র এই হাসপাতালে জনসাধারন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। এখানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ডাক্তার সংকট। পরীক্ষা নীরিক্ষার যন্ত্রপাতি সংকটতো আছেই। সবমিলে সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে বারবার আবেদন করা হলেও সংকট সমাধানে কতৃপক্ষ উদ্যোগ নেননি। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি সংসদ অধিবেশনে উল্থাপন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করলেও কাজ হয়নি।
জানা যায়, ৩১ শয্যার এ হাসপাতালটিকে ইতিপূর্বে ৫০ শয্যা ঘোষনা করা হয়েছে। ৫০ শয্যার ভিত্তিতে রোগী ভর্তি এবং ওষুধ পথ্য দেয়া হলেও জনবল কাঠামো রয়েছে ৩১ শয্যার। সেখানেও শুন্যতা আর শুন্যতা। ১০ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎিসক/সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে ২১ টি, যার মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। অ্যানেসথেসিয়া প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ১জন ডাক্তার দিয়ে গাইনী বিভাগের সিজারিয়ান অপারেশন ইতিপূর্বে চালু রাখা গেলেও অ্যানেসথেসিষ্টকে অন্যত্র বদলী করায় ০২.০১.১৮ ইং থেকে প্রায় ১৯ মাস ধরে এ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। ফলে গর্ভবতী মা’ দের বিভিন্ন ক্লিনিকে দৌড়াতে গিয়ে হয়রানী পেরেশানী সহ সীমাহীন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। অথচ জুনিয়র গাইনী কনসালটেন্ট পদে একজন সিনিয়র চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও অ্যানেসথেসিষ্ট এর অভাবে এ বিভাগের সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ফলে দিনের পর দিন অব্যবহৃত থাকায় ওটি’র মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডেন্টাল বিভাগে চিকিৎসক থাকলেও ডেন্টাল চেয়ারটি ২০০৭ সালে অকেজো ঘোষিত হওয়ায় এ বিভাগের কার্যক্রম ১২ বছর ধরে বন্ধ প্রায়।
এদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিসিন, সার্জারী, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, অ্যানেসথেসিয়া, ইউনানী ও শিশু বিভাগে কোন চিকিৎক নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্যতম পদ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদে একজন চিকিৎক কয়েকদিন আগে ২ বছরের প্রশিক্ষনে যোগদান করায় আরএমও পদটিও শুন্য রয়েছে। হাসপাতালের স্যানিটারী ইন্সপ্ক্টেরের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শুন্য। এ পদের ব্যাক্তি সুবিধামত নিজের এলাকায় ডেপুটেশনে রয়েছেন বছরের পর বছর ধরে। ষ্টোর কিপারের পদটিও শুন্য দীর্ঘদিন ধরে। স্যানিটেশন এবং ষ্টোরের দায়িত্ব নিজ কাজের পাশাপাশি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারী বকুল আলম। জনগুরুত্বপূর্ন ২ টি সেক্টরের দায়িত্ব একা পালন করতে গিয়ে তিনি হাপিয়ে উঠেছেন। এ বিভাগের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স সাবেরা খাতুন নিজের সুবিধামত ঠাকুরগাঁয়ে ডেপুটেশনে রয়েছেন। ফার্মাস্স্টি এর ৪টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ২জন।
হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি ২০০৯ ইং সালে অকেজো ঘোষিত হলেও অদ্যাাবধি এখানে নতুন মেশিন সরবারাহ করা হয়নি ফলে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে এক্সরে বিভাগ বন্ধ হয়ে আছে। বাইরে থেকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করতে গিয়ে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন ভূক্তভোগীরা। উপজেলা শহরে ৩ টি ক্লিনিক ও ৯/১০ টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থাকলেও আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং অ্যনেসথেসিষ্ট না থাকায় তারাও ঠাকুরগাঁও দিনাজপুর থেকে ডাক্তার নিয়ে আসতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। বাহির থেকে ডাক্তার নিয়ে আসায় তাদের পীরক্ষা নীরিক্ষার ব্যায় দ্বিগুন বেড়ে যাচ্ছে, যা জনগনের কাধে যাচ্ছে।
হাসপাতালের সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বারবার সিদ্ধান্ত গৃহিত হলেও সংকট সমাধানে কতৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করছেননা। কমিটির সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব আখতারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে গেল জুন/১৮ মাসের সভায়ও সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে এবং রেজুলেশনের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে, কেন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা তা তার জানা নেই। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতাদানকালে এক দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা জাহিদুর রহমান জাহিদ হাসপাতালের সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন এবং যতদ্রুত সম্ভব পদগুলো পূরন সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের দাবী জানান। জেলা/উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের ৭ম গ্রেড পর্যন্ত পদায়ন/বদলী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের অধিনে থাকলেও কেন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শুন্য পদ ও যন্ত্রপাতিগুলো সরবারাহ করা হচ্ছেনা জানতে চাওয়া হলে রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালিদ বলেন, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে, খুব শিগগীরই হয়ত সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হবে।