অনাবিল ডেস্ক : তরকারি বা মাংস রান্নায় তেজপাতা না হলে চলেই না। বলা হয়, এর চমৎকার গন্ধ তরকারি, মাংস বা বিভিন্ন খাবারে আনে বাড়তি স্বাদ। এমনকি তেজপাতার চা আমাদের শরীরকে একটা ঝরঝরে অনুভূতি দেয়। তবে তেজপাতা কি কেবল সুগন্ধই আনে? খাদ্যগুণে কতটা সমৃদ্ধ এই পাতা?
তেজপাতা সুগন্ধি মসলা। কাঁচা পাতার রং সবুজ। শুকনো পাতার রং বাদামি।
মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এই তেজপাতায় ঔষধি গুণ রয়েছে। ভিটামিন ‘ই’ ও ‘সি’-সমৃদ্ধ এই
মসলায় রয়েছে ফলিক অ্যাসিড ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান।
১. হজমশক্তি বাড়ায়
মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র ব্যবস্থায় বেশ প্রভাব ফেলে তেজপাতা। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তেজপাতায় রয়েছে এমন জৈব যৌগ, যা পেটের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যায় তেজপাতা খুব কার্যকর। অনেক সময় শরীর জটিল প্রোটিন সহজে হজম করতে পারে না, তেজপাতা তা হজমে সাহায্য করে।
২. চুলের সমস্যা দূর করে
চুলে শ্যাম্পু করার পর তেজপাতার পানি ব্যবহার করুন। কয়েকটি তেজপাতা দিয়ে পানি চুলায় গরম করতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার পর এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলের খুশকি দূর হয়। একইসঙ্গে চুল পড়াও ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
৩. উকুন দূর করে
৫০ গ্রাম তেজপাতা এবং ৪০০ মি.লি. পানি একসাথে করে চুলায় গরম করতে হবে, যতক্ষণ না কমে ১০০ মি.লি. পানি হয়। তারপর ঠান্ডা করে মাথার তালুতে লাগাতে হবে। ৩-৪ ঘণ্টা রাখার পরে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও বলিরেখা দূর করতে তেজপাতার জল খুব উপকারী। ৫টি তেজপাতার সাথে ২ গ্লাস পানি গরম করে নিতে হবে। তারপর পানিটা একটি বড় পাত্রে নিয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে ভাপটা নিতে হবে। এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
তেজপাতার পানি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে; যা আমাদের শরীরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য করে। ভালো ফলাফলের জন্যে একটানা ৩০ দিন তেজপাতার পানি খেতে হবে। এর জন্য ১৫টি তেজপাতার সাথে ৩ গ্লাস পানি গরম করে ১ গ্লাস করতে হবে। তারপর ঠান্ডা করে খাবার গ্রহণের পূর্বে পান করতে হবে দিনে ২ বার করে।
৬. ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে
তেজপাতার তেল ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। শরীরের গিঁটে গিঁটে ব্যথা হলে তেজপাতার তেল দিয়ে মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় এবং ব্যথার উপশম হয়।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ক্যাফেয়িক এসিড, কুয়েরসেটিন, ইউগানল, ক্যাটেচিন রয়েছে তেজপাতায়। যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৮. কাশি দূর করে
২-৩টি তেজপাতা দিয়ে পানি গরম করে ১০ মিনিটের জন্যে রেখে ঠান্ডা করতে হবে। সেই পানিতে কাপড় ভিজিয়ে সেই কাপড় বুকের উপর রেখে ভাপ দিলে তা জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি দূর করতে সাহায্য করে।
৯. হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে
নিয়মিত তেজপাতা খাওয়া বা তেজপাতার পানি পান হার্টকে সুস্থ রাখে। এতে রয়েছে রুটিন, স্যালিসাইলেটস, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস; যা হার্টকে সবল রাখে। ৩ গ্রাম তেজপাতা, ৩-৪ মি.লি. গোলাপজল ও ৩০০ মি.লি. পানি গরম করে ৭৫ মি.লি. করতে হবে। এই মিশ্রণ পান করতে হবে নিয়মিত।
১০. অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করে
নিয়মিত তেজপাতা চিবিয়ে খেলে তা পিরিয়ডকে নিয়মিত ও স্বাভাবিক রাখে।
১১. দাঁত সাদা করে
দাঁতকে সাদা ও সুস্থ রাখতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। কফি, চা, তামাক, অ্যালকোহল- এসবের কারণে যদি দাঁত হলুদ হয়ে যায়, তাহলে শুকনো তেজপাতা ও শুকনো কমলার খোসা গুঁড়ো করে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে টুথপেস্ট হিসেবে ব্যবহার করবেন। এতে দাঁত সাদা ও ঝকঝকে হয়।
১২. কিডনি রোগ দূর করে
কিডনিতে ইনফেকশন বা পাথর হলেও তেজপাতা তা দূর করতে সাহায্য করে। ৫ গ্রাম তেজপাতা ও ২০০ মি.লি. পানি একসাথে গরম করে ৫০ মি.লি. হলে ঠান্ডা করে পান করুন।
১৩. অতিরিক্ত ওজন কমায়
৫ গ্রাম তেজপাতা, এক টুকরো আদা, ২০০ মি.লি. পানি ফুটিয়ে ১/৪ ভাগ করে এর সাথে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে দিনে দুইবার।
১৪. ডায়েরিয়া থামায়
১৫টি তেজপাতার সাথে ২ গ্লাস পানি গরম করতে হবে। তারপর এক চিমটি লবন যোগ করে ঠান্ডা করতে দিতে হবে। তারপর একবারে পান করতে হবে। এভাবে যতদিন না ডায়েরিয়া শেষ হয়, এই মিশ্রণ পান করতে হবে।
১৫. খনিজের বিপুল উৎস
তেজপাতায় রয়েছে ভিটামিন, কপার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ।