নেত্রকোনার কলমাকান্দায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী সংরক্ষণ বাঁধের নির্মাণ কাজে অনিয়মের ফলে বাঁধ ধসে পড়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধ না হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত উপজেলার রংছাতী ইউনিয়নের চিকুনটুপ গ্রামের শতাধিক পরিবারের বসতঘর ও জমি মহাদেও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর পাহাড়ি ঢলের আকস্মিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে উপজেলার চিকুনটুপ এলাকায় মহাদেও নদীর পাড় রক্ষা করার জন্য নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ২৮০ মিটার বাঁধ নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে। পাউবোর ঠিকাদার ফজলুল হক এ নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পান। পরে ওই নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রাক্কলন অনুযায়ী কোনো কাজ না করে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করেন। আর এ নির্মাণ কাজ স্থানীয় বাসিন্দাদের কোন উপকারে আসেনি। ফলে নতুন করে এ বছরও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যাতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বরুয়াকোনা বাজার, বিওপি ক্যাম্প এবং চিকুনটুপ গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের বসতঘর ও জমিজমা।
পাউবোর ঠিকাদার ফজলুল হক জানান, ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনি ২৮০ মিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ প্রাক্কলন অনুযায়ী সম্পন্ন করেছেন। ওই নির্মাণ কাজে তিনি কোনো অনিয়ম করেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আতাউল হক গনি বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করেছে। তাই এ কাজ স্থানীয় লোকজনের কোনো উপকারে আসেনি। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীভাঙনে নতুন করে আরও ৩ শতাধিক পরিবারের বসত ঘর ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চিকুনটুপ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, বাঁধ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নির্মাণ কাজে কোনো তদারকি করেননি। তাই নি¤œমানের কাজ করায় দু’মাসের মধ্যেই মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধ ধসে পড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মজনু মিয়া বলেন, অত্যন্ত নি¤œমানের কাজ হওয়ায় সুফল পায়নি এলাকার মানুষ। তবে লাভবান হয়েছেন ঠিকাদার ও সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অসাধু কিছু কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে রংছাতি ইউপি চেয়ারম্যান তাহেরা খাতুন বলেন, মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাহাড়ি ঢল থেকে বরুয়াকোনা বাজার, বিজিবি বিওপি ক্যাম্প, চিকনটুপ গ্রামের ৩’শতাধিক পরিবারকে রক্ষা করার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ করার দাবি জানিয়ে তদন্তপূর্বক ঠিকাদার ও সংশ্নিষ্ট তদারকি কর্মকতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ নিয়ে আমার এসএও’র (তদারককারী কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা বলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলীর কথা মতো উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নেত্রকোনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে সদ্য যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি এখন কিছুই বলতে বা তথ্য দিতে পারছি না। পরে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধে নিম্নমানের কাজের ব্যাপারে স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগ পেয়ে এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে ওই বাঁধটির নির্মাণ কাজ কোন দপ্তর করেছে আমার কার্যালয়ে এর কোনো তথ্য নেই। সরেজমিন পর্যবেক্ষণে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে দায়সারাভাবে মহাদেও নদী সংরক্ষণ বাঁধে কাজ করার সত্যতা পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, ওই নদীর ভাঙন এলাকায় জরুরীভিত্তিতে একটি স্থায়ী গাইডওয়াল নির্মাণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।