জসীমউদ্দীন ইতি
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোর জয়ন্ত কুমার সিংহের (১৫) মরদেহ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পরিবার। এদিকে পতাকা বৈঠকে জয়ন্তর মৃতদেহ ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
এ ঘটনায় মহাদেব কুমার সিংহ ও নিটালডোবা গ্রামের দরবার আলী নামে অপর এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। মহাদেব কুমার সিংহ নিহত জয়ন্তর বাবা। ঘটনার পর জয়ন্তর মরদেহ বিএসএফ নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে জয়ন্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন তার বাড়িতে ভিড় করছেন। প্রত্যেকের চোখেমুখে বেদনার ছাপ। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। এদিকে ছেলেকে হারিয়ে শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা জয়ন্তী রানী। স্বামীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর তাকে অধিক শোকে পাথর করে তুলেছে। এখন তার একটাই প্রত্যাশা ছেলের মৃতদেহ অন্তত ফিরে পাওয়া।
এর আগে, সোমবার দিবাগত রাতে জয়ন্ত উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের কান্তি ভিটা সীমান্ত এলাকায় মেইন পিলার ৩৯৩ নাম্বার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সমর কুমার চট্টোপাধ্যায় গণমাধ্যমে এ প্রসঙ্গে বলেন, ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের ডিঙ্গাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে জয়ন্ত ঘটনাস্থলে মারা যায়। বিএসএফের সদস্যরা তার লাশ নিয়ে যায়। এ সময় গুলিতে জয়ন্তের বাবা মহাদেব কুমার সিংহ ও দরবার আলীও আহত হন। পরে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসেন।
প্রতিবেশী প্রশান্ত কুমার বলেন, এই সীমান্তেই আমার জন্ম। এখন ৭৫ বছর বয়স হয়েছে। বিএসএফের গুলিতে চোখের সামনে অনেক বন্ধু, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যু দেখেছি। কোনো কারণ ছাড়াই তারা আমাদের মেরে ফেলে।
রাজা সরকার নামে একজন বলেন, আমাদের অনেকে জমিজমা সীমান্তলাগোয়া, অনেকে গরু, ছাগল লালন-পালন করি। অনেক সময় আমাদের সীমান্তে যেতেই হয়। কিন্তু এখানে তারা আমাদের দেখলেই মেরে ফেলবে- এটা তো ঠিক না। আমরা সীমান্ত সুরক্ষা চাই। এভাবে নির্বিচারে হত্যা বন্ধ করতে হবে।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজির আহমদ বলেন, ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছে বিজিবি। দফায় দফায় তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার পরে নিহতের মরদেহ বিএসএফ ফেরত দেবে।