ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
দরজায় কড়া নাড়ছে বাংগালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই মহোৎসবকে ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্ততি। এরই মধ্যে অধিকাংশ মন্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমার নির্মাণকাজ। মৃৎশিল্পীরা এখন রঙ-তুলির আঁচড়ে সাজ-সজ্জা ও প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধণে ব্যস্ত সময় কাটছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আনন্দ উপভোগ করে। এবারে ঈশ্বরদীর মোট ৩২টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এবারে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল মন্দির সিসিটিভি’র আওতায় আনা হয়েছে।
এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্গাপূজা যেন নির্বিঘ্নে হয় তা নিশ্চিত করতে চাইছে অন্তর্র্বতী সরকার। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঈশ্বরদীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একগুচ্ছ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গ্রাম প্রতিরা বাহিনীর সদস্যদের টহল শুরু হয়েছে। যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ এবং রাজনৈতিক নেতারা জানিয়েছেন।
প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ ছাড়াও বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ হতে মন্দির কমিটির সাথে একাধিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠানে তারা কঠোরভাবে দেখভাল করবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন। পূজামন্ডপে সব সময়ে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে, মন্ডপের নিরাপত্তার জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিএনপি এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের নিয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা সুবির কুমার দাশ জানান, ৩২টি মন্ডপের মধ্যে ৭ টিতে সিসিটিভি ক্যামেরা আগে থেকেই ছিল। ২৫টি পূজা মন্ডপে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে স্থায়ীভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং সরঞ্জামাদি ইতোমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি আর জানান, সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলা প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি মনিটরিং সেল থাকবে। পূজা মন্ডপে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করবে এই টিম।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, সকল পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরা করা হয়েছে। প্রত্যেক পূজা মন্ডপে নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশের মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক এ মন্ডপগুলোতে টহলরত থাকবে। এছাড়াও প্রশাসনের যৌথ নিরাপত্তা টিম সার্বক্ষনিক কাজ করবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপজেলা সভাপতি সুনিল কুমার চক্রবর্তি জানান, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পূজা অনুষ্ঠানে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতারা তৎপর রয়েছে। ইতোপূর্বে ঈশ্বরদীতে কোনদিনই পূজায় বা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বা কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি সকলের সহযোগিতায় এবারেও এখানে কিছু ঘটবে না।
সনাতন পঞ্জিকার ষষ্ঠী তিথিতে কল্পারম্ভ বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে দশমীর পূজা শেষে প্রতিমার দর্পণ বিজর্সনের মাধ্যমে শেষ হবে শারদীয় দূর্গোৎসব। পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ৮ অক্টোবর ষষ্ঠীতিথিতে রাত ১২টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দেবী দূর্গা প্রতিমা আসনে অধিষ্ঠিত হবেন। তিথি অনুযায়ী মহাষ্টমী ও মহানবমী এবং মহানবমী ও বিজয়া দশমী একই দিনে পড়েছে। বিজয়া দশমী পালিত হবে ১২ অক্টোবর শনিবার। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।