ফসলী মাঠের বুক জুড়ে ক্ষত চিহ্ন

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি

চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহরের ফসলী মাঠগুলোর বুক জুড়ে এখন ক্ষত চিহ্ন। চলনবিলের এ উপজেলার সামান্য কিছু অংশের পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় একটি স্লুইজগেটের মাধ্যমে। বৃহত অংশে বর্ষাকালে ফসলের মাঠগুলোতে পানির আসা যাওয়া প্রকৃতি নির্ভর। তাই প্রকৃতির খামখেয়ালী আচরণে প্রায় প্রতি বছরই বর্ষাকালীন বোনা আমন ও অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ এলাকার হাজার হাজার কৃষক পরিবাকে।

এক সময় এ এলাকার অন্যতম ফসল ছিল বোনা আমন ধান। আজলদীঘা, ধলাদিঘা, বাঁশিরাজসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করতেন এ এলাকার কৃষক। পানির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তো ধান গাছ। দশ-পনের ফিট পর্যন্ত লম্বা হতো। কৃষকেরা এখনো এ ধান চাষের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রকৃতির বৈরী আচরণ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আগাম বন্যার মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চাটমোহরে চলতি মৌসুমে ৮,৮৮০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন চাষ হয়েছিল। আগাম বন্যায় ৬০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট দেখানো হয়েছে।

চাটমোহরের হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া, ছাইকোলা (আংশিক)ও বিলচলন ইউনিয়নের (আংশিক) ফসলী মাঠ অপেক্ষাকৃত নিচু। গুমানী, বড়াল ও চিকনাই নদী হয়ে ফসলের মাঠগুলোতে প্রবেশ করতো বন্যার পানি। এর মধ্যে বড়াল এবং চিকনাই ইতিমধ্যেই প্রায় মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। বর্ষার শুরুর দিকে গুমানী নদী থেকে বিভিন্ন সংযোগ খাল হয়ে প্রায় ৩০ গ্রামের ফসলের মাঠে পানি প্রবেশ করে। পানি ব্যবস্থাপনা অনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় কোন কোন বছর আমন ধানের চারা বড় হতে না হতেই ফসলের মাঠে পানি প্রবেশ করায় ধানের কচি চারা পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আবার কোন কোন বছর বর্ষার শেষভাগে এসে অতি দ্রুত মাঠের পানি নিষ্কাশিত হওয়ায় বোনা আমন ধান শুকনোতে পরে যায়। তখন মারাত্মক ফলন বিপর্যয় ঘটে। এবার মওসুমের শুরুতেই বন্যার পানি দ্রুত বেগে মাঠে প্রবেশ করায় গুমানী নদী পাড়ের চরসেনগ্রাম, সেনগ্রাম, দড়িপাড়া, মির্জাপুর, করকোলা, চিনাভাতকুর, নিমাইচড়া, সিদ্ধিনগর, হান্ডিয়াল গৌড়নগর, বিন্যাাবাড়ি, বড়দানগর, লাঙ্গলমোড়া, চরনবীন, নবীন, স্থল, দরাপপুরসহ প্রায় ৩০ গ্রামের কৃষকের বোনা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অপরিণত পাট কাটতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক। এখন পানি কমায় এসব এলাকার ফসলের মাঠ জুড়ে কেবলই ক্ষত চিহ্ন।

চাটমোহর সদরের দক্ষিনাংশের পার্শ্বডাঙ্গা, গুনাইগাছা, ফৈলজানা, ডিবিগ্রাম, মূলগ্রাম, মথুরাপুর, হরিপুর (আংশিক) ইউনিয়নের ফসলের মাঠগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচু। এসব ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাঠে বন্যার পানি প্রবেশ করেনি। অথচ বোনা আমন ধানের জন্য পর্যাপ্ত পানি দরকার। পানির অভাবে এসব এলাকার বোনা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাট জাগ দেওয়ার পানিও পাচ্ছেন না কৃষক।

বরদানগর গ্রামের কৃষক রতন হোসেন জানান, আগাম বন্যায় প্রায় পুরো মাঠের আমন ধান ডুবে গিয়েছে। উঁচু জমির সামান্য কিছু ধান আগাম বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেলেও এখন পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ফলন বিপর্যয় ঘটবে। খরচের টাকাও উঠবে না।

মূলগ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, মূলগ্রাম ও তার আশ পাশ এলাকার বিলে বন্যার পানিই প্রবেশ করেনি। ফলে আমন ধানের ফলন বিপর্যয় হবে। এ এলাকার কৃষক পাট পঁচানোর মতো পানিও পাচ্ছে না।

“চলনবিল রক্ষায় আমরা” সংগঠনের সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা স্লুইজগেটের মাধ্যমে বড়বিল, বগাবিল, রহুলবিল, রুথনীডাঙ্গার বিল, রামের বিল, চিরইল বিলসহ অন্যান্য বিল হয়ে এসব এলাকার মাঠ গুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করে। স্লুইজ গেটটি নিয়ন্ত্রণ করা হয় ফরিদপুর থেকে। তাদের প্রয়োজন মতো পানি বিলে প্রবেশ করলেই তারা গেট আটকে দেন। ফলে এসব এলাকায় প্রয়োজনীয় পানি প্রবেশ করতে পারে না। এ এলাকার মাঠগুলো কোথাও পানিশূণ্য কোথাওবা জমে রয়েছে বৃষ্টির হাটু পানি। এ এলাকার অধিক সংখ্যক কৃষককে উপকৃত করতে ডেমরার স্লুইজ