ঈশ্বরদীতে কাঁচা বাজারের উত্তাপে পুড়ছে নিন্মবিত্ত ও শ্রমজীবি মানুষ

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
ঈশ্বরদীতে কাঁচা বাজারের উত্তাপে পুড়ছে নিন্মবিত্ত ও শ্রমজীবি মানুষ। বুধবার (২৩ অক্টোবর) উপজেলার বড় কাঁচা সবজির বাজার দাশুড়িয়ায় বাজারের ব্যাগে আধাসের আলু আর তিনটা বেগুন কিনে কাঁচা মরিচের কাছে ভিরতে পারেননি অটো রাইস মিলের শ্রমিক বাবর আলী (৪৫)।  নির্দ্বিধায় তিনি ব্যক্ত করলেন কষ্টের কথা। বাবর আলী জানান, বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে আমাদের মত লোকেদের আর কয়দিন বাদে তিনবেলার খাওয়া জুটবে কিনা ভাবছি। যা কামাই করি তাতে সংসারের চাল-আটা-তেল কিনতেই শেষ।

তিনি আরও বলেন, এখন মৌসুম না, তাই প্রতিদিন কাজ হয়না। সপ্তাহে যে কয়দিন কাজ হয় তাই দিয়ে কোন মতে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি। সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই ৫৫০ টাকা। কাঁচা বাজার করতে বেগুন, কয়টা পটল, করল্লা, কচু, আলু আর পেঁয়াজ কিনতে মজুরির অর্ধেকটাই শেষ হয়ে যায়। বন-বাদারের লতাপাতা ছাড়া আমাদের খেয়ে বাঁচার আর কোন উপায় নাই।

ঈশ্বরদী উপজেলার একাধিক সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ফুলকপি ৮০-১০০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা কেজি, বরবটি ৮০-৯০ টাকা, কচু ৬০-৭০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, ওল ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৬০ টাকা, আলু ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ১২০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা, আদা ২৬০ টাকা, এবং ঢেঁড়স ৬০ টাকা কেজি, কাঁচা কলার হালি ৩০-৪০ টাকা, পুঁই শাক আঁটি ২৫ টাকা, লাল ও সবুজ শাকের আটি ২০ টাকা ।

মাছের বাজারেও নেই কোন সুসংবাদ। এক কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ২২০ টাকা, সিলভারকাপ ১৮০-২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২৭০ টাকা, ছোট রুই ২৫০ টাকা। ছোট চিংড়ির কেজি হাজার টাকা, গুড়া মাছ ৬০০ থেকে শুরু।

ঈশ্বরদী পৌর কাঁচা বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ফরজ আলী বলেন, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারনে সবজির তে নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব কৃষকরা আগে ভ্যানে মাল আনত, তারা এখন ব্যাগে করে সাইকেলে মাল আনে। উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হওায়া দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে তিনি মন্তব্য করেন।

দাশুড়িয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর বলেন, বৃষ্টির কারনে বাজারে সবজির আমদানি একেবারেই কম। তাছাড়া অনেক কৃষকের তে পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমদানি কম থাকায় সবজির দাম বেড়েছে। আমরা যেহেতু কিনছি বেশীদামে কমদামে বেচি কেমনে ?

বড়ইচারা বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল আলিম বলেন, চারদিকের সব পানিতে ডুবে শেষ। এখন যা আছে তা দিয়েই কৃষক পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তারা বাজারে কোন মালই কমদামে বেচে না। তাই আমরাও কমদামে কিনতে এবং বেঁচতে পারিনা।

বাজার করতে আসা সিএনজি চালক পিন্টু বলেন, প্রতিদিনই সবজির দাম কিছু না কিছু বাড়ছেই। বাজারে কোন মনিটরিং নেই। বিক্রেতারা ইচ্ছেমাফিক দর হাঁকছে। এভাবে বাড়তে থাকলে সংসার চালাবো কি করে?

রূপপুরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, বছর জুড়েই উর্ধমূখীর কারণে গ্যারাকলে হাসফাস করছে মানুষ। এতে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের জীবনযাপনে কোন ব্যাত্যয় না ঘটলেও উচ্চ মূল্যের উত্তাপে পুড়ছে খেটে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষ।

বাজার মনিটরিং এর বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের পাবনার সহকারি পরিচালকের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।