১২ বছর আগে শিবির কর্মী নিহতের ঘটনায় সাবেক অর্থ মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ ৩৯ জনের নামে মামলা

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে শিবির কর্মী নিহতের ঘটনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী ও দিনাজপুর-৪ (খানসামা ও চিরিরবন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৯ জন নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়। সেইসাথে মামলায় ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী উল্লেখ করা হয়।

গত শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নিহত কিশোর মোজাহিদুল ইসলাম মুজাহিদ (১৪) এর বড় ভাই নাজমুজ শাহাদাত বিপ্লব বাদী হয়ে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

নিহত কিশোর মোজাহিদুল ইসলাম দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি সাঁকোরপাড় পণ্ডিতপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও জামায়াতে ইসলামী খানসামা উপজেলা শাখার সাবেক আমীর আতাউর রহমানের ছেলে।

এই মামলার অন্য আসামীরা হলেন সাবেক অর্থ মন্ত্রীর ভাই শামীম আলী,
খানসামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন, চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক, চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক মুকুল, সাবেক অর্থমন্ত্রীর এপিএস শাহ সালাউদ্দিন। এছাড়াও শাফিয়ার রহমান, রফিকুল ইসলাম মাষ্টার, আজিম উদ্দিন গোলাপ, নুর ইসলাম নুরু, গোলাম আজম পারভেজ, আবু হান্নান সাদেক ছোটন, আ: মজিদ, সুলতান আলমসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হিসেবে ৩৯ জনের নাম মামলায় উল্লেখ রয়েছে।

থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে হরতাল মিছিল কর্মসূচি ঘোষনা করে। আগের দিন সন্ধ্যায় হরতালের সমর্থনে চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর এলাকায় জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে তৎকালীন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয় ও লাঠিসোটা, ইটপাটকেল, দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ অতর্কিত হামলা চালায়। সেই ঘটনায় গুরুতর আহত হন মুজাহিদ। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাত ১২টায় তাঁর মৃত্যু হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে পরের দিন খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় রংপুর কোতয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। মামলা নং-৪৫৯/১২।

এই মামলার বাদী ও নিহত শিবির কর্মীর বড় ভাই নাজমুজ শাহাদাত বিপ্লব জানান, তাঁর ছোট ভাই নিহত মোজাহিদুল ইসলাম শিবিরের কর্মী ছিলেন। তাদের বাবা উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর এবং তিনি নিজেও ইছামতি ডিগ্রী কলেজ শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি। এই হত্যার
ঘটনার পর থেকে মামলা না করা এবং প্রাণেনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন আসামীরা। ভাই হত্যার ন্যায়বিচার না পেয়ে উল্টো তার নামে বিভিন্ন সময়ে ৩২টি এবং তার বাবার নামেও ২৮টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি এ ঘটনার ন্যায়বিচার আশা করেছেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত খান বলেন, ২০১২ সালে এক কিশোর নিহতের ঘটনায় ১৪৩, ৩০২, ৫০৬, ১১৪/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।