সংবাদপত্র, মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার: উপদেষ্টা নাহিদ

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার মত প্রকাশ ও সমাবেশ করার স্বাধীনতার পাশাপাশি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। গণমাধ্যমের হস্তক্ষেপ না করাকে তিনি তার সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

উপদেষ্টা বলেন, তার মন্ত্রণালয় বা সরকারের ১০০ দিনে গণমাধ্যমের কার্যক্রমে কখনোই হস্তক্ষেপ করেনি। মিডিয়া এখন তার পেশাগত কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে।

নাহিদ আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছরের ইতিহাসে দেশের জনগণ ও গণমাধ্যম কখনো এমন স্বাধীনতা ভোগ করেছে কি না তা আমাদের জানা নেই।’

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা তুলে ধরে এর আগে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা ও রাজনৈতিক মতবিরোধ দমন করা হতো উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।’

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যেহেতু দেশে ১৬ বছর স্বৈরাচারী অবস্থা ছিল, সেই সময়ে দেশবাসীর কাছে অনেক কথা ও দাবি জমা ছিল। এখন তারা সেগুলো প্রকাশ করছে। আমরা তাদের জন্য সেই পথ তৈরি করার চেষ্টা করেছি যাতে করে তারা যা বলতে চায় তা বলতে পারে।’

সরকারের ওপর আস্থা রেখে জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়তো আমরা এখনই তাদের সব দাবি পূরণ করতে পারছি না, তবে আমরা প্রতিটি যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করছি।’

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় সরকারের প্রথম ১০০ দিনে অফিস সংস্কার, পরিবর্তন পরবর্তি কর্মকর্তাদের রদবদল ও পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যস্ত থেকেছে।

জুলাই বিপ্লবের দিকে ফিরে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকাশনা ও তথ্যচিত্র তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জুলাই বিদ্রোহের বিশাল প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।

নাহিদ বলেন, শহিদ ও আহত সাংবাদিকদের জন্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগী সংগঠন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

‘সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার মান উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করবে এবং আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।’

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়। আমরা আশা করছি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশের জনগণ বিচারের প্রমাণ পাবে।’

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ একশ দিনে সাংবাদিকতার উন্নয়ন, ফ্যাসিবাদের পতন, জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সমুন্নত রাখতে তথ্যচিত্র নির্মাণ ও সম্প্রচারে তথ্য মন্ত্রণালয় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।

মন্ত্রণালয় গত ১লা জুলাইয়ের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা পর্যালোচনার জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠনের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ সাংবাদিকদের তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে পাঠিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ইতোমধ্যে ৩৫০ সাংবাদিককে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে এবং সাংবাদিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।

এছাড়া মন্ত্রণালয় জাতীয় চলচ্চিত্র উপদেষ্টা কমিটি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২৩ প্রদানের জন্য জুরি বোর্ডসহ বিভিন্ন বোর্ড ও কমিটির জন্য যোগ্য প্রার্থী প্রস্তাব করার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে।

জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস), প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরসহ (ডিএফপি) মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে কিছু কর্মসূচি সম্পন্ন করেছে ও কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ‘আগামীর বাংলাদেশ,’ ‘ফ্যাসিবাদের ডায়েরি,’ ‘দমনের উপাখ্যান’ ও ‘শহিদ পরিবারের আর্তনাদ’ এবং ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়ন ও দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড এবং জুলাই বিপ্লব নিয়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠান ও তথ্যচিত্র সম্প্রচার করে।

দুর্নীতির বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার চেতনা জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে, গণযোগাযোগ বিভাগ মাইকিং, ৫২৭টি তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং ১১৯টি উঠান বৈঠক এবং ১৭৩টি সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজনের মতো বিস্তৃত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

গত ১০০ দিনে বাংলাদেশ বেতারের প্রধান অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে থাকে ফ্যাসিবাদ ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ওপর তথ্যচিত্র সম্প্রচার, বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার বিষয়ে আলোচনা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ওপর সঙ্গীতানুষ্ঠান, মানি লন্ডারিং, বাজার সিন্ডিকেট ও সংস্কারের ওপর জারি গান এবং বিপ্লব পরবর্তী সময়কালে তরুণদের কর্মকাণ্ডের ওপর অন্যান্য অনুষ্ঠান।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জুলাই বিদ্রোহে শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে ১৪১টি সংবাদ ও ফিচার গল্প প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী সরকারের দুর্নীতি, দমনপীড়ন, হত্যা ও মানবতার বিরোধী অপরাধের ১৪০টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

পিআইবি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা সম্পর্কিত একটি জার্নাল নিরীক্ষার দুটি সংস্করণ প্রকাশ করবে। এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, প্রধান উপদেষ্টা’র বক্তৃতা এবং মিডিয়া ও সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে এবং শহিদ ছাত্রদের ওপর ২০টি ফিচার স্টোরি, গ্রাফিতি অভ্যুত্থান ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ছাত্রদের ভূমিকা প্রকাশ করবে।

বাংলাদেশ সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘বৈষম্যমুক্ত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে বিসিটিআইয়ের কার্যক্রম’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।

গণমাধ্যমে বৈষম্য দূর করে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রেস কাউন্সিলকে আরও কার্যকর, গণমাধ্যম বান্ধব ও বৈষম্যমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গণমাধ্যম কর্মী ও অংশিজনদের সঙ্গে তিনটি মতবিনিময় সভা করেছে।

তাছাড়া দুর্নীতি, দমন, বলপূর্বক গুম, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, নির্বাচনী ব্যবস্থার ধ্বংস, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ ক্ষমতাচ্যুত সরকারের যাবতীয় অপকর্মের তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা বিভাগকে (ডিএফপি) নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।